কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিন দিন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে আরও বেশি জড়িয়ে পড়ছে। কাজকে সহজ করা, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো ও সৃজনশীলতাকে আরও উন্নত করায় এআই বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ব্যক্তিগত ব্যবহারে বা বিভিন্ন পেশার ক্ষেত্রে এআইয়ের ক্ষমতা সাধারণ কাজ থেকে শুরু করে জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন দিক খুলে দিচ্ছে। ব্যক্তিগত কাজ ও কিছু পেশায় এআই কীভাবে ব্যবহার করা যায় এবং দক্ষতা বৃদ্ধি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হিসেবে এআইকে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা এখানে তুলে ধরা হলো।
স্মার্ট হোম: এআই প্রযুক্তির ভার্চ্যুয়াল সহকারীর ব্যবহার প্রতিনিয়তই বাড়ছে। ঘরের স্মার্ট যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ, বার্তা পাঠানো, বিভিন্ন রিমাইন্ডার দেওয়া, গান বাজানোর মতো কাজগুলো সম্পন্ন করতে সাহায্য করে এআই সহকারী। ব্যবহারকারীর পছন্দ-অপছন্দ শিখে সেই অনুযায়ী কাজ করে এআই।
ব্যক্তিগত সুপারিশ: এআই অ্যালগরিদম ব্যবহারকারীর ডেটা বিশ্লেষণ করে সিনেমা, সংগীত থেকে শুরু করে পণ্য, পরিষেবা পর্যন্ত সবকিছুতেই সুপারিশ দিতে পারে। এটি ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে তোলে এবং নতুন আগ্রহ আবিষ্কার করতে সাহায্য করে।
অনুবাদ: এআইয়ের অনুবাদ ভাষা যোগাযোগ আরও সহজ করে তুলেছে। রিয়েলটাইম অনুবাদ অ্যাপ ও সফটওয়্যার ভ্রমণ, ব্যবসায়িক আদান-প্রদান ও সাংস্কৃতিক বিনিময় সহজতর করতে পারে।
শিক্ষা ও শিক্ষণ: এআইয়ের প্রশিক্ষণ ব্যক্তিগত শিক্ষার অভিজ্ঞতা দেয়। এর সাহায্যে স্বয়ংক্রিয় প্রশ্নোত্তর ও শিক্ষার্থীর প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে শিক্ষার উপকরণ ও প্রশিক্ষণপদ্ধতিতে উন্নয়ন করা যায়।
স্বাস্থ্য ও সুস্থতা: কাজ, হাঁটা, ঘুম ও শরীরচর্চা ইত্যাদির তথ্য সংরক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুপারিশ দেওয়ার চল রয়েছে অনেক দিন থাকেই। এআইয়ের সমন্বয়ে পরামর্শ ও সুপারিশগুলো আরও কার্যকর করা যায়। বিশেষত দীর্ঘদিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে অসুস্থতা দ্রুত শনাক্তকরণে সহায়তা করতে পারে এআই।
স্বাস্থ্যসেবা: স্বাস্থ্যসেবা খাতে এআইয়ের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। এটি রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পরিকল্পনা ও ওষুধ আবিষ্কারের উন্নয়নে সাহায্য করছে। এআই টুলগুলো বিশাল পরিমাণের চিকিৎসা তথ্য বিশ্লেষণ, চিকিৎসাচিত্র বিশ্লেষণ করতে পারে। ফলে সম্ভাব্য চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া ও রোগ নির্ণয়ের নির্ভুলতা উন্নত করতে সাহায্য করে এটি।
শিক্ষা: শিক্ষাক্রমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা উন্নয়নে এআই সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এআই ব্যবহার করে শিক্ষার্থীর অগ্রগতি ও কর্মক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে পাঠগুলো বুঝে নেওয়া যায়, যা শিক্ষাকে আরও কার্যকর করে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য এআইভিত্তিক পর্যবেক্ষণ ও শিক্ষা পরামর্শ বেশ সহায়ক।
