স্মার্টফোন বেশি গরম হয় তখন, যখন এর ব্যাটারি অতিমাত্রায় কাজ করে। তাই যদি আপনি সব সময় ভাবতে থাকেন, ‘কেন আমার ফোন এত গরম হচ্ছে?’ তাহলে আপনি নিজেই ফোনটির ক্ষতি করবেন। বরং ফোন গরম হওয়ার কারণ, আর এটা ঠান্ডা করার উপায়গুলো জেনে নেওয়া ভালো। এতে ফোনের আয়ু বাড়বে।
আপনি যদি দীর্ঘক্ষণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, তবে এটা একটু গরম হতে পারে। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে অনেক বেশি গরম হয়ে থাকা স্বাভাবিক নয়।
বিভিন্ন কারণে ফোন গরম হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কারণ হিসেবে ফোনের বেশি ব্যবহারের কথা বলা হয়। আরও যেসব কারণে ফোন গরম হয়—
• অনেকক্ষণ ধরে স্ট্রিমিং ভিডিও দেখা।
• গেমস খেলা।
• স্মার্টফোনের উজ্জ্বলতা সর্বোচ্চ মাত্রায় রাখা।
• পুরোনো অ্যাপ বা সফটওয়্যারের ব্যবহার।
• গরম জায়গায় বা সূর্যের আলোয় সরাসরি ফোন রাখা।
গরম হওয়ার সাধারণ কারণের সঙ্গে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে আরেকটি কারণ যোগ হয়। সেটি হলো ভাইরাস বা ম্যালওয়্যারের কারণে গরম হওয়া। আইফোনে ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার আক্রমণের ঘটনা বিরল। কারণ, আইফোনের নির্মাতা অ্যাপল কখনো নিজেদের বাইরের নির্মাতার তৈরি সফটওয়্যার ব্যবহারের অনুমতি দেয় না।
বেশি গরম হওয়া থেকে অ্যান্ড্রয়েড ফোন বাঁচাতে এতে বিশ্বস্ত উৎসের অ্যান্টি–ভাইরাস ইনস্টল করতে হবে।
ফোন যাতে বেশি গরম না হয়, সে ব্যবস্থা নিলে আপনার ফোন বেশি দিন ভালো থাকবে। ফোনের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ধরে রাখতে নিচের টিপস অনুসরণ করা যেতে পারে।
স্মার্টফোনের সব অ্যাপের হালনাগাদ সংস্করণ ব্যবহার করুন। বাগ (প্রোগ্রামিং ত্রুটি) থাকলে কিংবা পুরোনো সফটওয়্যার হলে অ্যাপ চলতে বেশি শক্তি খরচ হয়। এতে ফোন গরম হয়ে যায়। অ্যাপ ও সফটওয়্যার নিয়মিত হালনাগাদ করলে প্রোগ্রামের ত্রুটি দূর হয় এবং ফোনের শক্তি যথাযথভাবে ব্যবহার হয়। ফলে ব্যাটারির ওপর বাড়তি চাপ পড়ে না।
সূর্যের আলো সরাসরি স্মার্টফোনে পড়লে ফোনের ভেতরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়। বাইরে যখন থাকবেন, তখন ফোন ছায়ায় রাখার চেষ্টা করুন। ব্যাগ বা পোশাকের ঢিলে পকেটে রাখতে পারেন।
বালিশ, বিছানা, কুশন বা এমন অসমতল নরম কোনো কিছুর ওপর ফোন রেখে চার্জ দিলে এর তাপমাত্রা বেড়ে যায়। চার্জ করার সময় মুঠোফোন তাপ বের করার পথ খোঁজে। তাই যখন চার্জার লাগিয়ে চার্জ করবেন, তখন মুঠোফোন শক্ত, সমতল ও শীতল স্থানে রাখা উচিত।
ভেতরে-ভেতরে (ব্যাকগ্রাউন্ড) চলা অ্যাপগুলো শক্তি খায়। তাই ফোন গরম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যখন কোনো অ্যাপে কাজ করবেন না, তখন এটি থেকে শুধু এক্সিট হলে হবে না, পুরোই বন্ধ করে দিতে হবে।
যদি আরও ভালো ফল পেতে চান, তবে অব্যবহৃত অ্যাপগুলো মুছে ফেলুন।
মনে হতে পারে, এটা কোনো বড় বিষয় নয়, তবে সত্য হলো স্মার্টফোনের পর্দার উজ্জ্বলতা এর শক্তি ক্ষয় করে। আর যত বেশি শক্তি ক্ষয় হবে, ফোন তত বেশি গরম হয়ে উঠবে। শক্তি বাঁচাতে ফোনের পর্দার ঔজ্জ্বল্য কমিয়ে রাখুন। এতে আপনার চোখের ওপরও চাপ কমবে।
অ্যান্ড্রয়েড ফোনের বেলায় ভাইরাস ফোনে থাকা সফটওয়্যারের ওপর হামলা চালায়। ফলে স্মার্টফোন বেশি গরম হয়ে যায়। এ কারণে ফোনে অ্যান্টিভাইরাস ইনস্টল করা উচিত। অ্যান্টিভাইরাস ম্যালওয়্যার ঠেকাবে, অ্যান্ড্রয়েড ফোনের নিরাপত্তাও দেবে।
যদি সময় দেখা, অ্যালার্ম দেওয়ার মতো ফোনের অল্প কিছু কাজ করলেই চলে, তবে এয়ারপ্লেন মোড সক্রিয় করুন। এটি সার্বক্ষণিক কাজ করা থেকে ফোনকে একটু বিশ্রাম দেবে।
হঠাৎ হঠাৎ ফোন গরম হলে তেমন পাত্তা না দিলেও চলবে। যদি ফোন এমন গরম হয় যে ছোঁয়া যাচ্ছে না কিংবা ফোনে ‘এরর’ বার্তা আসে, তবে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। ফোন ঠান্ডা করতে যা করতে হবে—
গরম বা সূর্যালোক থেকে দূরে রাখুন। ফোনটি শুষ্ক ও শীতল জায়গায় রাখুন। ফোন কখনোই ফ্রিজার বা রেফ্রিজারেটরে রাখা যাবে না।
জোরে বাতাস বইছে এমন জায়গায় ফোন রাখলে দ্রুত ঠান্ডা হবে। ফ্যানের নিচে রাখতে পারেন। আবার হ্যান্ড ব্লোয়ার দিয়েও বাতাস দিতে পারেন।
অন্য যন্ত্র থেকে ফোন দূরে রাখুন। সব যন্ত্রই গরম হতে পারে এবং গরম বাতাস ছাড়তে পারে। তাই ফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপ এক ব্যাগে রাখা উচিত নয়।
ফোনের খাপ খুলে ফেলুন। গরম হয়ে ওঠা ফোনের কভার বা খাপ হলো ফাঁদের মতো। যদি দেখেন ফোন গরম হয়ে উঠছে, খাপের ওপর থেকেও তা বোঝা যাচ্ছে, তবে দ্রুত খাপ খুলে ফেলতে হবে। ফোন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফিরে না আসা পর্যন্ত খাপ পরানো যাবে না।
ফোন বন্ধ রাখুন। বেশি গরম হয়ে গেলে ফোন ঠান্ডা করার সময় এটি বন্ধ করে দেওয়া ভালো।
সূত্র: নরটন ডটকম