ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে সারা বিশ্বেই উন্মাদনা রয়েছে। আর তাই বিভিন্ন ধরনের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় বিনিয়োগ করেন বিনিয়োগকারী। গত দশকে বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অনেকেই কোটিপতি হয়েছেন। বিটকয়েন চালুর প্রথম দিকে বিনিয়োগকারীরা বিকেন্দ্রীকরণের নীতি ও ক্রিপ্টোকারেন্সির পিয়ার-টু-পিয়ার আর্থিক ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। বিটকয়েনসহ বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সির অস্থির বাজারমূল্যের কারণে অনেক বিনিয়োগকারী সরে গেছেন। তারপরও বিটকয়েনের কারণে কোটিপতি হচ্ছেন অনেক আলোচিত ব্যবসায়ী। ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত শীর্ষ পাঁচ বিটকয়েন কোটিপতির নামের তালিকা প্রকাশ করেছে বিটিনফোচার্টস। সেই দিনের হিসাবে ১টি বিটকয়েনের দাম ছিল ৪১ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার। ফলে যাঁর কাছে ২৪টি বিটকয়েন রয়েছে, তাঁকেই বিটকয়েন মিলিয়নিয়ার বা কোটিপতি বলা যায়। সে তালিকার শীর্ষ পাঁচজনের কথা জেনে নিন।
মার্কিন উদ্যোক্তা মাইকেল সেলর
মাইকেল সেলর একজন মার্কিন উদ্যোক্তা। তিনি বিটকয়েন অ্যাডভোকেট হিসেবে আলোচিত। বিটকয়েনের সবচেয়ে বড় মালিকদের একজন হিসাবে পরিচিত সেলর নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মাইক্রোস্ট্র্যাটেজির মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক বিটকয়েনের মালিক হয়েছেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী চেয়ারম্যানের পদে রয়েছেন তিনি। সেলর নিজের প্রতিষ্ঠানের লাভের অর্থ ব্যবহার করে বিটকয়েন কিনে থাকেন। ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের হিসেবে তাঁর কাছে রয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪০০ বিটকয়েন। এর মাধ্যমে তিনি বিটকয়েনের বৃহত্তম করপোরেট ধারক হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠান মাইক্রোস্ট্র্যাটেজির মালিকানায় থাকা বিটকয়েনের মূল্য প্রায় ৬৭৯ কোটি মার্কিন ডলার।
টাইলার ও ক্যামেরন উইঙ্কলেভস
উইঙ্কলেভস যমজদের গল্প বিভিন্ন সামাজিক দুনিয়ার পাতায় চোখে পড়ে। ফেসবুক প্রতিষ্ঠার শুরুতে কানেকইউ নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরি করেন তাঁরা। পরে যমজ ভাইয়েরা মার্ক জাকারবার্গের বিরুদ্ধে অনুকরণের অভিযোগে মামলা করেন। মামলাটি ৬ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারে নিষ্পত্তি হয়। সেই অর্থের কিছু অংশ তাঁরা বিটকয়েনে বিনিয়োগ করেন। উইঙ্কলেভস ভাইয়েরা ২০১৩ সালের এপ্রিলে বিটকয়েন কেনার ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেন। তখন একটি বিটকয়েনের দাম ছিল ১০০ ডলারের কিছু বেশি। ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসাবে, যমজ ভাইয়েরা প্রত্যেকে আলাদাভাবে ৭০ হাজার বিটকয়েনের মালিক, যা প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমান।
ইলন মাস্ক
প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক। তাঁর এক্স অ্যাকাউন্টে একটু চোখ রাখলেই বুঝতে পারবেন, তিনি ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে কতটা আগ্রহী। এমন কোনো সপ্তাহ নেই ইলন ক্রিপ্টো নিয়ে অদ্ভুত কোনো পোস্ট শেয়ার করেননি। নির্দিষ্টভাবে বলা যায়, ইলন বিটকয়েন ও ডজকয়েনে বিনিয়োগকারী। ক্রিপ্টো নিয়ে যাঁরা আগ্রহী, তাঁরা এক্সে (সাবেক টুইটার) ইলন মাস্ককে ২৪ ঘণ্টা অনুসরণ করেন। ইলনের এক্স বার্তার কারণে অনেকবার ক্রিপ্টো–দুনিয়ার দাম উঠা–নামার ঘটনা ঘটেছে। ইলন তাঁর কোম্পানি টেসলার মাধ্যমে বিটকয়েনের মালিক। টেসলার ১৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক ইলন মাস্ক। ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টেসলা ১৮ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের ডিজিটাল সম্পদের মালিক। টেসলা করপোরেট বিনিয়োগনীতির অধীন ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বিটকয়েনে বিনিয়োগ করে। সেই বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২১ সালের মার্চ মাসে টেসলা গাড়ি কেনার জন্য বিটকয়েন পেমেন্ট সুবিধা চালু করে। ইলন তাঁর ব্যক্তিগত বিটকয়েনের হিসেব কখনই প্রকাশ করেননি।
জ্যাক ডরসি
জ্যাক ডরসি খুদে ব্লগ লেখার ওয়েবসাইট এক্সের (সাবেক টুইটার) ও ফিনটেক কোম্পানি ব্লকের সহপ্রতিষ্ঠাতা। ইলন মাস্কের কাছে টুইটার বিক্রির আগে ডরসি টুইটারের প্রধান নির্বাহী পদ থেকে পদত্যাগ করেন। জ্যাক বিটকয়েন–দুনিয়াতে আলোচিত ব্যক্তিত্ব। পিয়ার-টু-পিয়ার পেমেন্ট নেটওয়ার্ক বিটকয়েন ও সোশ্যাল মিডিয়া প্রটোকল নস্ট্র ও গোপনীয়তা-সুরক্ষাকারী ব্রাউজার টরকে সমর্থনের জন্য আলোচিত জ্যাক। জ্যাক তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠান ব্লক থেকে বিটকয়েন কেনাবেচা করেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের ব্লকের ত্রৈমাসিকের প্রতিবেদন অনুসারে প্রতিষ্ঠানটিতে গ্রাহকের ২৪১ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের বিটকয়েন বিক্রি করেছে। ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্লকের কাছে প্রায় ২১ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের বিটকয়েন ছিল।
জাস্টিন সান
জাস্টিন সান আরেকজন ক্রিপ্টো উদ্যোক্তা। তিনি ব্লকচেইন প্রটোকল ট্রন (টিআরএক্স)-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে সর্বাধিক পরিচিত। সান চীনের বেইজিংয়ে অবস্থিত ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান হুওবির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। ব্লকচেইন অ্যানালিটিক্স ফার্ম আরখাম ইন্টেলিজেন্সের হিসেবে ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সানের কাছে ৭ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের ১ হাজার ৬০০ বিটকয়েন রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
সূত্র: টেকোপিডিয়া