চ্যাটজিপিটি
চ্যাটজিপিটি

চ্যাটজিপিটির কারণে উচ্চ ঝুঁকিতে পড়বে যে ১০ পেশা

গত বছরের নভেম্বরে ওপেনএআইয়ের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির চ্যাটবট ‘চ্যাটজিপিটি’ উন্মুক্ত হওয়ার পর দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়ায় প্রযুক্তি বিশ্বে চলছে নানা জল্পনাকল্পনা। প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞদের মতে, ‘আমরা যা কল্পনা করছি, তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী এই চ্যাটবট। আর তাই চ্যাটজিপিটি কিছু পেশার মানুষের চাকরি ঝুঁকিতে ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণের পাশাপাশি গবেষণা চালিয়ে চ্যাটজিপিটির কারণে ভবিষ্যতে ঝুঁকিতে পড়তে যাওয়া ১০ পেশার তালিকা করেছে। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা পেশাগুলো দেখে নেওয়া যাক—

প্রযুক্তিনির্ভর চাকরি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে চ্যাটজিপিটি গাণিতিক হিসাবগুলো দ্রুত ও নির্ভুলভাবে করতে পারে। ফলে মানুষের চেয়েও দ্রুত কোড তৈরি করতে পারে এই চ্যাটজিপিটি। তাই সফটওয়্যার ডেভেলপার, ওয়েব ডেভেলপার, কম্পিউটার প্রোগ্রামার, কোডার এবং তথ্য বিশ্লেষণের মতো প্রযুক্তিনির্ভর পেশাগুলো চ্যাটজিপিটির কারণে উচ্চ ঝুঁকিতে পড়বে।

গণমাধ্যম

বিজ্ঞাপন, নিবন্ধ, সাংবাদিকতা ও কনটেন্ট তৈরির যেকোনো কাজ চ্যাটজিপিটি মানুষের চেয়ে দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তৈরি সব আধেয় বা কনটেন্ট নির্ভুলভাবে তৈরি না হওয়ায় মানুষের সহায়তা প্রয়োজন হয়। ফলে বর্তমানের তুলনায় লোকবল কম নিয়েই প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারবে বিভিন্ন গণমাধ্যম। এরই মধ্যে প্রযুক্তিবিষয়ক গণমাধ্যম সিনেট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে কনটেন্ট তৈরির কাজ শুরু করেছে। অবশ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তৈরি কনটেন্টগুলো প্রকাশের আগে মানুষই সম্পাদনা ও তথ্য যাচাই করছেন।

আইন পেশা

আইনজীবীদের সহকারীরা মামলাসংশ্লিষ্ট অসংখ্য তথ্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি সেগুলো সমন্বয় করে থাকেন। পরে এসব তথ্য বিশ্লেষণ করেই আইনজীবীরা মামলা পরিচালনা বা বিভিন্ন পরিকল্পনা করেন। চ্যাটজিপিটি মানুষের চেয়ে দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে এসব কাজ করতে পারে। ফলে এ খাতেও বর্তমানের তুলনায় কম লোকবল প্রয়োজন হবে।

বাজার গবেষণা বিশ্লেষণ

তথ্য বিশ্লেষণ ও ফলাফলের পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটি খুবই কার্যকর। তাই বাজার গবেষণা বিশ্লেষকদের পেশাও চ্যাটজিপিটির কারণে ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

শিক্ষকতা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষকদের তাঁদের চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে ভাবা উচিত। চ্যাটজিপিটি ক্লাস নিতে পারে, যা ইতিমধ্যে প্রমাণিতও হয়েছে। যদিও এ ক্ষেত্রে কিছু ভুলভ্রান্তি করে চ্যাটজিপিটি, তবে ভবিষ্যতে চ্যাটজিপিটিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

আর্থিক খাতের চাকরি

গাণিতিক তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কাজ করা অর্থ বিশ্লেষক, ব্যক্তিগত অর্থ উপদেষ্টাসহ আর্থিক খাতের চাকরি ঝুঁকিতে পড়তে পারে। কারণ, চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে এসব কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা সম্ভব।

পুঁজিবাজারের কাজ

বিশেষজ্ঞরা বলেন, শেয়ারবাজারে ট্রেডারের কাজও চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে করা সম্ভব। ফলে ভবিষ্যতে এ পেশাও উচ্চ ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

গ্রাফিক ডিজাইন

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিনির্ভর টুল দিয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে প্রয়োজনীয় ছবি আঁকা বা সম্পাদনা করা সম্ভব। ফলে ভবিষ্যতে চ্যাটজিপিটি গ্রাফিক ডিজাইন শিল্পে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

হিসাবরক্ষণ

হিসাবরক্ষণ পেশাকে মোটামুটি স্থিতিশীল পেশা বলে মনে করা হয়। কিন্তু চ্যাটজিপিটির কারণে এ পেশার কাজগুলো দ্রুত করা সম্ভব। ফলে এ পেশার চাকরিও ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তবে অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে অবশ্যই মানুষের সহায়তা প্রয়োজন হওয়ায় বর্তমানের তুলনায় লোকবল কম প্রয়োজন হবে।

গ্রাহকসেবা

ইতিমধ্যেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রোবট বা চ্যাটবটের মাধ্যমে ক্রেতা বা গ্রাহকদের বিভিন্ন সেবা দিচ্ছেন। ভবিষ্যতে চ্যাটজিপিটি এ খাতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। প্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকসেবাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে।