গত কয়েক বছরে ইউরোপ-আমেরিকার বেশির ভাগ দেশে ইলেকট্রিক বা বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) বিকাশ ঘটেছে চোখে পড়ার মতো। শুরুর দিকে আকাশছোঁয়া দামের কারণে সাধারণ গ্রাহকেরা বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রতি তেমন আগ্রহী ছিলেন না।
অটোমোবাইল বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, ২০২৪ সালে দাম কমে যাওয়ার কারণে সাধারণ গ্রাহকেরা বৈদ্যুতিক গাড়ি বেশি কিনবেন। বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতাদের মধ্যে গাড়ির দরদাম নিয়ে যুদ্ধ দেখা যাচ্ছে। সেই যুদ্ধ শেষে বিজয়ী হবেন গ্রাহকেরাই, এমনটা জানাচ্ছেন বিশ্লেষকেরা। দামে সস্তা চীনা ব্র্যান্ডের বিভিন্ন বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে আসছে। এতেই গাড়ির দাম নিয়ে টানাটানি দেখা যাচ্ছে।
বাজারে নতুন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি আনছে চীনের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। জিরো এমিশন ভেহিকেল বা জেডইভি ধারণা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। মূলত গাড়ি থেকে ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণের বিষয়টি শূন্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে জেইভি গাড়িতে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের সরকার দামের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপের কারণে আরও সস্তা হচ্ছে বৈদ্যুতিক গাড়ি।
যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম অটোমোটিভ মার্কেটপ্লেস অটো ট্রেডার জানিয়েছে, ২০২৪ সালে অনেক নতুন চালক বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনবেন। এ বছর ইভির দাম বেশ কমে আসবে বলে সাধারণ গ্রাহকেরা বেশি সংখ্যায় গাড়ি কিনতে আগ্রহী হবেন। বাজারে দুটি বড় পরিবর্তন আসার কারণেই গাড়ি বিক্রির হার বাড়বে। ব্যাটারির দাম কমে আসার কারণে গাড়ির দাম কমাতে বাধ্য হচ্ছে নির্মাতারা। এ ছাড়া চীনা নির্মাতাদের উত্থান যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের গাড়ি নির্মাণ খাতে বড় পরিবর্তনের ডাক দিয়েছে। চীনের তৈরি গাড়ির ব্র্যান্ড ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের বৈদ্যুতিক বাজারের ছয় ভাগের এক ভাগ দখল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৩ সালে জাপানকে পেছনে ফেলে গাড়ি রপ্তানিতে চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ হিসেবে অবস্থান তৈরি করেছে।
চীনের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমজি নতুন এমজিফোর মডেলের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যের গাড়ি নির্মাণের চেষ্টা করেছে। যুক্তরাজ্যের রাস্তায় চলায় বৈদ্যুতিক গাড়ির ৪ শতাংশের বেশি গাড়ি এমজি ব্র্যান্ডের। মাত্র এক দশকের মধ্যে চীনের সাংহাইয়ের ব্র্যান্ড এমজি মোটর যুক্তরাজ্যের বাজারের নিজেদের অংশীদারত্ব বাড়িয়েছে প্রায় ২০ হাজার শতাংশ। গত ১০ বছরে অন্য কোনো ব্র্যান্ডের অবস্থান এত বেশি দেখা যায়নি।
এখন স্কোডা, পুজো, ল্যান্ড রোভার, ভলভো, রেনল্ট ব্র্যান্ডের চেয়ে বেশি নতুন গাড়ি বিক্রি করছে। এমনকি টেসলার চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে এমজির গাড়ি। এমজি গত দশকের সবচেয়ে বড় গাড়ির ব্র্যান্ড হিসেবে খেতাব জিতেছে। চীনা ব্র্যান্ডটির ২০১৩ সালে মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ অবস্থান ছিল গাড়ির বাজারে। বাজেট-বান্ধব বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করে এক দশকের মধ্যে অন্যান্য সব ব্র্যান্ডকে ছাড়িয়ে গেছে এমজি।
চীনা ব্র্যান্ড গ্রেট ওয়াল মোটর (জিআরডব্লিউ) এবং বিল্ড ইওর ড্রিমস (বিওয়াইডি) এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যের বাজারে প্রবেশ করেছে। বিওয়াইডি আরেক চমকের নাম। ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসে বিশ্বের বৃহত্তম বৈদ্যুতিক যানবাহন প্রস্তুতকারক হিসেবে টেসলাকে ছাড়িয়ে যায় বিওয়াইডি। সারা বিশ্বে রেকর্ডসংখ্যক ৫ লাখ ২৬ হাজার গাড়ি বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিওয়াইডির ডলফিন মডেলের বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম যুক্তরাজ্য ২৫ হাজার পাউন্ড বা ৩১ হাজার ডলার। জিআরডব্লিউর ওআরএ ০৩ গাড়ির দাম ৩১ হাজার পাউন্ড বা ৩৯ হাজার ডলার।
চীনা ব্র্যান্ডগুলো ইউরোপের বাজারে নিজেরা নিজেদের সঙ্গে দাম নিয়ে লড়াই করছে। ইউরোপীয় ব্র্যান্ডকে বাজারে টিকে থাকতে হলে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। সে ক্ষেত্রে দাম কমানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। বিওয়াইডি ব্র্যান্ডের গাড়ির দাম কম। বিওয়াইডি নিজেই বিশ্বের অন্যতম বড় রিচার্জেবল ব্যাটারি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। যে কারণে দাম কমানোর সুযোগ আছে।
যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার বিকাশে সরকারি পর্যায়ে নানা নিয়মকানুন চালু করা হচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে যেকোনো ব্র্যান্ডের গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বৃদ্ধির জন্য এমন বিকল্প নিয়মে ঝুঁকছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। সেই সুযোগে চীনের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ইউরোপে নিজেদের বাজার বড় করছে। অটো ট্রেডারের কমার্শিয়াল ডিরেক্টর ইয়ান প্লামার বলেন, এমন নিয়ম চালুর কারণে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি করার জন্য চাপের মধ্যে রয়েছে। চীনা গাড়ির সঙ্গে দাম নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে অন্য সব ব্র্যান্ডকে।
সূত্র: ডেইলি মেইল