ফারজুক আহমেদ থাকেন সিলেটে। সিলেটের এমসি কলেজে গণিতে স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। পাশাপাশি মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সর হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছেন ২০১৭ সাল থেকে। সেখানে নিজে পেয়েছেন সফলতা। পাশাপাশি তরুণদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রশিক্ষণ দেন। ফারজুকের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৫০০ তরুণ এরই মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
ছোটবেলা থেকে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল ফারজুক আহমেদের। তবে দুবার প্রস্তুতি নিয়েও মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ না পেরে ভর্তি হন সিলেটের এমসি কলেজের গণিত বিভাগে। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ না হলেও দমে যাননি তিনি। পড়ালেখার পাশাপাশি সরকারের ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ প্রকল্পের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলেছেন ফারজুক। এখন তিনি ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে আয় করছেন প্রায় এক লাখ টাকা।
ফারজুক এরই মধ্যে সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে চারবার পুরস্কার পেয়েছেন। ফ্রিল্যান্সিং কাজে সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে গত মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় ফ্রিল্যান্সার সম্মেলনে সেরা ফ্রিল্যান্সার সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
সিলেট এমসি কলেজে অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজুক চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় তাঁর বাড়ি। ফারজুক মূলত কাজ করেন ডিজিটাল বিপণন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) এবং গুগল অ্যাডস নিয়ে। বর্তমানে ফারজুক ইন্টারনেটে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের কাজ দেয়া–নেয়ার ওয়েবসাইট (অনলাইন মার্কেটপ্লেস) ফাইভআর ডটকমে কাজ করেন। এছাড়াও সরাসরি বিদেশি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও কাজ করছেন।
ফারজুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। বাবার কাছে কম্পিউটার কেনার বায়না ধরলে ভালো ফলাফলের শর্ত জুড়ে দিতেন। শর্ত পূরণ করে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ায় কম্পিউটার কিনে দেন তিনি। এইচএসসি পাসের পর পরিবারের ইচ্ছা পূরণ করতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিই। সুযোগ না পেয়ে পরবর্তী সময় সিলেট এমসি কলেজের গণিত বিভাগে অনার্সে ভর্তি হই। পড়ালেখার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং কোর্সেও ভর্তি হই। আমার দৃঢ় মনোবল ছিল, ফ্রিল্যান্সিংয়ে আমি একদিন সফল হব। আমি জানতাম, স্বপ্ন কখনো মরে না। স্বপ্ন বেঁচে থাকে।’
ফ্রিল্যান্সিং করে শুধু নিজেই আয় করছেন না, বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিতে ফারজুক সিলেট শহরে চালু করেছেন ‘ওয়ান ম্যান সল্যুশনস’ নামে একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র। ইতিমধ্যে এই প্রশিক্ষণকেন্দ্রে দুই হাজারের বেশি তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৫০০ জনেরও বেশি সফলভাবে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে আয় করছেন। এ বিষয়ে ফারজুক বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিংয়ে আমার নিজের একদল কর্মী রয়েছে। যখন জানতে পারি, আমার কোনো শিক্ষার্থী ফ্রিল্যান্সিং করে পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করছে, তখন আনন্দ পাই।’
সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ন্যাশনাল ইয়ুথ ক্যারিয়ার কার্নিভ্যাল-২০২৩-তে দেশসেরা শ্রেষ্ঠ ফ্রিল্যান্সার মেন্টর পুরস্কার পেয়েছেন ফারজুক। ২০২১ সালে সিলেট জেলার শ্রেষ্ঠ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ডসহ গত বছর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ থেকে সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, তৃতীয়বারের মতো সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে রাইজিং ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন। ফারজুক বর্তমানে আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের মেন্টর এবং বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সিলেট জেলার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সিলেটে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ডিজিটাল মার্কেটিং ইনস্ট্রাক্টর হিসেবেও কাজ করছেন।