দেশের কৃষিকাজের উন্নয়নে এই সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। আজ সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে উন্নত কৃষিকাজের জন্য এআই এবং আইওটি ব্যবহার’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এই আহ্বান জানান। দেশি প্রযুক্তি উদ্যোগ ইএটিএল ইনোভেশন হাব লিমিটেড এবং ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারভিত্তিক সালফোরড বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে সালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ন্যান্সি কুক বলেন, ‘বর্তমান পৃথিবীর সমস্যাগুলো একা একা সমাধান করা সম্ভব নয়। অংশীদারির ভিত্তিতে সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশ বন্যার মতো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অসাধারণ। যতবারই আমরা এ দেশে আসি, ততবারই বন্যা মোকাবিলায় নতুন কিছু শিখি।’
সেমিনারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘প্রতিবছর দেশে প্রায় ১ শতাংশ কৃষিজমি কমছে। তবু চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ পৃথিবীতে তৃতীয়। এর কারণ, আমরা প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত হয়েছি। জাইকার সহায়তায় মানিকগঞ্জে ধানি জমির মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে। মাটির গুণাগুণ বুঝতে আমরা স্যাটেলাইট ব্যবহার করছি।’
সালফোরড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ ফ্যাকাল্টির অধ্যাপক প্রফেসর মঁ সারে বলেন, মেশিন লার্নিং পদ্ধতি দিয়ে মূলত অতীতের প্রচুর তথ্য ঘেঁটে প্যাটার্ন খুঁজে বের করা হয়। এর ফলে পূর্বাভাস দেওয়া যায়। এ কারণেই কৃষিকাজে বিশেষজ্ঞ না হয়েও মেশিন লার্নিং দিয়ে কৃষিবিষয়ক কাজ করা যায়। মাটির পুষ্টির অবস্থা, পোকামাকড়ের আক্রমণ, জলবায়ু পরিবর্তন-এসব বিষয়ে মেশিন লার্নিং কার্যকর হবে। তিনি সালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিএসএআই হাব নামের ডেটাসায়েন্স ও এআই কেন্দ্রের গবেষণা কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, শক্তির রূপান্তরের একক ‘জুল’ যাঁর নামে, সেই ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ জেমস প্রেসকট জুলের বাড়িও এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ।
সেমিনারে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন সালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক মোহাম্মদ হাম্মাদ সালিম। তিনি সালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি ফসলের উৎপাদন পর্যবেক্ষণ করার মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন দেখান। তিনি বলেন, এই অ্যাপ সার ও পানির অপচয় রোধ করবে। ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমবে। এ ছাড়া এটি রোগ প্রতিরোধ ও পোকামাকড় রোধেও কার্যকর হবে।
ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসের মধ্যপ্রাচ্যের মুখ্য প্রযুক্তিবিদ শিবগামি গুগান বলেন, স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে কোন জমিতে কী ফসল কী পরিমাণে উৎপাদিত হচ্ছে, তা জানা যায়। জমির সীমানা বোঝা যায়। অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসের এ রকম একটি সফটওয়্যার রয়েছে। এটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উপযোগী।
সেমিনারে বক্তারা আরও বলেন, মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে গাছের রোগ, পানির প্রয়োজনীয় পরিমাণ, কতখানি ফসল ফলবে-এসব থেকে শুরু করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস আরও নিখুঁতভাবে দেওয়া যায়। এর সঙ্গে আইওটি ও রিমোট সেন্সিং (দূর অবলোকন) যুক্ত করা গেলে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ভালোভাবে নিশ্চিত করা যাবে। এথিকস অ্যাডভান্সড টেকনোলজিস লিমিটেড (ইএটিএল) এই ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করছে বলে সেমিনারে জানানো হয়।
সেমিনারের সভাপতি ইএটিএল ইনোভেশন হাব লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. মো. আব্দুল করিম বলেন, বাংলাদেশের মানুষ প্রগতিশীল। এ ছাড়া বাংলাদেশ বিনিয়োগবান্ধব। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ফসলি জমি কমছে। তাই পরিমিত পানি ব্যবহার করতে হবে। ফসলকে রোগ থেকে রক্ষা করতে হবে। এসব কারণে এআই, আইওটি ও রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তিতে আমাদের অভ্যস্ত হতে হবে।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে ইএটিএল ইনোভেশন হাব লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মুবিন খান বলেন, ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ পেতে হলে সবাইকে প্রযুক্তি বুঝতে হবে। বিশেষত তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে দেশের কৃষকদের অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে। কারণ, বাংলাদেশের বড় জনগোষ্ঠী কৃষক। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তাঁদের সঙ্গে নিয়েই এগোতে হবে।
সেমিনারের শেষে সালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য মারগারেট রো এবং এম এ মুবিন খান এআই, আইওটি ও রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি বিষয়ে অংশীদারিমূলক একটি চুক্তিপত্রে সই করেন। এই চুক্তির আওতায় গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্কে ইএটিএল ইনোভেশন হাবে গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করবে সালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।