ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা অনেক বছর ধরেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে কাজ করছে। মেটার প্রধান এআই বিজ্ঞানী ইয়ান লেকুন। তাঁর বিশ্বাস, কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তার (এজিআই) বিকাশ কোনো প্রযুক্তিনির্ভর বিষয় নয় বরং এটি বৈজ্ঞানিক সমস্যা। ইয়ান লেকুন বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য বৃহৎ ভাষাকেন্দ্রিক মডেল বা লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) চ্যাটজিপিটি ও জেমিনির মতো এআই চ্যাটবটকে শক্তি দেয়। এসব মডেল যুক্তি বা পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কখনোই মানুষের সমকক্ষ হতে সক্ষম হবে না। ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে লেকুন বলেন, বিভিন্ন এআই মডেলের বর্তমানে যুক্তি সম্পর্কে খুব সীমিত ধারণা রয়েছে। তারা ভৌত জগৎ তেমন একটা বোঝে না। এসব মডেলের স্থায়ী স্মৃতিশক্তি থাকে না। অনেক কিছুর যুক্তিসংগত সংজ্ঞা দিতে পারে না।
চ্যাটজিপিটির মতো বড় মডেল আন্তরিক হলেও অনিরাপদ। এসব মডেল শুধু সঠিকভাবে প্রম্পটের (প্রশ্ন বা নির্দেশনা) উত্তর দিতে পারে। প্রশিক্ষণ দেওয়া তথ্য-উপাত্ত বা ডেটা সঠিক হলে এসব মডেল সঠিক উত্তর দিতে পারে। বিভিন্ন মডেলের বিবর্তন বা বিকাশ আসলে বেশ সীমিত। এসব মডেল তখনই শেখে, যখন মানুষ তাকে তথ্য দেয়। এগুলো প্রধানত অনেক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সংগৃহীত ডেটা থেকে জ্ঞান সংগ্রহ করে। সীমাবদ্ধতা থাকলেও আমাদের চ্যাটজিপিটি বা জেমিনির মতো এলএলএম খুব প্রয়োজন।
মেটার ফান্ডামেন্টাল এআই রিসার্চ (ফেয়ার) ল্যাবে প্রায় ৫০০ গবেষক আছেন। গবেষকেরা নতুন এআই ব্যবস্থা তৈরির কাজ করছেন। তাঁদের এআই মডেল সাধারণ জ্ঞান বিকাশ করতে পারে ও চারপাশের বিশ্ব কীভাবে কাজ করে, তা শিখতে পারে। ওয়ার্ল্ড মডেলিং নামে পরিচিত এই পদ্ধতি মেটার জন্য চ্যালেঞ্জিং বলা যায়। গত এপ্রিলে মার্ক জাকারবার্গ এআইতে বেশি খরচ করার ঘোষণা দেন। মেটাকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এআই কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান মার্ক।
ইয়ান লেকুনকে এআইয়ের ‘গডফাদার’ বলা হয়। কয়েক বছর ধরেই এআই নিয়ে নানা ধরনের আলোচিত গবেষণা পরিচালনা করছেন লেকুন। এআই নিয়ে প্রায়ই স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের সঙ্গে ইয়ান লেকুনের এক্সে বাহাস দেখা যায়। ইলন এআই নিয়ে নানা ধরনের ভয়ের কথা বললেও লেকুন এআই নিয়ে সম্ভাবনার কথা বলেন।
চলতি সপ্তাহে ইয়ান লেকুন এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, মাস্ক সত্যের জন্য সাধনা করতে চাইলেও নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব উত্থাপন করেন নিজেই। পোস্টের উত্তরে মাস্ক লেকুন কী ধরনের বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেন, তা জানতে যান। মেটার প্রধান এআই বিজ্ঞানী লেকুন তাঁর গুগল স্কলার পৃষ্ঠার তথ্য প্রকাশ করে ৮০টির বেশি প্রযুক্তিগত গবেষণার কথা জানান। যদিও ইলন লেকুনের গবেষণাপত্র নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখাননি।
সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস