ডেটা সায়েন্স ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই রোগনির্ণয় করা যায়
ডেটা সায়েন্স ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই রোগনির্ণয় করা যায়

গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবায় ডেটা সায়েন্স ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির সম্ভাবনা

বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। চিকিৎসাসেবার অভাবে গ্রামের মানুষ প্রায়ই স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়েন। বিশেষ করে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনাগত সীমাবদ্ধতা এবং চিকিৎসক–সংকট ভোগান্তির একটা কারণ। তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রযুক্তির ব্যবহার হতে পারে কার্যকর।

ডেটা সায়েন্স ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি সম্ভাবনা তৈরি করছে দিন দিন। পৃথিবীর বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে সফলতার আলো দেখতে পেয়েছে। ডেটা সায়েন্স ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোগনির্ণয়, চিকিৎসা–পরামর্শ প্রদান এবং রোগের ভবিষ্যদ্বাণী করা অনেক সহজ ও কার্যকর। এটি গ্রামের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য সমস্যা বিশ্লেষণ করে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা প্রদানে সহায়ক হতে পারে। ডেটা সায়েন্সের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য–সম্পর্কিত বিশাল পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা এবং এর মাধ্যমে তাঁদের সঠিক চিকিৎসাসুবিধা প্রদানের জন্য একটি কার্যকর পরিকল্পনা তৈরি করা সম্ভব।

ভবিষ্যতে আরও স্বয়ংক্রিয় ও স্মার্ট তথ্য–উপাত্ত বা ডেটা সংগ্রহের ব্যবস্থা চালু হলে স্বাস্থ্য সমস্যা আরও দ্রুত ও  নিখুঁতভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে জটিল ডেটা বিশ্লেষণ করা সম্ভব, যা রোগের ধরন, অবস্থান ও রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক।

স্বাস্থ্যসেবার সংকট মোকাবিলায় প্রযুক্তির প্রভাব

প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর প্রধান সুবিধা হলো চিকিৎসা–সংক্রান্ত তথ্যের দ্রুতগতিতে বিশ্লেষণ ও ব্যবস্থাপনা করা। এখন স্মার্টফোনের মাধ্যমে দূর থেকে চিকিৎসা–পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এ ক্ষেত্রে একজন স্বাস্থ্যকর্মী রোগীর তথ্য সংগ্রহ করে ডেটা সায়েন্সভিত্তিক অ্যাপের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঢাকা আহ্‌ছানিয়া মিশনও ব্র্যাক এরই মধ্যে গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের সেবা দেওয়া শুরু করেছে।

এই প্রযুক্তির ব্যবহার বিশেষভাবে মহামারি পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ধরুন, ডেটা সায়েন্স ব্যবহার করে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব এবং তার গতিপথ সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব, যা স্বাস্থ্যকর্মীদের ও সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে। ফলে স্বাস্থ্যসেবা আরও কার্যকর হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করে। ভবিষ্যতে উন্নত মহামারি পূর্বাভাস ব্যবস্থাপনা চালু হলে গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সম্ভব হবে।

ডায়াগনসিস ও টেলিমেডিসিনে মেশিন লার্নিংয়ের প্রভাব

রোগ ডায়াগনসিসের ক্ষেত্রে মেশিন লার্নিং বিশেষভাবে উপকারী। এই প্রযুক্তি বিভিন্ন রোগের ছবি বিশ্লেষণ করে দ্রুত এবং নির্ভুল রোগনির্ণয়ে সহায়তা করে। রেডিওলজির ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের ব্যবহার, যেমন এক্স-রে, সিটি স্ক্যান ও এমআরআই ইমেজ বিশ্লেষণ অত্যন্ত কার্যকর। বাংলাদেশে এর প্রয়োগ ঢাকাসহ কিছু বিভাগীয় শহরে শুরু হয়েছে এবং ভবিষ্যতে গ্রামীণ এলাকায় আরও সম্প্রসারিত করা যাবে, যাতে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
এ ছাড়া টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে গ্রামের মানুষ দূরে থাকা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। ভিডিও কলের মাধ্যমে ডাক্তার রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন এবং পরামর্শ দিতে পারেন। বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগ টেলিমেডিসিন পরিষেবা চালু করেছে, যা প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভবিষ্যতে উন্নত ইন্টারনেট সংযোগ ও প্রযুক্তির প্রসারের মাধ্যমে এই সেবার মান বাড়ানো সম্ভব।

প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

যদিও ডেটা সায়েন্স ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির সম্ভাবনা অনেক, তবে এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।  প্রথমত, গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ এবং স্মার্টফোন ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ ছাড়া মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি সঠিকভাবে কাজ করার জন্য বিশাল ডেটাসেট প্রয়োজন, যা সংগ্রহ করা চ্যালেঞ্জিং। তবে সরকারি উদ্যোগে ইন্টারনেট–সেবার বিস্তৃতি ঘটালে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ জোরালোভাবে চালালে ভবিষ্যতে এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

ভবিষ্যতে ডেটা সায়েন্স ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি আরও উন্নত হয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষের চিকিৎসাব্যবস্থা আরও সহজলভ্য করে তুলতে সক্ষম হবে। এই প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা আরও কার্যকর হয়ে উঠবে।

লেখক: ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পিএইচডি রিসার্চ ফেলো