ফ্রিল্যান্স কাজে পেশাদারত্ব প্রয়োজন
ফ্রিল্যান্স কাজে পেশাদারত্ব প্রয়োজন

ফ্রিল্যান্স কাজে পেশাদারত্ব

ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। এ মুক্ত পেশায় তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি। ঘরে বসে বিদেশের তথ্যপ্রযুক্তির নানা কাজ করে আয় করেন ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবীরা। কিন্তু শুরু কীভাবে করতে হবে, ফ্রিল্যান্সার থেকে কী জানতে হবে—এ নিয়ে দ্বিধা অনেকের। অনেকে সঠিক দিকনির্দেশনাও পান না। ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে—এমন পাঠকদের জন্য শুরু হলো ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ‘ফ্রিল্যান্সিং যেভাবে’। আজ থাকছে ২১তম পর্ব।

পর্ব-২১

আপনার মধ্যে পেশাদারত্ব না থাকলে যে কাজই করেন না কেন, সফল হতে পারবেন না। এ জন্য কাজকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি আপনার আচরণ ও মনোভাবে বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। শুধু ক্লায়েন্টের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলতে পারলেই হবে না, কাজে পেশাদারত্ব আনতে হলে আপনাকে দক্ষ হওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু গুণ অর্জন করতে হবে। পেশাদারত্ব তৈরির জন্য যেসব গুণ প্রয়োজন, সেগুলো দেখে নেওয়া যাক।

কাজের সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করা শিখতে হবে। ১৫ মিনিট কাজের পর ৩০ মিনিট ফেসবুক বা ইউটিউব ব্যবহার করলে সেটা কখনো পেশাদার আচরণ হতে পারে না। এভাবে কাজের সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি দক্ষতাও কমতে থাকে। তাই কাজের সময় অপ্রয়োজনীয় কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা যাবে না।

ভালোভাবে কাজ শেষ করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করার দক্ষতা থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, নিজ থেকে উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষমতা পেশাদারত্ব বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর পাশাপাশি ক্লায়েন্টের কাছে কাজ জমা দেওয়ার আগে নিয়মিত কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে হবে।

বার্তা বা ই–মেইলের উত্তর সময়মতো পাঠানোও পেশাদারত্বের অন্যতম গুণ। এ জন্য কাজ শুরুর আগেই ক্লায়েন্টকে জানিয়ে রাখবেন, কোন সময়ে আপনাকে অনলাইনে পাওয়া যাবে। ফলে ক্লায়েন্টদের পাঠানো বার্তা এবং ই–মেইলের উত্তর আপনার পক্ষে দেওয়া সহজ হবে। তবে মার্কেটপ্লেসে কাজ করার সময় ক্লায়েন্ট বার্তা বা ই–মেইল পাঠালে সঙ্গে সঙ্গে বিস্তারিত তথ্য জানানোর দরকার নেই। প্রথমে ক্লায়েন্ট কোন তথ্যগুলো জানতে চাচ্ছেন, সে বিষয়ে ভালোভাবে জানার পর ই–মেইলের উত্তর দিতে হবে। প্রয়োজনে আপনি সময়ও নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনি লিখতে পারেন, ‘আমি তোমার ই–মেইল পেয়েছি এবং এ বিষয়ে আমি পরে (সুবিধাজনক সময়) তোমার প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর দেব।’

কাজে পেশাদারত্ব আনতে হলে কখনোই আবেগপ্রবণ হওয়া যাবে না। এমনকি আবেগপ্রবণ হয়ে কোনো সিদ্ধান্তও গ্রহণ করবেন না। ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে আমরা যাঁদের সঙ্গে কাজ করি, তাঁদের সঙ্গে আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক, ধর্মসহ বিভিন্ন বিষয়ে পার্থক্য রয়েছে। তাই কাজ করার সময় ক্লায়েন্টের কোনো কথা বা মন্তব্যে মনে কষ্ট পাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করলেও শুধু কাজ নিয়েই আলোচনা করতে হবে। এতে আপনার পেশাদারত্ব বৃদ্ধি পাবে।
চ্যালেঞ্জকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করা শিখতে হবে। পেশাদারত্ব গড়ে তুলতে বিভিন্ন সমস্যা থেকে গঠনমূলক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। কাজ করার সময় যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।

সঠিক পদ্ধতিতে যোগাযোগের দক্ষতা পেশাদারত্ব গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ জন্য সঠিক সময়ে কাজের হালনাগাদ তথ্য নিজ থেকেই ক্লায়েন্টকে জানাতে হবে। ক্লায়েন্টের মিটিংয়েও সঠিক সময়ে অংশ নিতে হবে। কোনো কারণে মিটিংয়ে অংশ নিতে না পারলে ক্লায়েন্টকে আগেই জানাতে হবে। এমনকি নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সে বিষয়েও ধারণা দিতে হবে ক্লায়েন্টকে। ফলে ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হবে না।

ক্লায়েন্টের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলার সময় স্বচ্ছন্দ্যে এবং সাবলীলভাবে নিজের দক্ষতা এবং কাজের তথ্য তুলে ধরতে হবে। তবে এ সময় অবশ্যই ভালোমানের শব্দ নিশ্চিত করার পাশাপাশি আপনার পেছনের ছবি ভালো হতে হবে।

কাজ করার পর পারিশ্রমিক কম পেলে অবশ্যই মার্কেটপ্লেসের সহায়তা দলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। অনেকে কাজ করার পর টাকা না পেলে মন খারাপ করেন বা অভিমানে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। কিন্তু এটি পেশাদারত্বের লক্ষণ নয়। আপনাকে যদি কেউ এক ডলারও কম পারিশ্রমিক দেয়, তাহলেও আপনাকে অভিযোগ করতে হবে। মার্কেটপ্লেসে অনেক সময় দেখা যায়, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ জমা দিলেও কাজ ভালো হয়নি বলে জানায় ক্লায়েন্ট। কেউ আবার বলেন, বর্তমানে কাজটির প্রয়োজন না থাকায় আপনাকে পারিশ্রমিক দেওয়া হবে না। তবে এতে চিন্তার কিছু নেই, ক্লায়েন্টের নির্দেশমতো কাজ শেষ করায় আপনি অবশ্যই পারিশ্রমিক দাবি করতে পারেন। এ জন্য প্রথমে ক্লায়েন্টকে ভালোভাবে বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। যদি তিনি রাজি না হন তবে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। মার্কেটপ্লেসের সহায়তা দলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

লেখক: আপওয়ার্ক টপ রেটেড প্লাস ফ্রিল্যান্সার

পরের পর্ব: দীর্ঘমেয়াদি ক্লায়েন্ট তৈরি করবেন যেভাবে