বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সারা দেশে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটটি শিক্ষার্থীবান্ধব নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের প্রথম পৃষ্ঠার (হোমপেজ) প্রায় পুরোটাই ফাঁকা, কোনো তথ্য নেই। মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত তথ্যের মেনুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ছবি দেখা গেলেও তাঁর সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা যায় না। হোমপেজের ওপরের দিকে ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ’ ও ‘কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ’ নামের দুটি ট্যাব রয়েছ, যা দেখে একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বুঝতে পারেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগ রয়েছে!
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ট্যাবে ক্লিক করলে আলাদা একটি ওয়েবসাইট চালু হয়। হোমপেজে দেখা যায় সরকারি নোটিশ, আদেশ, প্রজ্ঞাপন, নীতিমালাসহ বিভিন্ন পরিপত্র। ওয়েবসাইটে থাকা শিক্ষাবৃত্তির বিজ্ঞপ্তিগুলো শুধু পিডিএফ আকারে আপলোড করায় মুঠোফোন থেকে দেখতে বিড়ম্বনায় পড়েন অনেকেই। এসডিজি ও উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা বিভাগ দেখা গেলেও সেখানে শিক্ষার্থী বা শিক্ষকেরা কীভাবে যুক্ত হতে পারবেন, তার কোনো নির্দেশনা দেওয়া নেই। তবে ওয়েবসাইটের ওপরে থাকা ‘অধীনস্থ দপ্তর/অফিস/সংস্থা’ ট্যাব থেকে সহজেই নির্দিষ্ট দপ্তর,অফিস বা সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যায়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের হোমপেজ থেকে ‘কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ’ ট্যাবে ক্লিক করলে আলাদা একটি ওয়েবসাইট চালু হয়। এই ওয়েবসাইটের হোমপেজেই অসংখ্য আদেশ, প্রজ্ঞাপন, নীতিমালা ও পরিপত্র দেখা যায়।
ভারতের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সরকারি নোটিশের তুলনায় বেশি দেখা যায় বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ভর্তির তথ্য ও সরকারি বৃত্তির খোঁজখবর। এই ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজের ওয়েবসাইটে প্রবেশের মাধ্যমে যেকোনো তথ্য পাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। মাল্টিমিডিয়া বিভাগে মন্ত্রণালয়ের একটি ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও দেখা যায়। ৯৯৬টি ভিডিও আছে সেখানে। সেখানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা, ইন্টার্নশিপ প্রস্তুতি, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমের ভিডিও চিত্র দেখা যায়।
পাকিস্তানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিদেশি বিভিন্ন বৃত্তির তথ্য দেখা যায়। গুগলের সহায়তায় মন্ত্রণালয় প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, সেই বিষয়টি ওয়েবসাইটে আলাদা মেনুবারে দেখা যায়। শ্রীলঙ্কার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির তথ্য, বিভিন্ন বৃত্তির বিজ্ঞপ্তি বেশি দেখা যায়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট কতটা শিক্ষার্থীবান্ধব, তা নিয়ে কথা হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের সঙ্গে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী স্যাফায়ার হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিভিন্ন বৃত্তির বিজ্ঞপ্তি আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে পাই। বেশির ভাগ বৃত্তির তথ্য শুধু পিডিএফ আকারেই প্রকাশ করা হচ্ছে, সুন্দর করে সাজিয়ে প্রকাশ করা হয় না। আবার অনেক সময় বৃত্তির আবেদনের শেষ সময়ের মাত্র দুই দিন আগেও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তখন চাইলেও সবাই আবেদন করতে পারেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী হামিমুর রহমান ওয়ালিউল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে কিছু নেই। আমাদের দেশে অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী পড়তে আসতে চান, তাঁদের জন্য কোনো বিশেষ পোর্টাল বা তথ্যভান্ডারও নেই।