কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বড় উদ্বেগ ভুয়া তথ্য ও প্রতারণা

মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের তৈরি চ্যাটজিপিটি গত বছরের নভেম্বরে উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে বিশ্বজুড়ে এ প্রযুক্তির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) জনপ্রিয়তার মধ্যেও এর মাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়ানো ও প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাই দ্রুত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিস্তার রোধে অনেক দেশ এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আনার কথা ভাবছে।

ওপেনআইয়ে বিনিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড স্মিথও সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঘিরে তাঁর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তাঁর মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বড় উদ্বেগের জায়গা হচ্ছে ‘ডিপ ফেক’ বিষয়টি। কারণ, এর মাধ্যমে বাস্তবের মতো করেই ভুয়া আধেয় বা কনটেন্ট তৈরি করা যায়। এ ধরনের কনটেন্ট শনাক্ত করা বেশ কঠিন।

বর্তমান বিশ্বে বড় দুশ্চিন্তার নাম ডিপ ফেক। এতে কম্পিউটারে কারসাজি করা ছবিতে এক ব্যক্তির সাদৃশ্য অন্যের ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপনের জন্য ব্যবহৃত হয়। আশঙ্কার কথা, ছবি বা ভিডিওকে বিকৃত ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নিখুঁতভাবে তৈরি করে হুবহু আসলের মতো বলে প্রচার করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রযুক্তির জগতে ডিপ ফেক নামে ব্যাপক পরিচিত হয়ে উঠেছে।

ওয়াশিংটনে এক সম্মেলনে ব্র্যাড স্মিথ তাঁর বক্তব্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়টিকে কীভাবে সর্বোত্তম উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর পরামর্শ হচ্ছে, কোনো কনটেন্ট আসল নাকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে, তা ঠিক করে দিতে হবে। কোনো কনটেন্ট খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হলে তা–ও জানিয়ে দিতে হবে।

ব্র্যাড স্মিথ বলেন, ডিপ ফেক ঘিরে যেসব সমস্যা, সেগুলো আমাদের সমাধান করতে হবে। এ ছাড়া বিদেশি সাইবার কার্যকলাপ যেগুলো গভীরভাবে প্রভাব ফেলে, সেসব উদ্বেগ দূর করতে ব্যবস্থা নিতে হবে।  তিনি এ ক্ষেত্রে রাশিয়ান সরকার, চীন এবং ইরানের সাইবার কার্যক্রমের উদাহরণ টানেন।

মাইক্রোসফটের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এআই ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতারণা বা প্রতারণা করার জন্য বৈধ বিষয়বস্তুর পরিবর্তন ঠেকাতে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, শারীরিক নিরাপত্তা, সাইবার নিরাপত্তা এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার বাধ্যবাধকতাসহ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধরনগুলোর নিবন্ধন করতে হবে।’

ব্র্যাড স্মিথ বলেন, এআইয়ের কারণে তৈরি যেকোনো সমস্যার জন্য এর পেছনে থাকা ব্যক্তিদের জবাবদিহি করতে হবে। যাঁরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রোগ্রাম তৈরি করছেন, তাঁরা যেন ব্যবহারকারীদের এর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জানিয়ে রাখেন। এতে ব্যবহারকারীরা ভুয়া ভিডিও বা অন্য আধেয় শনাক্ত করতে পারবেন। বৈদ্যুতিক গ্রিড, পানি সরবরাহ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে ব্যবহৃত এআইকে মানুষের নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিনি আইনপ্রণেতাদের যথাযথ আইন নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের ছোট–বড় অনেক প্রতিষ্ঠান এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন সফটওয়্যার তৈরির চেষ্টা করছে। বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে ওয়াশিংটনের আইনপ্রণেতারা একটি আইন প্রণয়নের কথা ভাবছেন। গত সপ্তাহে ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যানকে সিনেটে শুনানির জন্য ডাকা হয়। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন। তিনি এ খাতে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক সহযোগিতার কথাও বলেন।

সম্প্রতি ইউরোপে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণে আইন করার কথা ভাবা হচ্ছে। গত সপ্তাহে অল্টম্যান হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ইউরোপের আইনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারলে তিনি প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে ইউরোপ ছাড়বেন। অবশ্য গত শুক্রবার তিনি তাঁর সুর পাল্টেছেন। বলেছেন, ইউরোপ ছাড়ছেন না তিনি।
সূত্র: রয়টার্স ও গ্যাজেটস নাউ