জেনারেটিভ এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি নিয়ে অনেকের ধারণা ছিল, এটি মানুষকে সৃজনশীল কাজে সহায়তা করবে। মানুষকে সহায়তা করলেও তার কাজকে প্রতিস্থাপন করবে না। কিন্তু হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউর সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, এআই শুধু সহায়ক নয়, বরং তা সরাসরি মানুষের কাজ দখল করে চাকরির বাজার আরও সংকুচিত করে তুলছে। চ্যাটজিপিটি বাজারে আসার পর মানুষের জন্য লেখালেখির চাকরি ৩০ শতাংশ ও প্রোগ্রামিংয়ের চাকরি ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আর গত একবছরে ডিজাইনারের চাকরির বিজ্ঞপ্তি কমেছে ১৭ শতাংশ। এই পরিবর্তনগুলো হঠাৎ ঘটছে না, বরং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এই প্রবণতা আরও বাড়বে।
চ্যাটজিপিটি আসার পর লেখালেখির কাজ কমে গেছে ৩০ শতাংশ। বিষয়টি এমন নয় যে আগের তুলনায় আধেয় বা কনটেন্টের চাহিদা কমেছে। উপরন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আগের থেকে আরও বেশি অনেক কনটেন্ট চায়। কিন্তু এআই আসার পর মানব লেখক দিয়ে লেখানোর প্রবণতা কমে গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন চ্যাটজিপিটির মতো এআই সফটওয়্যার দিয়ে যেকোনো লেখার খসড়া তৈরি, পর্যালোচনা ও লেখার কাঠামো তৈরির কাজ করিয়ে নিচ্ছে। বলা হচ্ছে, এআইয়ের সাহায্যে যেকোনো কাজ দ্রুত করা যায় এবং খরচও কমে। তাই বাড়তি সুবিধার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো সত্যিকারের লেখকের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। ফলে অনেক ফ্রিল্যান্স লেখক কাজ হারাচ্ছেন। আর যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা আগের তুলনায় অনেক কম প্রকল্প পাচ্ছেন। বলা হচ্ছে, চ্যাটজিপিটি এখন সরাসরি প্রতিযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
লেখালেখির মতো সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়নের চাহিদাও কমে গেছে। হার্ভার্ডের গবেষণায় দেখা গেছে, চ্যাটজিপিটি আসার পর থেকে প্রোগ্রামিং বা কোডিং-নির্ভর চাকরি ২০ শতাংশ কমেছে। একসময় কোডিং ছিল নিরাপদ পেশা। কিন্তু এআই এখন কোড লেখা, ত্রুটি সংশোধন, এমনকি সম্পূর্ণ অ্যাপ তৈরি করতে পারছে, যা একসময় দক্ষ প্রোগ্রামারদের দিনরাত খেটে করতে হতো। এখন এআই সেই কাজ কয়েক মিনিটেই করে দিচ্ছে। এ কারণে বাজারে কোডিং পেশায় প্রতিযোগিতা বেড়ে যাচ্ছে এবং চাকরির সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে।
ডিজাইনের কাজেও এআইর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এআইয়ের দাপট এখন গ্রাফিক ডিজাইন থেকে শুরু করে ত্রিমাত্রিক মডেলিংয়েও। ডাল-ই-২ এবং মিডজার্নির মতো এআই টুল এখন উন্নত মানের ছবি তৈরি করতে সক্ষম। আগে এসব কাজ সৃজনশীল ডিজাইনারদের দখলে ছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন এআই টুল ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েই পছন্দের ছবি বা দৃশ্য তৈরি করে নিচ্ছে। ফলে ডিজাইনারদের চাহিদা কমে গেছে। গত এক বছরে এ খাতে ১৭ শতাংশ কম চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাকরির বাজারে এই পরিবর্তন আরও শঙ্কা তৈরি করছে। এ গবেষণার ফলাফল এটা স্পষ্ট করে দেখিয়ে দেয়। আগে শ্রমবাজারে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির প্রভাব পড়তে কয়েক বছর কিংবা এক দশক লাগত। কিন্তু এখন জেনারেটিভ এআইয়ের প্রভাব এতই ব্যাপক যে এআই টুল আসার কিছুদিন পর থেকেই শ্রমবাজারে এর প্রভাব স্পষ্ট হচ্ছে।
হার্ভার্ডের গবেষণা বলছে, জেনারেটিভ এআই মানুষের প্রচলিত কাজগুলোর সঙ্গে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করছে। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানবিক কাজের পরিধি সংকুচিত হচ্ছে। একসময় যেসব কাজকে সৃজনশীল ও জটিল মনে করা হতো, সেসবেই এআই দক্ষ হয়ে উঠছে। তাই কর্মীদের এখন নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে নতুন ধরনের কাজের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
সূত্র: ইন্ডিয়াটুডে ডটইন