দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই গাড়ির তেল খরচ কমাতে চান। কিন্তু দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে গাড়ির ব্যবহার বেশি হওয়ায় তেলের খরচ কমানো আর হয়ে ওঠে না। তবে কিছু বিষয় মেনে চললে কম তেল খরচ করেও গাড়ি চালানো যায়। ফলে খরচ কমবে।
গাড়ি বা মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে থ্রটল বা এক্সিলারেটর যত নিরবচ্ছিন্নভাবে চেপে রাখা যাবে, তত তেল খরচ কম হবে। হঠাৎ করে গতি কমবেশি করলে কার্বুরেটরে অতিরিক্ত তেল প্রবেশ করে। ফলে তেল তুলনামূলক বেশি খরচ হয়। ফুয়েল ইনজেকশন (এফআই) ইঞ্জিন সাধারণত জ্বালানিসাশ্রয়ী হিসেবে তৈরি করা হয়ে থাকে। তাই নিরবচ্ছিন্নভাবে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তেল খরচ কম হবে।
যত গতি, তত ক্ষতি—কথাটি শুধু চালক বা যাত্রীর জন্য নয়, বাহনের জন্যও প্রযোজ্য। মনে রাখতে হবে, দ্রুত গতি বাড়ানোর কারণে গাড়ি বা মোটরসাইকেলের জ্বালানিও বেশি খরচ হয়। অন্যদিকে অতিরিক্ত গতি হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণ করলেও তেল বেশি খরচ হয়। তাই নির্দিষ্ট গতিতে পথ চললে তেল খরচ কম হবে।
অনেকেই মনে করেন, গাড়ির শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বন্ধ রাখলে জ্বালানি খরচ কম হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ কথা সত্যি হলেও মহাসড়কে চলাচলের সময় এ কথা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, গাড়ি বাতাসের বিরুদ্ধে সামনে এগিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে জানালা খোলা থাকলে বা হাওয়া প্রবেশের সুযোগ থাকলে গাড়ির গতি রোধ হয় এবং গাড়িকে গন্তব্যে পৌঁছাতে বেশি তেল খরচ করতে হয়। শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহারে একদম নিম্ন তাপমাত্রা বা লো অপশন ব্যবহার না করে ২৪ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ব্যবহার করলে তেল খরচ তুলনামূলক কম হবে।
অনেকেই প্রয়োজন ছাড়াই গাড়িতে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় মালামাল রাখেন। এই অতিরিক্ত মালামাল পরিবহনের জন্য গাড়িকে বেশি শক্তি খরচ করতে হয়। অতিরিক্ত যাত্রীর ক্ষেত্রেও গাড়ির জ্বালানি খরচ বেড়ে যায়। তাই প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত ওজন গাড়িতে বহন না করলে তেল খরচ কম হবে।
চাকার ওপর ভর করেই গাড়ি এগিয়ে যায়। তাই চাকায় হাওয়ার পরিমাণ গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুযায়ী রাখতে হবে। প্রতিটি গাড়ির চালকের আসনে দরজার পাটাতনে কোন চাকায় কতটুকু হাওয়া রাখতে হবে, তার নির্দেশনা দেওয়া থাকে। এ ছাড়া হালনাগাদ মডেলের গাড়িগুলোতে টিপিএমএস (টায়ার প্রেশার মনিটর সিস্টেম) থাকে। তাই গাড়ি চালানো শুরু করার আগে চাকায় সঠিক হাওয়ার পরিমাণ নিশ্চিত করে গাড়ি চালাতে হবে। এতে স্বাচ্ছন্দ্যে গাড়ি চালানোর পাশাপাশি জ্বালানি ব্যয়ও কমবে।
শ্বাসকষ্ট বা অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগলে মানুষের যেমন নাক দিয়ে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তেমনি গাড়ির এয়ার, ইঞ্জিন এবং এসি ফিল্টারে অতিরিক্ত ধুলাবালু জমলে গাড়ি অতিরিক্ত তেল খরচ করে। তাই এক সপ্তাহ পরপর গাড়ির এয়ার এবং এসি ফিল্টার পরিষ্কার করতে হবে। আর প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুযায়ী নির্দিষ্ট দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার পর ইঞ্জিন অয়েল, এয়ার এবং এসি ফিল্টার পরিবর্তন করতে হবে।
তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই বিকল্প জ্বালানি হিসেবে সিএনজি অথবা এলপিজিতে নিজের গাড়িকে রূপান্তর করিয়ে নিচ্ছেন। সিএনজি বা এলপিজির দাম তেলের চেয়ে কম, ফলে খরচও কম হয়। সিএনজি বা এলপিজি সাময়িকভাবে অর্থ সাশ্রয় করলেও ভবিষ্যতে ইঞ্জিনের সমস্যার কারণ হতে পারে।
অটোমোবাইল সার্ভিসিং প্রতিষ্ঠান ইগ্যারেজের পরিষেবা এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপক জিহাদ উদ্দিন জানান, গাড়ির চাকায় জ্যাম থাকলে বা সঠিকভাবে ঘুরতে না পারলে তেল খরচ বেশি হয়। সমস্যা সমাধানে নিয়মিত গাড়ির চাকা পরীক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া হ্যান্ডব্রেক এডজাস্টেও যেন একেবারে লাস্ট পয়েন্টে লক ব্যবহার না করা হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। তা ছাড়া ফুয়েল সিস্টেম এবং বাটারফ্লাই নিয়মিত পরিষ্কার রাখলেও তেলের খরচ কম হবে।