২০১৩ সালে মার্কিন সাইবার বিশেষজ্ঞ এডওয়ার্ড স্নোডেন পৃথিবী কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। গোয়েন্দা সংস্থা যেকোনো মোবাইল ফোনে আড়ি পাতার ক্ষমতা রাখে বলে তিনি তথ্য প্রকাশ করেছিলেন। আসলেই কি তাই? ইন্টারনেটসহ কম্পিউটার ও স্মার্টফোনের ব্যবহার এখন আমাদের দৈনন্দিন বাস্তবতা। প্রয়োজনে কিংবা ব্যক্তিগত কাজে-বিনোদনে আমাদের নিত্য অনুষঙ্গ মোবাইল ও কম্পিউটার। জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ও সৃজনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি এসব অ্যাপের মাধ্যমে মানুষের তথ্য চুরির ঝুঁকি আছে। কোনো মোবাইল ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে কি না বা গুপ্তচরবৃত্তি হচ্ছে কি না, তা একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায়।
আড়ি পাতা বা গুপ্তচরবৃত্তিতে ব্যবহৃত ফোনে দ্রুত ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যাওয়া, অপরিচিত কোনো অ্যাপ ইনস্টল হয়ে যাওয়া, ফোন অতিরিক্ত গরম হওয়া, তথ্য বা ডেটা হারিয়ে যাওয়া, যন্ত্রের ত্রুটি, কথা বলার সময় নেপথ্য শব্দ বা ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় এমন ওয়েবসাইট দেখা যায়, যেটিতে আপনি যাননি।
যন্ত্রের অস্বাভাবিক আচরণের দিকে খেয়াল রাখুন। স্বাভাবিকভাবে মোবাইলের কর্মক্ষমতা সব সময়ই এক রকম হয়। যদি আপনার ফোন ঘন ঘন কাজে সাড়া না দেয় অর্থাৎ হ্যাং হয়ে যায়, তখন সতর্ক থাকুন। আবার নিয়মিত ফোন বন্ধ হয়ে চালু হলে (রিবুট) বা ধীরে ধীরে সাড়া দিলে সতর্ক থাকুন। স্পাইওয়্যার আপনার মোবাইলের সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করলে এমন অনিয়মিত আচরণ দেখতে পাবেন।
মোবাইলে আড়ি পাতলে আপনার মোবাইল ডেটার ব্যবহার বেড়ে যেতে পারে। ইন্টারনেট ডেটা দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া বা বেশি ব্যবহার কেন হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করুন। স্পাইওয়্যার যেহেতু আপনার অজান্তেই ডেটা প্রেরণ করে থাকে, তাই ইন্টারনেট ব্যবহার হয় অজান্তেই।
মোবাইলে অদ্ভুত বার্তা পেলে আড়ি পাতার আশঙ্কা আছে। দুর্বোধ্য কোনো চিহ্নসহ বার্তা স্পাইওয়্যার ইনস্টলেশন বা পরিচালনা প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে। অদ্ভুত সংকেত দেওয়া বার্তার মাধ্যমে অনেক সময় নির্দেশ বা কমান্ড পাঠানো হয়। এসব ফাঁদে পা রাখলে মোবাইল ফোনে আড়ি পাতা বা হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি বাড়ে।
সাধারণ নিরাপত্তার অংশ হিসেবে সুরক্ষার জন্য ফ্যাক্টরি রিসেট, নিয়মিত অ্যাপ হালনাগাদ করা, অপরিচিত অ্যাপ মুছে ফেলা, অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহারসহ পিন (পারসোনাল আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) ব্যবহার করা, স্ক্রিন লক ব্যবহার করার অভ্যাস করতে হবে।
কলের সময় নেপথ্যে কোনো আওয়াজ এলে মনোযোগ দিন। কিছু গুপ্তচর ধরনের অ্যাপ ফোন কথোপকথন রেকর্ড করতে পারে। কল চলাকালে ক্ষীণ আওয়াজের কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড শব্দ বা প্রতিধ্বনি শুনলে মনোযোগ সহকারে তা শুনুন।
যন্ত্র নিরাপদ রাখতে মোবাইলের ফ্যাক্টরি রিসেট করে দেখুন। এই প্রক্রিয়া কোনো অচেনা বা আপনার অজান্তে কোনো অ্যাপ যন্ত্রে থাকলে তা মুছে দেবে। ফ্যাক্টরি রিসেট করার আগে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ব্যাকআপ রাখতে ভুলবেন না। আর সর্বোত্তম নিরাপত্তার জন্য আপনার যন্ত্রের অপারেটিং সিস্টেম ও অ্যাপ্লিকেশন নিয়মিত হালনাগাদ করতেই হবে। সফটওয়্যার হালনাগাদে নতুন নিরাপত্তা প্যাচ ও ত্রুটি কেটে যায়।
স্মার্টফোনের ক্যামেরার মাধ্যমেও গুপ্তচরবৃত্তি করা হয়। কোন অ্যাপ স্মার্টফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করতে পারে, তা আপনি সেটিংসে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলেও স্মার্টফোন হ্যাকড হতে পারে। হ্যাকাররা আপনার যন্ত্রকে নানা প্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কখনো হ্যাকিংয়ের শিকার মনে হলে দ্রুত ডেটা ও তথ্য ব্যাকআপে নিয়ে ফেলুন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ই–মেইলের পাসওয়ার্ড দ্রুত বদলে ফেলুন।
সূত্র: মোলফার ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি ও ক্যাসপারস্কি