জ্বালানি সাশ্রয় বা অন্য কোনো কারণে অনেকেই গাড়িকে কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাসে (সিএনজি) চালানোর উপযোগী করতে চান। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে। এ কারণে এখন বেশির ভাগ মানুষ গাড়িকে সিএনজি ব্যবহার উপযোগী করে নিচ্ছেন। পেট্রল, ডিজেল ও অকটেনচালিত গাড়িকে সিএনজিতে রূপান্তর করার ফলে খরচ অনেকাংশেই কমে যাচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গাড়িকে সিএনজিতে রূপান্তর করার সুযোগ রয়েছে।
প্রতিদিনের জ্বালানি খরচ কমানোর জন্য অনেকেই তেলচালিত গাড়িকে সিএনজিতে রূপান্তর করেন। আপনার প্রিয় গাড়িটি সিএনজিতে পরিবর্তন করলে তার প্রতিদিনের খরচ কমে আসবে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গাড়ি সিএনজিতে রূপান্তর করে দেয়। গাড়ি সিএনজিতে রূপান্তর করতে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে যারা গ্রাহকসেবা দিচ্ছে, সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে সিএনজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হলে গাড়ি নিরাপদ থাকে। খরচ কমাতে গিয়ে যেন সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি না হয়, সেই বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। অনেকেই আছেন, যাঁরা সিএনজিতে রূপান্তরের সময় খরচ বাঁচানোর কথা ভাবেন, অল্প কিছু টাকা বাঁচিয়ে নিম্নমানের সিএনজি রূপান্তর সেন্টারের শরণাপন্ন হন। মানসম্মত সিলিন্ডারগুলোতে সেফটি ভালভ বা শাট অফ ভালভ থাকে। সিলিন্ডারে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে এই ভালভ সিলিন্ডারের গ্যাসকে বাইরে বেরোতে দেয় না। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে না। ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে মান যাচাই করে তারপর গাড়িকে রূপান্তরের দায়িত্ব দেওয়া উচিত।
সব গাড়িতে সব সময় সিএনজি কিট লাগানো সম্ভব হয় না। তাই আপনার গাড়িটির বিষয়ে আগে ভালো করে জেনে নিন। সাধারণত খুব পুরোনো গাড়িতে সিএনজি কিট লাগানো সম্ভব হয় না। তবে যদি আপনার গাড়িটি তুলনামূলকভাবে নতুন হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে সিএনজি কিট লাগাতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সিএনজি কিট লাগানোর সময় অবশ্যই দেখে নেবেন, সেটি সরকার অনুমোদিত কি না। সব সময় শুধু সরকার অনুমোদিত সিএনজি কিটই গাড়িতে লাগাবেন।
প্রচলিত জ্বালানির চেয়ে অর্ধেক বা এর কম খরচে এই জ্বালানি ব্যবহার করা যায় বলে গাড়িতে সিএনজির চাহিদাও বেড়েছে। এই চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অননুমোদিত সিএনজি রূপান্তর প্রতিষ্ঠান। আরও আছে অদক্ষ মেকানিকদের পাল্লায় পড়ে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা। আর এসব জায়গা থেকে সেবা নিতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে সাধারণ মানুষ। যার খেসারত জীবনের মূল্যে দিতে হচ্ছে। সম্প্রতি কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা জানিয়ে গেল সেই সতর্কবার্তা।
শুধু সরকার অনুমোদিত ডিলারের কাছ থেকেই কিনবেন আপনার গাড়ির জন্য সিএনজি কিট। এ ছাড়া যে সিএনজি কিটটি আপনি কিনছেন, সেটি আসল কি না, তা–ও যাচাই করে নেবেন। সিএনজি কিট কেনার পর নিজে কখনোই তা গাড়িতে লাগাতে যাবেন না। এই কাজের জন্য একজন অভিজ্ঞ মেকানিকের সাহায্য অবশ্যই নিন।
একজন গাড়ির মালিক যেখানেই তাঁর গাড়িকে সিএনজিতে রূপান্তর করান না কেন, এর আগে অবশ্যই সিলিন্ডার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সেই সিলিন্ডারসংক্রান্ত ছাড়পত্র সংগ্রহ করবেন। এ ছাড়া রূপান্তরকারী প্রতিষ্ঠান সিলিন্ডারের ওপর আরও একটি ছাড়পত্র প্রদান করে। এই ছাড়পত্রগুলো থাকলে গ্রাহক সিলিন্ডারের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন।
সিলিন্ডারের সঙ্গে থাকা যন্ত্রাংশগুলো উন্নত মানের কি না, খবর নিতে হবে। ইন্টারনেটের যুগে সহজেই সিএনজি রূপান্তরের যন্ত্রাংশগুলো সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যায়। একটি সিলিন্ডার সিএনজি রূপান্তরের জন্য উপযোগী ও টেকসই কি না, গ্রাহকের বোঝার উপায় কী? আন্তর্জাতিক গ্যাস সিলিন্ডার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সিলিন্ডারে মান নির্ধারণ করতে পাঁচ-ছয় ক্যাটাগরির মানদণ্ডের কথা উল্লেখ করে। এই মানদণ্ডের পরীক্ষায় যে গ্যাস সিলিন্ডারগুলো উত্তীর্ণ হয়, সেগুলো নির্দ্বিধায় ১৫ থেকে ২০ বছর ব্যবহার করা যায়।
গাড়িতে সিলিন্ডার বসানোর পর বাড়তি কোনো যত্ন নিতে হয় না। তবে দাহ্য পদার্থ বা স্ফুলিঙ্গ তৈরি করতে পারে, এমন পদার্থ থেকে গাড়ি বা সিলিন্ডারের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। শতভাগ নিরাপদ ব্যবহারের জন্য প্রতি পাঁচ বছর পরপর সিলিন্ডারের পুনর্নিরীক্ষণ (রি-টেস্টিং) করা জরুরি। এতে গাড়ির সিএনজি পরিচালনপ্রক্রিয়ার ত্রুটি, সিলিন্ডার গ্যাসের অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়।