ফেসবুক পেজের মাধ্যমে নিজের রান্না করা খাবার বিক্রি করেন নাফিজা হাসান
ফেসবুক পেজের মাধ্যমে নিজের রান্না করা খাবার বিক্রি করেন নাফিজা হাসান

অনলাইনে রান্নার উদ্যোগ, এখন নাফিজার আয় মাসে লাখ টাকার বেশি

নাফিজা হাসান তৃষা শিখেছিলেন ডিজিটাল বিপণন। সেই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নিজের রান্না করা খাবার বিক্রি শুরু করেন ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইনে। সাধারণ গৃহিণী নাফিজা মাত্র দুই বছরের প্রচেষ্টায় এখন আয় করেন মাসে লাখ টাকার বেশি।

শুরুটা হয়েছিল ২০২০ সালে। করোনা মহামারি শুরু হলে নাফিজার স্বামী আবদুল হান্নানের কাপড়ের ব্যবসায়ে বেশ বড়সড় আর্থিক ধস নামে। সে সময় অসুস্থও হয়ে পড়েন তিনি। বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে একটা কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন গৃহিণী নাফিজা। তখন ফ্রিল্যান্সার ছোট বোনের সঙ্গে পরামর্শ করে এএন আইটি একাডেমি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল বিপণনের (মার্কেটিং) প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেন নাফিজা।

নাফিজা স্বামীর দুঃসময়ে সংসারের হাল ধরতে চেয়েছিলেন। ২০২০ সালের আগস্টে ‘ভোজ’ নামে ফেসবুক পেজ খুলে অনলাইনে নিজের রান্না করা খাবারের প্রচার চালান। ডিজিটাল বিপণনের জ্ঞান এ ক্ষেত্রে কাজে লেগে যায়।

নাফিজা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দিনগুলো কীভাবে কাটছিল তা একমাত্র আমিই জানি। কী করব না করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। শুধু আত্মবিশ্বাস ছিল কিছু করতে হবে, আর আমি সেটা পারব। পরিবার ও আশপাশের মানুষ আমার খাবারের প্রশংসা করতেন, এই ভরসায় আমি নেমে পড়লাম।’

নিজেই রান্না করেন নাফিজা হাসান

নাফিজা হাসান নিজেই খাবারের ছবি ও ভিডিও দিতেন ফেসবুক পেজে। নিজেই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ করতেন। নাফিজা বলেন, ‘অন্য কাউকে দিয়ে করাতে গেলে টাকার প্রয়োজন। সেটা তো আমার নেই। এখন আমার ভালোই চলছে, স্বামীর চিকিৎসা ও পরিবারের খরচ চালিয়ে নিচ্ছি ভালোভাবেই।

নাফিজার ভোজে নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবার পাওয়া যায়। কারও ওপর দায়িত্ব ছেড়ে নিশ্চিন্তে থাকার মানুষ নন তিনি। তাই সহকারীকে দিয়ে রান্না না করিয়ে নিজেই রান্না করেন প্রতিটি খাবার। তা ছাড়া নাফিজার গ্রাহকদের একটা বড় অংশ নিয়মিত। রান্নার মান নেমে গেলে গ্রাহক-সন্তুষ্টিও থাকবে না।  

নাফিজার খাবারের তালিকায় থাকে আচার, বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার—যেমন নাডু, মোরব্বা, পিঠা, কুমড়ার বড়ি; হিমায়িত খাবার, ভোজ স্পেশাল বিরিয়ানি ইত্যাদি।

২০০৮ সালে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন মাগুরার মেয়ে নাফিজা। ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষে চাকরি করা। কিন্তু নানা কারণে চাকরি করা হয়নি। ২০১৩ সালে বিয়ে করেন তিনি। স্বামী আর দুই সন্তান নিয়ে এখন ঢাকার আজিমপুরে থাকেন নাফিজা। এখন অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা করে ভালো আছেন নাফিজা। তাঁর স্বপ্ন হলো নিজের প্রতিষ্ঠানকে আরও বড় করা।