দেশের বাজারে এল রয়্যাল এনফিল্ড মোটরবাইক
দেশের বাজারে এল রয়্যাল এনফিল্ড মোটরবাইক

রয়্যাল এনফিল্ড বাইক নিয়ে কেন এত উন্মাদনা

মোটরবাইকপ্রেমীদের কাছে রয়্যাল এনফিল্ড অন্য এক আবেগের নাম। গত সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে রয়্যাল এনফিল্ডের প্রদর্শনী কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চারটি মডেলের রয়্যাল এনফিল্ড মোটরবাইকের অগ্রিম ফরমাশ (প্রি-অর্ডার) কার্যক্রম উদ্বোধনের পর বাংলাদেশেও সেই আবেগ ও উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। এর আগে ছিল বাইকারদের (বাইক চালক) প্রতীক্ষা। আর গতকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা গেছে রয়্যাল এনফিল্ড নিয়ে ব্যাপক আলোচনা। বিশ্বব্যাপী রোমাঞ্চপ্রিয় বাইকারদের কাছে জনপ্রিয় রয়্যাল এনফিল্ড মোটরবাইকের ইতিহাস ও বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

শুরুর ইতিহাস

রয়্যাল এনফিল্ডের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ১৮৯১ সালের নভেম্বরে বব ওয়াকার স্মিথ ও আলবার্ট এডি যুক্তরাজ্যের জর্জ টাউনসেন্ড অ্যান্ড কো নামের একটি প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করেন। সে সময় টাউনসেন্ড সুই উৎপাদক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জনপ্রিয় ছিল। ১৮৯৩ সালে রয়্যাল স্মল আর্মস ফ্যাক্টরির জন্য যন্ত্রাংশ তৈরি শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। সে বছরই প্রথম বব ওয়াকার স্মিথ নামের সাইকেলের নকশা করে প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তী সময়ে এই সাইকেলের নামকরণ করা হয় ‘রয়্যাল এনফিল্ড’। তখনই ‘মেড লাইক আ গান’ স্লোগান ধারণ করে প্রতিষ্ঠানটি।

১৮৯৮ সালে বব ওয়াকার স্মিথ প্রথম মোটরযান তৈরি করে। একে কোয়াড্রিসাইকেল বলা হয়। ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির নাম বদলে রাখা হয় ‘দ্য এনফিল্ড সাইকেল কোম্পানি লিমিটেড’। ১৯০১ সালে বব ওয়াকার স্মিথ ও ফরাসি জুল গোবিয়েটের নকশায় প্রথম রয়্যাল এনফিল্ড মোটরবাইক তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর ১৯১৪ সালে প্রথম টু স্ট্রোক মোটরবাইক তৈরি শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈনিকেরা ব্যবহার করতেন। ১৯২৪ সালে ২২৫ সিসির ৮টি নতুন মডেল বাজারে আনে প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠানটির তৈরি প্রথম বুলেট মডেলের মোটরবাইক অলিম্পিয়া মোটরসাইকেল শো লন্ডনে দেখানো হয়। এরপর ধীরে ধীরে ২৫০ সিসির পাশাপাশি ৩৫০ সিসি ও ৫০০ সিসির মোটরবাইক তৈরি করতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।

