বাস-ট্রেনে টিকিট কাটার ভোগান্তি এড়াতে ঈদে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরেছেন কয়েক লাখ লোক। যানজট থেকে মুক্তি মিললেও দুই চাকার এই বাহনে রয়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। আর তাই তো এবারের ঈদের ছুটির সময় সড়কে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের প্রায় ৪৮ শতাংশই মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী। দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে হলে মোটরসাইকেল নিয়ে যাত্রা শুরুর আগে বেশ কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে। নিরাপদ মোটরসাইকেল ভ্রমণের জন্য যেসব বিষয় মানতে হবে সেগুলো দেখে নেওয়া যাক।
দূরত্ব যতই কম হোক না কেন, যাত্রা শুরুর আগে অবশ্যই মোটরসাইকেলের ব্যাটারি, হর্ন, থ্রটল ও ক্লাচ কেব্ল, ব্রেক, হেডলাইট, সিগন্যাল লাইট এবং পেছনের লাইট ঠিকমতো কাজ করছে কি না, দেখে নিতে হবে। দূরের পথে যাত্রার আগে ইঞ্জিন অয়েল পরীক্ষা করতে হবে। পরিবর্তনের সময় কাছাকাছি থাকলে নতুন ইঞ্জিন অয়েল ও ফিল্টার ব্যবহার করতে হবে। এতে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন বেশি গরম হবে না। লিকুইড কুলড ইঞ্জিন হলে কুলেন্ট বদলে নিতে হবে।
নিরাপদ ভ্রমণের জন্য মোটরসাইকেলের চাকায় সঠিক পরিমাণ হাওয়া ব্যবহার করতে হবে। রাস্তায় চাকা ফুটো বা পাংচার ঠেকাতে চাকায় জেল ব্যবহার করতে পারেন। চাকার হাওয়ার পাশাপাশি চেইনের টেনশনও ঠিকমতো রাখতে হবে। চেইন অতিরিক্ত শক্ত বা নরম হলে মোটরসাইকেল ঠিকমতো চলতে পারে না। সমস্যা সমাধানে চেইন লুব ব্যবহার করতে পারেন।
একটি মোটরসাইকেলে সাধারণত চালকসহ একজন আরোহী স্বাচ্ছন্দ্যে পথ চলতে পারেন। কিন্তু অনেক মোটরসাইকেলচালকই একাধিক আরোহী নিয়ে চলাচল করেন, যা ঠিক নয়। এতে নিজের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি আইনও ভঙ্গ হয়। ফলে দূরত্ব যা-ই হোক না কেন, মোটরসাইকেলে দুজনের বেশি ভ্রমণ করা যাবে না। আর আপনার সঙ্গে যদি ভারী বা বড় কোনো ব্যাগ থাকে, তবে অতিরিক্ত কোনো আরোহী না নেওয়াই ভালো।
মোটরসাইকেলে নিরাপদ ভ্রমণের জন্য চালক বা আরোহীর পোশাকেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ জন্য হেলমেট পরার আগে অবশ্যই উইন্ডশিল্ড ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। হালকা বা খোলা হেলমেটের বদলে পুরো মুখ ঢাকা হেলমেট ব্যবহার করলে ভালো হয়। অন্ধকারে বা মহাসড়কে পথ চলার জন্য রাইডিং জ্যাকেট বা রিফ্লেক্টর (আলোতে অতি দৃশ্যমান) পরতে পারেন। অনেকেই স্যান্ডেল পরে মোটরসাইকেল চালান, যা ঠিক নয়। গিয়ার ওঠানো বা নামানো এবং ব্রেক ধরার সময় স্যান্ডেল খুলে যাওয়ার ভয় থাকে। ফলে স্যান্ডেলের বদলে জুতা বা কেডস পরে মোটরসাইকেল চালাতে হবে।
পকেটে মানিব্যাগ, স্মার্টফোন, চাবি বা অন্যান্য বস্তু রাখলে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণে বেশ কষ্ট হয়। সমস্যা সমাধানে ছোট ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন কার্ড এবং ট্যাক্স টোকেনের পাশাপাশি ব্যাগটিতে মানিব্যাগ, স্মার্টফোন, চাবি বা অন্যান্য বস্তু রাখতে পারেন। চলার পথে পিঠে ভারী ব্যাগ বহন না করাই ভালো। সঙ্গে ভারী ব্যাগ থাকলে মোটরবাইকের আসনের সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে নিতে হবে।
মোটরসাইকেল রাস্তার বাঁ পাশ দিয়ে চালালে দুর্ঘটনার শঙ্কা কম থাকে। আর তাই রাস্তার একেবারে ডান পাশ দিয়ে মোটরসাইকেল না চালানোই ভালো। এ ছাড়া হঠাৎ ডানে-বাঁয়ে লেন পরিবর্তন করা যাবে না। সামনের গাড়ি অতিক্রম করার সময় অবশ্যই হর্ন ও পাসিং লাইট ব্যবহার করে চালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, গাড়ি অতিক্রমের সময় বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি থেকেও নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই গতির চেয়ে নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব এড়িয়ে চলতে হবে।