বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষায় ভালোভাবেই উতরে গেছে চ্যাটজিপিটি
বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষায় ভালোভাবেই উতরে গেছে চ্যাটজিপিটি

মানুষকে বিস্মিত করে বিখ্যাত টুরিং পরীক্ষা পাস করল চ্যাটজিপিটি

ওপেনএআইয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির চ্যাটজিপিটি বাজারে আসার পর মানুষ ও যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে হাজারো ভাবনা তৈরি হয়েছে। চ্যাটজিপিটি সম্প্রতি বিখ্যাত ‘টুরিং’ পরীক্ষায় পাস করে আবারও চমকে দিয়েছে। চ্যাটজিপিটির বুদ্ধিমত্তা মানুষের সমান হয়ে গেছে বলে একদল বিজ্ঞানী দাবি করছেন। বিজ্ঞানীরা দাবি করে জানান, চ্যাটজিপিটি-৪ প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যা দুজনের টুরিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। পরীক্ষায় চ্যাটজিপিটি একজন মানুষের সঙ্গে আলাপ করার সময় ৫৪ শতাংশ সময় তাঁকে বোকা বানিয়েছিল।

কম্পিউটারবিজ্ঞানী অ্যালান টুরিং ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, কম্পিউটার একদিন মানুষের বুদ্ধিমত্তার সমান ক্ষমতা অর্জন করবে। কম্পিউটার চিন্তা করতে সক্ষম কি না, তা জানতে টুরিং বিশেষ পরীক্ষার প্রস্তাব করেন। ১৯৫০ সাল থেকে চালু হওয়া টুরিং পরীক্ষার মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কতটা কার্যকর, তা পরিমাপ করা হয়।

চ্যাটজিপিটি বুদ্ধিমত্তা পরিমাপের জন্য বিখ্যাত এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রথম এআই। মূলত কোনো যন্ত্র বা প্রযুক্তি সত্যিকারের বুদ্ধিমান কি না, তা জানতে এ পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় মানুষের সঙ্গে যন্ত্রের আলাপের সুযোগ দেওয়া হয়। আলাপ পরীক্ষা করে বোঝা হয়, মানুষ কথা বলছে না মেশিন কথা বলছে। কম্পিউটারের মানুষের মতো বুদ্ধি আছে কি না, তা দেখার জন্য তৈরি করা হয়েছিল এই পরীক্ষা।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সান ডিয়েগোর বিজ্ঞানীরা চ্যাটজিপিটি ৪ মডেলের পরীক্ষা নেন। সাধারণভাবে এ পরীক্ষায় একজন মানুষ প্রশ্নকর্তা এআই ও আরেকজন ব্যক্তিকে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে থাকেন। প্রশ্নকর্তা জানেন না কে মানুষ, কে যন্ত্র। এআই প্রশ্নকর্তাকে মানুষের মতো উত্তর দিতে সক্ষম হলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। গবেষকেরা ৫০০ জন অংশগ্রহণকারীকে ৩টি এআই ও একজন মানুষের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেন। চ্যাটজিপিটি-৪, চ্যাটজিপিটি-৩.৫ নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। একই সঙ্গে এলিজা নামের ১৯৬০ সালে তৈরি একটি চ্যাটবটও এ পরীক্ষায় অংশ নেয়। ৫০০ অংশগ্রহণকারীকে খুঁজে বের করতে হয় কে এআই আর কে মানুষ। অংশগ্রহণকারীরা পাঁচ মিনিট আলাপের সুযোগ পান।

পরীক্ষায় দেখা যায়, ২২ শতাংশ সময়ের মধ্যে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা ষাটের দশকের এআই এলিজাকে চিনে ফেলেন। আর চ্যাটজিপিটি-৩.৫ প্রায় ৫০ শতাংশ সময় কথোপকথন চালিয়ে যেতে সক্ষম ছিল। আর চ্যাটজিপিটি-৪ মডেলকে ৫৪ শতাংশ সময় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা মানুষ বলে মনে করেছে।

চমকের বিষয় হচ্ছে, সত্যিকারের মানুষকে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা ৬৭ শতাংশ কথোপকথনে মানুষ বলে মনে করেছে। প্রথমবারের মতো কোনো যন্ত্র বা এআই অ্যালান টুরিংয়ের কল্পনাকে ছাপিয়ে টুরিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার্সের (আইইইই) গবেষক নেল ওয়াটসন বলেন, যন্ত্র জল্পনাকল্পনাও তৈরি করতে পারে। মানুষের মতো যুক্তি দিয়ে কথা বলতে পারছে। অনেক সময় মানুষের মতো করে ভাবতে পারছে এআই।

গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা চ্যাটজিপিটিকে নিয়ে প্রথম টুরিং পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। সেই পরীক্ষাতেও চ্যাটজিপিটির ফলাফল ভালো ছিল।

সূত্র: ডেইলি মেইল