ব্যবহারকারীর পরিচয় যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন অনলাইন সেবা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সেলফি অথেনটিকেশন–পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। এ পদ্ধতিতে ব্যবহারকারীদের আপলোড করা সেলফির সঙ্গে নিজেদের সার্ভারে থাকা ছবি মিলিয়ে অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে কোনো ব্যক্তির পাসওয়ার্ড চুরি হলেও অন্য কেউ সেই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারেন না। চেহারা শনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত সেলফি অথেনটিকেশন–পদ্ধতি বেশ নিরাপদ মনে হলেও বড় ধরনের নিরাপত্তাঝুঁকির কারণ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। সেলফি অথেনটিকেশন প্রতারণার ধরন এবং নিরাপদ থাকার কৌশলগুলো দেখে নেওয়া যাক।
ডিপফেক ভিডিও তৈরি
সেলফি অথেনটিকেশন প্রতারণা করার জন্য সাইবার অপরাধীরা সাধারণত বিভিন্ন অনলাইন সেবা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ভুয়া ই-মেইল পাঠিয়ে থাকে। সেলফি অথেনটিকেশন–পদ্ধতি চালুর জন্য ই-মেইলে একটি লিংকও দেয় তারা। লিংকটিতে ক্লিক করে এক বা একাধিক সেলফি আপলোড করলেই সেগুলো চলে যায় সাইবার অপরাধীদের সার্ভারে। এরপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে ছবিগুলো দিয়ে ভুয়া বা ডিপফেক ভিডিও তৈরি করে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা করে তারা।
অনলাইন অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণ
বিভিন্ন কৌশলে সেলফি সংগ্রহের পরপরই সেগুলো কাজে লাগিয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে প্রবেশের চেষ্টা করে সাইবার অপরাধীরা। অ্যাকাউন্টে প্রবেশের সময় সেই ব্যক্তির এক বা একাধিক সেলফি ব্যবহার করায় বিভিন্ন অনলাইন সেবা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যবহৃত সেলফি অথেনটিকেশন প্রযুক্তি শনাক্ত করতে পারে না। এর ফলে ব্যবহারকারীদের অজান্তেই তাদের অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় সাইবার অপরাধীদের দখলে।
সেলফি অথেনটিকেশন প্রতারণা থেকে নিরাপদ থাকার উপায়
সেলফি অথেনটিকেশন প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে হলে অপরিচিত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পাঠানো ই-মেইলের লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি দেওয়ার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে।
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার
পাসওয়ার্ড হ্যাক হওয়া থেকে রক্ষা পেতে চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করেন অনেকেই। তবে সেলফি অথেনটিকেশন প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তির বদলে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। পাসওয়ার্ডে অবশ্যই বড়-ছোট অক্ষরসহ বিভিন্ন সিম্বল ও সংখ্যা লিখতে হবে। নিরাপত্তা গবেষকদের তথ্যমতে, অন্তত ১৫ অক্ষরের পাসওয়ার্ড তৈরি করা সব থেকে নিরাপদ। একই পাসওয়ার্ড একাধিক অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত ছবি পোস্ট করেন অনেকেই। এসব ছবিতে থাকা চেহারা কাজে লাগিয়ে সাইবার অপরাধীরা নির্দিষ্ট ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ বিভিন্ন অনলাইন অ্যাকাউন্টের দখল নিতে পারে। আর তাই নিজের ব্যক্তিগত ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়ার আগে দেখে নিতে হবে সেটি পাবলিক, ফ্রেন্ডস, নাকি কোনো বিশেষ গ্রুপের জন্য শেয়ার করছেন। ব্যক্তিগত ছবি পাবলিক না করাই ভালো। পাবলিক মানে হলো আপনার বন্ধুতালিকায় না থাকা মানুষেরাও সেই ছবি দেখতে পারবেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া