কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি চালুর পর প্রযুক্তিনির্ভর প্রতারণার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দ্রুত উন্নত হওয়ায় এআই চ্যাটবটের মাধ্যমে প্রতারকেরা সহজেই বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা করছে বলে সবাইকে সতর্ক করেছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। এ ধরনের প্রতারণা থেকে নিরাপদ থাকতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
বিভিন্ন জরিপের তথ্যমতে, এআই চ্যাটবট সত্যিকারের মানুষের মতোই অন্যদের সঙ্গে ফোনকল বা বার্তার মাধ্যমে কথোপকথন চালাতে পারে। আর তাই ব্যবহারকারীদের বোকা বানাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি এআই চ্যাটবটের মাধ্যমে ভালোবাসার প্রলোভন দেখিয়ে রোমান্স স্ক্যাম ও ফিশিং হামলার প্রবণতা বাড়ছে। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের পাশাপাশি তাদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে বড় ধরনের সাইবার হামলা চালাচ্ছেন সাইবার অপরাধীরা।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ পল বিশকফ জানিয়েছেন, বর্তমানে বিভিন্ন গ্রাহকসেবা–সম্পর্কিত কাজে ও কথোপকথনে এআই চ্যাটবট ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ধরনের বার্তা বেশির ভাগ সময়ই বেশ গুছিয়ে লেখা হয়। ফলে সহজে চ্যাটবটের পাঠানো বার্তাগুলো শনাক্ত করা যায় না। বর্তমানে এআই চ্যাটবটের মাধ্যমে ফোনকলও করা হচ্ছে। তাই সত্যিকারের মানুষ ও এআই চ্যাটবটের মধ্যে পার্থক্য বের করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
এআইয়ের মাধ্যমে প্রতারিত হতে না হলে বেশ কিছু পদ্ধতি মেনে চলারও পরামর্শ দিয়েছেন পল বিশকফ। তিনি জানান, ব্যাংক বা কোনো প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকসেবা কেন্দ্রের নামে ফোনকল এলে বিভিন্ন বিষয় জানার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রশ্ন করতে হবে। অনেকটা সিলেবাসের বাইরে প্রশ্ন করার মতো। কারণ, এআই চ্যাটবটগুলো নির্ধারিত প্রশ্নের উত্তর ছাড়া বেশি তথ্য জানাতে পারে না। আর তাই ফোনে কেউ অর্থ চাইলে এমন কোনো প্রশ্ন করতে হবে, যা শুধু আপনি বা কল করা ব্যক্তি জানেন। পাশাপাশি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান খুব গুছিয়ে বার্তা পাঠালে সতর্ক হতে হবে। এ ছাড়া ফোনে কেউ বাড়তি সুবিধা বা প্রলোভন দেখালে তা থেকে নিরাপদ থাকতে হবে। ট্রুকলারের মতো বিভিন্ন কল শনাক্তকরণ অ্যাপ ব্যবহার করে স্প্যাম কল করা ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে জানার পাশাপাশি প্রয়োজনে কল করা নম্বরটি ব্লক করা যেতে পারে।
বর্তমানে সাইবার অপরাধীরা এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই যেকোনো ব্যক্তির কণ্ঠস্বর নকল করে সেই ব্যক্তির পরিচিতদের ফোন করে অর্থ সংগ্রহসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা করছেন। এ সমস্যা সমাধানে পরিচিত ব্যক্তিদের আগে থেকেই নির্দিষ্ট বাক্য বা শব্দের কোড জানিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন পল বিশকফ। এর ফলে পরিচিত ব্যক্তিদের কণ্ঠস্বর নকল করে কেউ টাকা চাইলেও কথার ছলে সেই কোড বা তথ্য জানতে চাওয়া যাবে। তথ্য জানাতে না পারলে বুঝতে হবে ফোনটি প্রতারণার জন্য করা হয়েছে।
সূত্র: দ্য সান