তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষ পাঁচ সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই এ খাতে কর অব্যাহতির মেয়াদ আরও সাত বছর বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর অব্যাহতির মেয়াদ তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর অব্যাহতির মেয়াদ তিন বছর বৃদ্ধি করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সব উদ্যোক্তার পক্ষ থেকে শুরুতেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে আমাদের দাবি অনুযায়ী কর অব্যাহতির মেয়াদ ২০৩১ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলে তা দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে দেশ-বিদেশে সক্ষমতা অর্জনে আরও বেশি সহায়তা করত।
এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, এই কর অব্যাহতি শুধু তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে অবদান রাখবে তা নয়, বরং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, রপ্তানিমুখী শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। ফলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এবং জ্ঞানভিত্তিক ক্যাশলেস অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনের নতুন জোয়ার তৈরি হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই প্রযুক্তিগত উন্নয়নগুলোর সম্মিলিত অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই খাতের কর অব্যাহতির মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হলে সব খাতের উন্নয়ন ব্যাহত হতো, যা ‘রূপকল্প ২০৪১’ বা স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াত।
গত ২৫ মে গণভবনে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক প্রাক্-বাজেট আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে আমি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর অব্যাহতির মেয়াদ বৃদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরি। পাশাপাশি, আমরা বেসিসের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদসহ খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেছি।
বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি খাত জাতীয় জিডিপিতে ১.২৫ শতাংশ অবদান রাখছে। ২০৪১ সাল নাগাদ দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির আকার ৫০ বিলিয়ন ডলার হবে। এ জন্য তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতির মতো আরও কিছু উৎসাহব্যাঞ্জক নীতিসহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য কর অব্যাহতির আওতায় ক্লাউড সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ওভারসিজ মেডিকেল ট্রান্সক্রিপশন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সার্ভিস, ওয়েবসাইট হোস্টিং, আইটি প্রসেস আউটসোর্সিং ও নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ককে (এনটিটিএন) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বর্তমানে দেশের ক্লাউড সার্ভিস এবং ওয়েব হোস্টিং ব্যবসার মাত্র ১০ শতাংশ দেশীয় উদ্যোক্তাদের দখলে রয়েছে। তাই নতুন করে এ খাতকে করের আওতায় আনা হলে তা দেশীয় উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করতে পারে। একই সঙ্গে নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ককে কর অব্যাহতির আওতায় আনা না হলে ইন্টারনেটের দাম গ্রাহক পর্যায়ে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফোনের দামের ওপর ভিত্তি করে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। যেহেতু আমাদের যাত্রা এখন স্মার্ট বাংলাদেশের পথে, তাই মোবাইল ফোন, স্মার্ট ডিভাইস মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়া আমাদের অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাই মোবাইল ফোনের দামের ওপর ভিত্তি করে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।
লেখক: বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি।