বাংলাদেশের বাজারে চলতি ২০২৩ সালে বেশ কিছু মোটরবাইক এসেছে। বাইকপ্রেমীদের মনও জয় করেছে কিছু মোটরসাইকেল। ২০২৩ সালে দেশের বাজারে আসা বাইকগুলোর মধ্যে আলোচিত পাঁচটি মোটরবাইকের কথা থাকছে এই প্রতিবেদনে। বাইকপ্রেমীদের একাধিক অনলাইন গ্রুপের আলোচনা থেকে ২০২৩ সালের এই পাঁচটি বাইক বাছাই করা হয়েছে।
মোটরবাইকে সামনের অংশে কিট (বাড়তি আবরণ) থাকলে সেগুলোকে সাধারণত ফেয়ারি বাইক বলে। আর যেসব বাইকে কিট থাকে না, সেগুলোকে উন্মুক্ত বা ন্যাকেড বাইক বলা হয়। ফেয়ারি বাইকে নতুন দুটি রঙে দেশের বাজারে সুজুকি নিয়ে এসেছে সুজুকি জিক্সার এসএফ এফআই এবিএস। স্পোর্টস শ্রেণির পরে সাধারণ চলাচলের জন্য এই মোটরবাইক তার সৌন্দর্য এবং কার্যদক্ষতায় গ্রাহকদের মন জুগিয়েছে। ২০২৩ সালে ম্যাট কোবাল্ট ব্লু (নীল) এবং ম্যাট এলিগেন্ট ব্ল্যাক (কালো) এই দুই রঙের বাইকের মূল্য অন্যান্য রঙের তুলনায় ১২ হাজার টাকা বেশি। ১৫৫ সিসিতে মোটরবাইকটির অশ্বশক্তি ১৩.৯০ এইচপি। ১৩৬ কেজি ওজনের বাইকটি এক লিটার তেলে ৪৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস, এয়ার কুলড, ৪ স্ট্রোক, এসআই ইঞ্জিনের এই বাইক ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলতে পারে। সুজুকি জিক্সার এসএফ এ মেইনটেন্যান্স ফ্রি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। ৫ গিয়ার গতিসম্পন্ন বাইকটির সামনের হেডলাইট বেশ আকর্ষণীয়। পেছনেও রয়েছে এলইডি লাইট। বাইকটির মূল্য ৩ লাখ ২২ হাজার ৯৫০ টাকা।
ভারতের অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠান বাজাজের পালসার মডেলের বাইক দুই দশক ধরে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে রয়েছে। সিটিং পজিশন এবং প্রশস্ত আরামদায়ক আসনে পালসারের স্টাইলে পরিবর্তন করে দেশের বাজারে চলতি বছরের মার্চে আসে পালসার এন ১৬০। ডুয়েল চ্যানেল এবিএস–সমৃদ্ধ এই বাইক ১৬৫ সিসিতে সিঙ্গল সিলিন্ডার, ফোর স্ট্রোক, এসওএইচসি, ২ ভালভের অয়েল কুলড এফ আই ইঞ্জিন। বাইকটির হেডলাইটে প্রজেকশন এলইডি ব্যবহার করা হয়েছে। আগ্রাসী চেহারার বাইকটিতে ৩৭ মিলিমিটার ফ্রন্ট সাসপেনশন, এনট্রক্স মনোশক, ডিজিটাল ডিসপ্লে, টিউবলেস টায়ার এবং এলইডি টেইলল্যাম্প রয়েছে। মোবাইল ফোন চার্জ করার সুবিধা আছে বাইকটিতে। পালসার এনএস ১৬০ ডুয়েল চ্যানেল বাইকের দাম ২ লাখ ৬৯ হাজার ৯০০ টাকা।
শাড়ি পরে বাইক চালানো অথবা গিয়ার পরিবর্তনের ঝামেলা ছাড়া বাইক কিনতে চাইলে স্কুটারের জুড়ি নেই। চলতি বছরে ভারতীয় অটোমোবাইল নির্মাতা টিভিএস নিয়ে এসেছে মেরিন ব্লু রঙের ১২৫ সিসির স্কুটি। স্কুটির মডেল এনটর্ক ১২৫। উড়োজাহাজের সামনের নকশার আদলে বানানো এই বাইকে রিয়ার টেইল লাইট, স্পোর্টি স্টাবি মাফলার, ডায়মন্ড কাট অ্যালয় হুইল, টিউবলেস টায়ার, ডিস্ক ব্রেক, স্পোর্টি গ্রাব রেইল, থ্রিডি এনটর্ক লোগো, গেমিং কনসোলের মতো স্পিডোমিটার, থ্রি টোন কম্বো কালার এবং এলইডি হেডলাইট রয়েছে। বাইকটিতে ব্লুটুথের সাহায্যে সংযুক্ত করে জিপিএস এবং বাইকের যাবতীয় তথ্য দেখা যায়। স্পোর্টস ঘরানার এই স্কুটারের দাম ১ লাখ ৯৭ হাজার ৯৯৯ টাকা।
