সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ১৭ জুলাই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২৩ জুলাই রাতে দেশে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ও ২৮ জুলাই বেলা ৩টা থেকে মুঠোফোনে ফোর-জি ইন্টারনেট চালু হলেও বর্তমানে ইন্টারনেটের গতি বেশ কম। ফলে মুঠোফোনে স্বচ্ছন্দে ভিডিও দেখতে না পারায় ভিডিও পোস্টের দর্শকসংখ্যা অনেক কমে গেছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়েছেন ফেসবুক ও ইউটিউবনির্ভর ভিডিও নির্মাতারা।
সৈয়দ আবিদ হোসাইন নামের রাজধানীর একজন কনটেন্ট নির্মাতা বলেন, ‘আমি খেলাধুলাবিষয়ক বিভিন্ন ভিডিও ‘অনফিল্ড অফিশিয়াল’ নামের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে প্রকাশ করে থাকি। নিয়মিত ভিডিও তৈরির জন্য ১০ জনের কর্মীও রয়েছে আমার। ইন্টারনেট বন্ধ থাকার সময় কোনো ভিডিও আপলোড করা হয়নি। ইন্টারনেট চালু হলেও গতি কম থাকায় বড় আকারের ভিডিও নিয়মিত আপলোড করতে সমস্যা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ফেসবুক ও ইউটিউবের অটোসাজেশনের মাধ্যমে বেশি দর্শকের কাছে ভিডিওগুলো পৌঁছাতে পারছে না। দর্শকদের ভিডিও পোস্ট ও শেয়ারের সংখ্যাও কমে গেছে।
ভ্রমণবিষয়ক ‘গো উইথ আশরাফুল আলম’ ফেসবুক পেজের কনটেন্ট নির্মাতা আশরাফুল আলম বলেন, ‘ইন্টারনেটের সমস্যার কারণে আমার তৈরি করা ভিডিওর দর্শক কমে গেছে। কম গতির ইন্টারনেটের কারণে অনেক জায়গায় ফেসবুক ভালোভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে ভিডিও দেখার হার অনেক কম। দেশের বাইরে থেকে অনেক ব্যবহারকারী আমার ভিডিও দেখে থাকেন। যেহেতু বাংলাদেশ থেকে ভিউ কম, তাই ফেসবুক অ্যালগরিদম এসব ভিডিওর “রিচ” কমিয়ে দিয়েছে। ফলে পেজের দর্শকসংখ্যা কম হচ্ছে। একটা রিল প্রকাশ করার পর আগে এক থেকে দুই লাখবার দেখা হলেও এখন তা এক হাজারের কম হয়। আবার কবে ভিডিওর শেয়ার ও দর্শকসংখ্যা বাড়বে, তা বলতে পারছি না। ভিডিওতে দর্শক কমে যাওয়ায় মনিটাইজেশনের মাধ্যমে আয়ের পরিমাণও বেশ কম হবে।’
একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ইউটিউবের জনপ্রিয় কনটেন্ট নির্মাতা সালাহউদ্দিন সুমন। তাঁর পরিচালিত ‘সালাউদ্দিন সুমন’ নামের চ্যানেলটির অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। ইন্টারনেট সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ১৫ জুলাই সর্বশেষ ইউটিউবে ভিডিও প্রকাশ করেছি। এরপরে ইন্টারনেট চালু হলেও গতি অনেক কম। এই গতিতে ভিডিও আপলোড করা সম্ভব হচ্ছে না। ভিডিও নিয়মিত প্রকাশ করা না হলে ইউটিউব সেই চ্যানেলের রিচ কমিয়ে দেয়। আর তাই আমার আগে প্রকাশ করা সব ভিডিওর রিচ ও দর্শকসংখ্যাও কমে গেছে। ফলে প্রতিমাসে গড়ে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা আয় হলেও গত মাসে দেড় লাখ টাকা আয় করেছি। আবার আমি যে সব ভিডিও তৈরি করি, সেই সব ভ্রমণের গল্প দেখার মন মানসিক অবস্থাও নেই মানুষের। সব মিলিয়ে কনটেন্ট নির্মাতা হিসেবে বেশ চাপের মুখে আছি।’