অনেক বিজ্ঞানী, গবেষক ও প্রকৌশলী প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হয়েছেন
অনেক বিজ্ঞানী, গবেষক ও প্রকৌশলী  প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হয়েছেন

রাষ্ট্রক্ষমতায় বা রাজনীতিতে এসেছেন যেসব বিজ্ঞানী

বিজ্ঞানীরা পাগলাটে হন। তাঁদের মন সাধারণের মতো না। জগৎ–সংসারের স্বাভাবিক নিয়মে তাঁরা আটকে থাকতে চান না। যেখানেই রহস্য সেখানেই বিজ্ঞানীদের উপস্থিতি। বিজ্ঞানী-গবেষকেরা রাজনীতির মাঠে তেমন টিকতে পারেন না বলে সমালোচনা আছে। তারপরও রাজনীতির ময়দানে আছেন অনেক বিজ্ঞানী, গবেষক ও প্রকৌশলী। যুক্তরাষ্ট্রের রুটজার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩ সালের এক জরিপ থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ৪ শতাংশ রাজনীতিবিদ বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, গবেষক বা স্বাস্থ্যসেবায় যুক্ত। বিজ্ঞানীর সংখ্যা ১ শতাংশের কাছাকাছি। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এই সংখ্যা আরও কম বলা যায়। তার পরেও অনেক বিজ্ঞানী, গবেষক, প্রকৌশলী রাজনীতি করেন, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিশ্বনেতাদের কাতারে পৌঁছে যান। এমনই আলোচিত কয়েকজনের কথা জেনে নিন।

মেক্সিকোর প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শিনবাউম

মেক্সিকোর প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট জলবায়ু বিজ্ঞানী

৩ জুন বিপুল ভোটে জয়লাভ করে মেক্সিকোর প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ক্লদিয়া শিনবাউম। তিনি ক্ষমতাসীন বামপন্থী দলের প্রার্থী। ক্লদিয়া শিনবাউম জলবায়ু বিজ্ঞানী। তার এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি ডিগ্রি আছে। শিনবাউম বৈশ্বিক রাজনীতি বা পরিবেশগত সংকটের আলোচনায় বেশ আলোচিত নাম। এই বিজ্ঞানী মেক্সিকো সিটির মেয়র ছিলেন। মেয়র থাকাকালীন শহরে বৈদ্যুতিক বাস চালু করেন তিনি। পাইকারি বাজারের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের কাজ করেন।

নিজের কাজ সম্পর্কে শিনবাউম বলেন, কোনো সমস্যার কারণ খুঁজে বের করতে ও কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করার জন্য বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ নিতে হয়। আমি মনে করি বিজ্ঞান ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় সংযোগ থাকা দরকার। মেক্সিকো ন্যাশনাল অটোনমাস ইউনিভার্সিটিতে পড়েছেন তিনি। স্নাতক হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলেতে এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেন। মেক্সিকোর যোগাযোগ ব্যবস্থায় পুনর্নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিয়ে তার পিএইচডি গবেষণা। ১৯৯৫ সালে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। ১৯৯৯ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন গবেষক ও প্রকৌশলী হিসেবে সেরার তকমা লাভ করেন। ২০০৬ সালে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের আন্তর্জাতিক প্যানেল আইপিসিসিতে যোগ দেন। ২০০৭ সালে আইপিসিসি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।

মার্গারেট থ্যাচার

মার্গারেট থ্যাচার ছিলেন রসায়নবিদ

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার তাঁর ক্ষুরধার রাজনৈতিক আদর্শের জন্য আলোচিত। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। মার্গারেট থ্যাচার আরেক আলোচিত বিজ্ঞানী ডরোথি হজকিনের তত্ত্বাবধানে এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফিতে গবেষণা করেন। ডরোথি রসায়নে নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন। স্নাতক হওয়ার পর গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন থ্যাচার। নিউ সায়েন্টিস্ট সাময়িকীর তথ্য মতে, থ্যাচার ১৯৪৯-৫১ সালে বিশেষ ধরনের আইসক্রিম তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন। ধারণা করা হয় বাজারে যে কম দামে ফেনাওয়ালা আইসক্রিম পাওয়া যায় সেটির উদ্ভাবন দলে থ্যাচার যুক্ত ছিলেন। পরে রাজনৈতিক জীবন শুরু করার জন্য যুক্তরাজ্যের ডার্টফোর্ডে চলে যান।  জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি বিশ্ব রাজনীতিতে জনপ্রিয় করতে কাজ করেছেন থ্যাচার। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন–সম্পর্কিত আন্তঃসরকারি প্যানেল ও ব্রিটিশ হ্যাডলি সেন্টার ফর ক্লাইমেট প্রেডিকশন অ্যান্ড রিসার্চ প্রতিষ্ঠা করেন।

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার

পরমাণু প্রকৌশলী জিমি কার্টার

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার ছিলেন পরমাণু প্রকৌশলী। রাজনীতি করার আগে তিনি পারমাণবিক সাবমেরিনে প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন। কার্টার ১৯৪৬ সালে ইউনাইটেড স্টেটস নেভাল একাডেমি থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। নিউইয়র্কের ইউনিয়ন কলেজ থেকে পরে পারমাণবিক পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। সেই সময়ে আমেরিকার দ্বিতীয় পারমাণবিক সাবমেরিন সি উলফে অফিসার হিসেবে কাজ করেন। পিতার মৃত্যু হলে প্রকৌশলে কর্মজীবন থেকে বিরতি নেন তিনি।

সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল

কোয়ান্টাম রসায়নবিদ আঙ্গেলা ম্যার্কেল

সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ২০০৫ সাল নির্বাচিত হন। তিনি স্কুলজীবন থেকেই পড়াশোনায় আলোচিত ছিলেন। তিনি কার্ল মার্ক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ডিগ্রি নেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৮ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট ফর ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রিতে কাজ করেন। ১৯৮৬ সালে কোয়ান্টাম রসায়নে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। কোয়ান্টাম রসায়নে গবেষণার সময় বিভিন্ন গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন ম্যার্কেল।

ক্যাথলিকদের প্রধান ধর্মযাজক পোপ ফ্রান্সিস

রাসায়নবিদ পোপ ফ্রান্সিস

ক্যাথলিকদের প্রধান ধর্মযাজক পোপ ফ্রান্সিস রসায়ন অধ্যয়ন করেছিলেন। একটি গবেষণাগারে রীতিমতো গবেষক হিসেবেও কাজ করেছেন। কারিগরি স্কুলে পড়াশোনা করেন পোপ ফ্রান্সিস। পড়াশোনা শেষে তিনি হাইকেথিয়ার-বাকম্যান ল্যাবরোটরি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের খাদ্য বিভাগে গবেষক হিসেবে কাজ করেন।

আলোচিত যাঁরা

১৯৫২ সালে বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনকে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়। ইসরায়েলের প্রথম প্রেসিডেন্ট চাইম হুইজম্যান মারা গেলে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন-গুরিয়ন বিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে দায়িত্ব গ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। যদিও আইনস্টাইন ক্ষমতা গ্রহণ করেননি।

পরবর্তী সময়ে আমরা দেখি, ভারতে ২০০২-০৭ সময়ে বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক এপিজে আবদুল কালাম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভারতের পারমাণবিক শক্তি হিসেবে আবির্ভাবে তার অনেক উদ্ভাবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রকৌশলীরাও রাজনীতির ময়দানে আলোচিত বলা যায়। রাশিয়ার বরিস ইয়েলেৎসিন থেকে শুরু করে ফিলিস্তিনী নেতা ইয়াছির আরাফাত ছিলেন প্রকৌশলী। জাপানের প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী ইউকিও হাটোয়ামা ২০০৯-১০ সালে জাপানে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিল্পপ্রকৌশলে (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়) পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লুকাস পাপাডেমস (২০১১-১২) ১৯৯৪ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। লুকাস কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি পদার্থবিজ্ঞানে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ডিগ্রি লাভ করেন। যদিও তাঁর পিএইচডি ছিল অর্থনীতিতে।

সূত্র: এবিসি ডট নেট ডট এইউ ও ফিজিকস ওয়ার্ল্ড