বৈদ্যুতিক বাইক বা ই-বাইক শ্রেণিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নিবন্ধনসহ তিনটি মডেলের ই-বাইক নিয়ে এসেছে দেশি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারবে এই ই-বাইক। একবার পূর্ণ চার্জে পাড়ি দিতে পারবে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। ই-বাইকটিতে ৭২ ভোল্টের ২৩ এএইচ গ্রাফেন লিড অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়েছে। ডিসি ব্রাশলেস মোটরসমৃদ্ধ এই বাইকের সর্বোচ্চ শক্তি ১.৫ কিলোওয়াট এবং সর্বোচ্চ টর্ক ৮৮ নিউটন মিটার (এনএম)। বাইকটিতে পরিপূর্ণ চার্জ দিতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগবে। সামনে এবং পেছনে ডিস্ক ব্রেক, টিউবলেস টায়ার এবং এলসিডি স্পিডোমিটারের এই বাইকে দুই বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা মিলবে। প্রতি কিলোমিটার পাড়ি দিতে ই-বাইকটিতে খরচ হবে মাত্র ১০ পয়সা। তিনটি মডেলে পরিবেশবান্ধব এই ই-বাইকগুলো দেশের বাজারে মিলবে। তাকিওন ১.০–এর দাম ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৫০ টাকা। তাকিওন ১.২০–এর দাম ১ লাখ ৪ হাজার ৯০০ টাকা এবং তাকিওন লিউয়ের দাম ৫৯ হাজার ৮৫০ টাকা।
দেশি প্রতিষ্ঠান রানার অটোমোবাইল বাজারে নিয়ে এসেছে ১৬৫ সিসির এয়ার কুলড ইঞ্জিনসমৃদ্ধ নতুন একটি মোটরবাইক। বাইকটির মডেল রানার বোল্ট ১৬৫ আর। সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার। প্রতি লিটার জ্বালানিতে বাইকটি ৪০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে। টিউবলেস টায়ার, বৈদ্যুতিক ও কিক স্টার্ট, ডিজিটাল স্পিডোমিটার এবং রেসিং বাইকের মতো দেখতে বোল্ট ১৬৫ আর কম দামে স্পোর্টস বাইকের স্বাদ দেবে। বাইকটির ওজন ১৫০ কেজি। রেডি পিকআপ থাকার কারণে মুহূর্তেই মোটরবাইকটির গতি বাড়িয়ে যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দেখা যায়। বাইকটির মূল্য ১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা।
মোটরবাইকের বাজার সম্পর্কে উত্তরা মোটরসের পরিবেশক এস কে ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আল মামুন বলেন, দ্রুত এবং স্বাচ্ছন্দ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে মোটরসাইকেলের জুড়ি নেই। বাজাজ প্রতিনিয়ত বাইকারদের কথা চিন্তা করে নিত্যনতুন মডেল তৈরে করে যাচ্ছে। আমাদের মোটরবাইকের বাজার প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে বিক্রিবাট্টা আগের চেয়ে কম হলেও বাইকের চাহিদা রয়েছে। আগামী বছর ১৬৫ সিসির বেশি সিসির বাইক দেশের রাস্তায় চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাইকারদের মোটরসাইকেল বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রটি আরও বিস্তৃত হবে।