চোখ যত দূরে যায়, তত দূরে কি সব দেখা যায়? আকাশের নীল আকাশ পেরিয়ে যে অন্ধকার মহাকাশ সেখানে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে কোটি কোটি ছায়াপথ আর নক্ষত্র। মানবমন হাজার বছর ধরে সেই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই মহাকাশে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ নজর রাখছে দূরের অনেক অচেনা ছায়াপথের ওপর।
সবচেয়ে দূরের এক ছায়াপথ শনাক্ত করছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। আগের খোঁজ পাওয়া দূরের ছায়াপথের নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙেছে জেমস ওয়েব। জেডস-জিএস-জেড১৪-০ নামে পরিচিত ছায়াপথের খোঁজ মিলেছে। সেই ছায়াপথের তারাগুচ্ছের মহাবিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাংয়ের ২ কোটি ৯০ লাখ বছর পরে বিকশিত হওয়া শুরু করে। যদি মহাবিশ্বের বয়স ১ হাজার ৩৮০ কোটি বছর হয়, তাহলে নতুন শনাক্ত করা ছায়াপথটি এমন অবস্থায় আছে যখন মহাবিশ্ব বর্তমান বয়সের মাত্র ২ শতাংশে অবস্থান করছিল। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ তার বিশাল ৬.৫ মিটার প্রশস্ত আয়না ও সংবেদনশীল ইনফ্রারেড যন্ত্র ব্যবহার করে নতুন ছায়াপথের খোঁজ দিয়েছে। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ এর আগে বিগ ব্যাংয়ের ৩ কোটি ২৫ লাখ বছর পরে বিকশিত একটি ছায়াপথের খোঁজ দিয়েছিল।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কারনিয়ানি পিসা বলেন, ‘সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে নতুন ছায়াপথের আকার ও উজ্জ্বলতা। সবাইকে চমকে দিয়ে জেমস ওয়েবের মাধ্যমে আমাদের কল্পনার বাইরের দূরত্বে ছায়াপথের খোঁজ পাওয়া গেছে। জেমস ওয়েবের মাধ্যমে ১৬০০ আলোকবর্ষ দূরের এই ছায়াপথের খোঁজ মিলল। অনেক আলোকিত ছায়াপথ বড় আকারের কৃষ্ণগহ্বরে পড়ে গেলে গ্যাসের মাধ্যমে আলো উৎপন্ন করে। নতুন ছায়াপথের আলোকমাত্রা কিছুটা ভিন্ন। আমরা বিশ্বাস করছি ছায়াপথের আলো কিছুটা নবীন তারার কারণে তৈরি হয়েছে। এত বেশি তারার আলোর অর্থ হচ্ছে ছায়াপথের ভর সূর্যের ভরের চেয়ে কয়েক কোটি গুণ বেশি। আমরা প্রশ্ন করছি, প্রকৃতি কীভাবে বিগ ব্যাঙের ৩০ কোটি বছরের কম সময়ে এত উজ্জ্বল, বিশাল ও বড় ছায়াপথ তৈরি করতে পারে?’
১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ২০২১ সালে চালু করা হয়। মহাজাগতিক এলাকার বিশাল অংশ দূর থেকে দেখার জন্য নকশা করা হয় জেমস ওয়েবকে। প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে, মহাবিশ্বের শুরুর সময়কার নক্ষত্র খুঁজে বের করা। নতুন ছায়াপথে জেমস ওয়েব উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অক্সিজেনের খোঁজ পেয়েছে। বলা যায় নতুন শনাক্ত করা ছায়াপথটি বেশ পরিপক্ব। ছায়াপথের প্রথম দিকে অক্সিজেনের উপস্থিতি একটি আশ্চর্যজনক বিষয় বলা যায়। অনেক বড় তারা সেখানে একাধিক প্রজন্মে রূপান্তরিত হয়ে গেছে বলা যায়।
ছায়াপথের নামের অংশ জেডস মানে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ অ্যাডভান্স ডিপ এক্সট্রাগ্যালাক্টিক সার্ভে। মহাজগতের প্রথম কয়েক কোটি বছর অনুসন্ধান করার জন্য টেলিস্কোপটি ব্যবহার করা হচ্ছে। আর জেড১৪ বলতে রেডশিল্প ১৪ বোঝায়। রেডশিফ্ট শব্দটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দূরত্ব বর্ণনা করতে ব্যবহার করেন। দূরবর্তী ছায়াপথ থেকে আসা আলো মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের কারণে কতটা দীর্ঘতর তরঙ্গদৈর্ঘ্যে প্রসারিত হচ্ছে তা নির্দেশ করে। দূরত্ব যত বেশি, প্রসারণ তত বেশি।
প্রাচীনতম ছায়াপথের আলো অতিবেগুনি ও দৃশ্যমান তরঙ্গদৈর্ঘ্য থেকে ইনফ্রারেড আকারে প্রসারিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সান্তা ক্রুজের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ব্রান্ট রবার্টসন বলেন, ‘আমরা এই ছায়াপথটি আরও ১০ গুণ বেশি ক্ষীণ আলোর হলেও শনাক্ত করতে পারতাম। যার অর্থ আমরা মহাবিশ্বের আরও ছায়াপথের খোঁজ পাব, যাদের বয়স সম্ভবত প্রথম ২০০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে হবে। নতুন ছায়াপথের তথ্যাদি ‘আর্কাইভ’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি