জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ধীরে ধীরে শুকিয়ে গেছে ব্রাজিলের এই নদী
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ধীরে ধীরে শুকিয়ে গেছে ব্রাজিলের এই নদী

বিশ্বের বড় বড় নদী ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের বড় বড় নদী ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে, পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে। তাই ২০২৩ সালে বিশ্বের বড় বড় নদীর শুকিয়ে যাওয়ার বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই চোখে পড়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) এক সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, ৩৩ বছরের মধ্যে গত বছর বিভিন্ন নদীতে সবচেয়ে কম পানির প্রবাহ ছিল। শুষ্কতার মাত্রা ছিল বেশি। এর ফলে ৫০ বছরের মধ্যে বিশ্বের বড় বড় হিমবাহের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গত বছর। হিমবাহের পরিমাণ কমার কারণে অনেক নদীর পানির মাত্রা কিছুটা কমেছে।

স্টেট অব গ্লোবাল ওয়াটার রিসোর্সেস প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে বিশ্বব্যাপী নদী ও জলাধারের প্রবাহ স্বাভাবিক নেই। ৩৩ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে বিশ্বের বিভিন্ন নদীর শুষ্কতা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। এ কারণে বিশ্বব্যাপী পানি সরবরাহের ওপর চাপ বাড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন আবহাওয়া সংস্থা, বিজ্ঞানী, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সের মতো বিভিন্ন সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মহাসচিব সেলেস্টে সাওলো বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কেন্দ্রে পানির বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ক্রমবর্ধমান চরম বৃষ্টিপাত, বন্যা আর খরার সংখ্যা বাড়ছে। এতে জীবন, বাস্তুতন্ত্র ও অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। গলে যাওয়া বরফ ও হিমবাহ বহু কোটি মানুষের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার জন্য হুমকিস্বরূপ। হুমকি থাকলেও আমরা প্রয়োজনীয় জরুরি পদক্ষেপ নিচ্ছি না।’

২০২৩ সালে বেশির ভাগ নদীতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি শুষ্কতা দেখা গেছে। এর ফলে বিভিন্ন নদীতে স্বাভাবিকের তুলনায় কম পানি প্রবাহিত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ৫০ শতাংশের বেশি নদীর পানির প্রবাহে অস্বাভাবিক অবস্থা দেখা গেছে। খরার উপস্থিতি ও পানির প্রবাহে পরিবর্তন দেখার কারণে উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বৃহৎ অংশে বেশি প্রভাব দেখা যায়। ২০২৩ সালে আমাজন নদীতে সাম্প্রতিক সময়ের হিসাবে সর্বনিম্ন পানির স্তরের রেকর্ড দেখা যায়। এশীয় অঞ্চলে বড় বড় নদী অববাহিকা যেমন গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেকংয়ে পানির প্রবাহে কম মাত্রা দেখা যায়।

২০২৩ সালটি জলবায়ু পরিবর্তনের ইতিহাসে বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম বছরের একটি বলে বিবেচিত হচ্ছে। পৃথিবীর চরম তাপমাত্রা জলবায়ু সংকটকে আরও প্রভাবিত করেছে। ২০২৩ সালে অনেক জায়গায় দীর্ঘস্থায়ী খরা ও বিধ্বংসী বন্যা জলবায়ু সংকটকে আরও প্রকট করেছে। জলবায়ু সংকটের কারণে প্রাকৃতিক আবহাওয়ার অবস্থা বদলে যাচ্ছে। স্টেট অব গ্লোবাল ওয়াটার রিসোর্সেস রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৩ সালে বিভিন্ন জলাধার, হ্রদ আর হিমবাহ গলে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন নদী ৬০০ গিগাটন পানি হারিয়েছে। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয় আল্পসে বরফ অতিমাত্রায় গলেছে ২০২৩ সালে। গত দুই বছরে সুইজারল্যান্ডের হিমবাহের আয়তনের প্রায় ১০ শতাংশ কমে গেছে। সব মিলিয়ে পৃথিবীর বড় বড় নদীর অবস্থা এখন ভালো নয় বলে মনে করেন জলবায়ুবিজ্ঞানীরা।
সূত্র: ইউরোনিউজ