গ্রাহকসেবা: এআই প্রযুক্তির চ্যাটবট ও ভার্চ্যুয়াল সহকারী সব সময় (২৪/৭) অনলাইনে সেবা প্রদান করে, সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেয়, কেনাকাটায় ব্যবহারকারীকে নির্দেশনা দেয় এবং বিভিন্ন অভিযোগ পর্যালোচনা করে।
বিপণন ও বিক্রয়: বিভিন্ন বাজার ধরে পণ্য ব্যবস্থাপনা, ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর নির্ভর করে বিপণনের প্রচারণা বা বিজ্ঞাপন তৈরি ও বিক্রয়কৌশল নির্ধারণ করে দিতে পারে এআই টুলগুলো। পূর্বাভাস ও পূঁজিবাজারে ধারা বোঝার জন্যও এআইভিত্তিক টুল কার্যকর। পাশাপাশি ব্যবহারকারীর তথ্য ও আগের কেনাকাটার ওপর ভিত্তি করে পণ্যের পরামর্শ দেয় এআই, যা বিক্রয় বাড়ায় ও গ্রাহকের সন্তুষ্টি উন্নত করে।
অর্থ: জালিয়াতি শনাক্তকরণ, ঝুঁকি মূল্যায়ন, অ্যালগরিদম ব্যবহার করে বাণিজ্য ও ব্যক্তিগত আর্থিক পরিকল্পনার জন্য সহায়ক হিসেবে এআই ব্যবহৃত হয়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এআই ব্যবহার করে লেনদেন পর্যবেক্ষণ এবং অস্বাভাবিক লেনদেন ও প্রতারণা শনাক্ত করে।
উৎপাদন: উৎপাদনব্যবস্থায় দক্ষতা বাড়াতে, ব্যয় কমাতে ও পণ্যের মান উন্নত করতে পারে এআই। পণ্য ও কাঁচামাল সরবরাহ, পর্যবেক্ষণ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সম্ভাব্য পরিস্থিতি বিষয়ে পরামর্শও দিতে পারে এআই।
লেখালেখি ও নকশা: সৃজনশীল কাজের ক্ষেত্রে এআইয়ের ব্যবহার বেশ লক্ষণীয়। নির্দিষ্ট একটি ধারণা বা সূত্র থেকে লেখা, ছবি ও নকশা তৈরি করে দিতে পারে এআই। সরাসরি এআই দিয়ে তৈরি না করা হলেও দ্রুততম সময়ে একটি চিন্তা বা পরিকল্পনার একটি দৃশ্যরূপ দেখা যায়। এআইয়ের পরামর্শে তৈরি বা এআইয়ের পরামর্শের ওপর ভিত্তি করে সৃজনশীল ব্যক্তিরা নতুন নতুন কাজ সৃষ্টি করে যাচ্ছেন।
যদিও এআই অনেক সুবিধা দেয়, তবু গোপনীয়তা লঙ্ঘন, পক্ষপাত ও চাকরি হারানোর মতো বিষয়গুলোও এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। প্রতিনিয়তই এআইভিত্তিক নতুন নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচিত হচ্ছে। তবে এআইয়ের বিকাশ যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন কার্যকর নীতিমালা। অনিয়ন্ত্রিত এআইয়ের ব্যবহার নানা ক্ষতির কারণও হতে পারে।
এআই এখন আর ভবিষ্যতের কল্পনা নয়, এটি বাস্তব হাতিয়ার, যা ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনকে উন্নত করতে পারে। গৃহস্থালির কাজ পরিচালনা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আর্থিক খাতের মতো জায়গায় তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে এআই দক্ষতা, নির্ভুলতা ও সৃজনশীলতার পরিচয় দিতে শুরু করেছে। এআই ক্রমাগত উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর সম্ভাব্য প্রয়োগের ক্ষেত্রগুলো আরও বাড়বে, যা ব্যক্তিগত ও পেশাদার কাজে সহায়ক হবে এবং নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে।