যাঁরা মোটরসাইকেল চালাতে জানেন না, তাঁদের কাছে সবচেয়ে কঠিন বাইক চালানো শেখা। আর যাঁরা মোটরসাইকেল চালাতে পারেন, তাঁদের কাছে সবচেয়ে সহজতম কাজ হলো মোটরসাইকেল চালানো শেখা। ঢাকার আগারগাঁওয়ের নতুন রাস্তায় বোনের সঙ্গে বাইক চালানো শিখতে এসেছেন চাকরিজীবী ফারজানা খন্দকার। ‘ঢাকা রাস্তার নিজের মোটরসাইকেল থাকা মানে আমি স্বাধীন। যেকোনো সময় চাইলে বের হওয়া যায়। গাড়ি বা রিকশা পাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। আর খরচের দিক চিন্তা করলেও অনেক সাশ্রয়ী।’ মোটরসাইকেল শেখার কারণ জানাতে গিয়ে এমনটাই জানান তিনি।
শুধু ফারজানা খন্দকার একাই নন, ঢাকার যানজট, অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো এবং ভাড়ার কথা চিন্তা করে মোটরসাইকেল কেনার কথা অনেকে ভাবছেন। তবে যাঁরা মোটরসাইকেল চালাতে পারেন না, কিন্তু কেনার ইচ্ছা, কিংবা নতুন মোটরসাইকেল কিনেছেন, তাঁদের জন্য রহমান সার্ভিস সেন্টারের হেড অব অপারেশন মো. মিজানুর রহমানের পরামর্শ তুলে ধরা হলো।
১. আপনার জন্য যে মোটরসাইকেল উপযুক্ত, সেটা দিয়েই চালানো শেখা উচিত। তবে ভারী বা বড় আকারের মোটরসাইকেল দিয়ে চালানো না শিখে ছোট আকার ও ওজনে কম এমন মোটরসাইকেল দিয়ে চালানো শেখা উচিত। কারণ, ছোট আকারের কিংবা কম ওজনের মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করা সহজ।
২. দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজনের কাছ থেকে মোটরসাইকেল চালানোর প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত। সবচেয়ে ভালো কোনো একটি ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হয়ে যাওয়া। ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হলে একটি নিয়মের মধ্যে থাকবেন আপনি এবং প্রতিটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রেই দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক থাকেন।
৩. মোটরসাইকেল শেখার প্রথম দিকেই ব্যস্ত রাস্তায় চালানোর উচিত নয়। ১৫ দিন থেকে ১ মাস প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ব্যস্ত রাস্তায় মোটরসাইকেল চালানো উচিত। শুরুতে ২০-৩৫ কিলোমিটার গতিতে বাইক চালানো শেখা উচিত।
৪. ব্যস্ত রাস্তা বা মহাসড়কে উঠে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে ভয় পাওয়া যাবে না। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। তবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস অনেক সময় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তাই ব্যস্ত রাস্তা বা মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানোর আগে নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিন।
৫. মোটরসাইকেলের গতি ৪০ থেকে ৪৫ কিলোমিটারের মধ্যে রাখলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেকাংশে কম থাকে। শুরুতে মোটরসাইকেলের অল্প গতি থাকলে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। আস্তে আস্তে মোটরসাইকেলের গতির সঙ্গে আপনি অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। তবে অতিরিক্ত গতিতে মোটরসাইকেল চালানো সব সময়ই ক্ষতিকর।
৬. মোটরসাইকেল চালাতে গেলে আপনি রাস্তায় অনেক স্পিড ব্রেকার পাবেন। আস্তে চালালে সহজেই স্পিড ব্রেকার পার হওয়া যায়। স্পিড ব্রেকার থাকলে একদম পাশের একটু যে খালি জায়গা থাকা, ওইদিক দিয়ে টার্ন করা উচিত নয়। এই ছোট্ট স্পিড ব্রেকার দিয়েই মোটরসাইকেল চালানোর সময় আপনার ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে পারেন। স্পিড ব্রেকারটির জন্য মোটরসাইকেলের গতি কমিয়ে ধীরে ধীরে পার হন।
৭. অনেকেই আছেন, মোটরসাইকেল চালানো শেখার পরেই লম্বা ট্যুরে বের হন। নতুন বাইকদের লম্বা ট্যুরে বের হওয়া উচিত নয়। কারণ, মহাসড়কে নানা রকম বাহন পাবেন। একেক বাহনের একেক রকম গতি এবং ধরন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিয়ে বের না হওয়াই উচিত।
৮. মোটরসাইকেল নিয়ে কারও সঙ্গেই রেস বা প্রতিযোগিতা করা উচিত নয়। আপনার ভালো মোটরসাইকেল থাকতে পারে, কিন্তু আপনার পাশের জনের অভিজ্ঞতা আপনার থেকে বেশিও হতে পারে। আর গতি শুধু মোটরসাইকেলের ওপরই নির্ভর করে না, অনেক কিছুর ওপরও নির্ভর করে।
৯. নতুন মোটরসাইকেল চালানোর পাশাপাশি কিছু কারিগরি ব্যাপারও জানা থাকা ভালো। যেমন কীভাবে স্পার্ক প্লাগ খুলতে ও পরিষ্কার করতে হয়। চাকার প্রেশার বা হাওয়া কখন কত রাখতে হয়। হঠাৎ বাইক বন্ধ হয়ে গেলে কি করতে হয়। এমন কিছু প্রাথমিক বিষয়ে জানা থাকলে রাস্তার মধ্যে ঝামেলায় পড়তে হবে না।