যুক্তরাজ্য থেকে সারা বিশ্বে

১৯৩১ সালে প্রথম যুক্তরাজ্যে রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট নামের একক সিলিন্ডারের ফোর স্ট্রোক মোটরবাইক তৈরি করা হয়। ১৯৫৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ মোটরস ব্রিটিশ রয়্যাল এনফিল্ডের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ করে রয়্যাল এনফিল্ড মোটরবাইক তৈরি শুরু করে। প্রথম দিকে যুক্তরাজ্য থেকে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভারতে এনে রয়্যাল এনফিল্ড মোটরবাইক সংযোজন করা হলেও ১৯৬২ সাল থেকে দেশটিতে সব যন্ত্রাংশ তৈরি শুরু হয়। ১৯৭৭ সালে এনফিল্ড ইন্ডিয়া যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে ৩৫০ সিসি মডেলের বাইক রপ্তানি শুরু করে। ১৯৯৩ সালে এনফিল্ড ইন্ডিয়া পৃথিবীর প্রথম ডিজেল মোটরবাইক তৈরি করে, যা এনফিল্ড ডিজেল নামে আলোচিত। ১৯৯৪ সালে আইশার গ্রুপ অধিগ্রহণ করলে এনফিল্ড ইন্ডিয়ার নামকরণ করা হয় রয়্যাল এনফিল্ড মোটরস লিমিটেড। ১৯৯০–এর দশকে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে। ফলে মোটরবাইক উৎপাদন কমানো হয়। তবে চাহিদা বাড়ার কারণে ২০১৩ সালে ভারতের চেন্নাইতে নতুন আরেকটি কারখানা চালু করা হয়। রয়্যাল এনফিল্ড বর্তমানে ৫০টির বেশি দেশে বাজারজাত করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে বাইক বিক্রিতে প্রতিদ্বন্দ্বী হার্লি-ডেভিডসনকে ছাপিয়ে যায় রয়্যাল এনফিল্ড।

যে কারণে জনপ্রিয়

রয়্যাল এনফিল্ড তার ক্ল্যাসিক ডিজাইন ও অতীত ইতিহাসের জন্য মোটরবাইকারদের কাছে জনপ্রিয়। বুলেট মডেলের ইতিহাস প্রায় ৯০ বছরের। অপরিবর্তিত ডিজাইন ও নস্টালজিক চেহারার জন্য সবাই কিনতে চান এই মোটরবাইক। আধুনিক প্রকৌশলের সঙ্গে ঐতিহ্য ও ইতিহাসের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে এই বাইক। এই বাইক জনপ্রিয় হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে স্থায়িত্ব ও দৃঢ়তা। রয়্যাল এনফিল্ড বাইক তাদের শক্তিশালী কাঠামোর জন্য পরিচিত। ভারী ধাতুর কাঠামো ও শক্ত ফ্রেম কঠিন পরিস্থিতিতে এই বাইককে টিকিয়ে রাখে। লম্বা ভ্রমণের জন্য এই বাইক দারুণ এক সঙ্গী। পথের অবস্থা যা–ই হোক না কেন, বাইকারদের কাছে পরম ভরসার নাম রয়্যাল এনফিল্ড। এই বাইক বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরে বেশ ব্যবহৃত হয়।

রয়্যাল এনফিল্ড মোটরবাইক পাহাড়-পর্বতে অভিযানের জন্য অভিযাত্রীদের কাছে খুব জনপ্রিয়। এনফিল্ড চালকেরা বিশ্বব্যাপী নিজেদের শক্তিশালী কমিউনিটির সদস্য হিসেবে মনে করে। ‘রাইডিং ব্রাদারহুড’ ধারণার জন্য চালকেরা এই বাইক কেনার দিকে ঝোঁকে বেশি। এটা অনেকের কাছে যতটা না বাইক, তার চেয়ে বেশি আবেগ বলা হয়। এ ছাড়া রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেল রক্ষণাবেক্ষণ করা তুলনামূলকভাবে সহজ।

বাংলাদেশে রয়্যাল এনফিল্ড বাইক সংযোজন ও বাজারজাত করছে ইফাদ মোটরস লিমিটেড। বাজারে রয়্যাল এনফিল্ডের হান্টার, ক্ল্যাসিক, বুলেট ও মিটিওর নামের চারটি মডেল পাওয়া যাবে। হান্টার মডেলের মোটরবাইকটির দাম ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ক্ল্যাসিক ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা, বুলেট ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ও মিটিওর ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে রং, বিভিন্ন সুবিধা যুক্ত করার জন্য বাড়তি অর্থ গুনতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার থেকে দেশব্যাপী অনলাইন এবং প্রদর্শনী কেন্দ্রে থেকে অগ্রিম ফরমাশ দেওয়া যাচ্ছে। ২৫ হাজার টাকা দিয়ে যেকোনো বাইক ফরমাশ করা যাবে।