চেরনোবিল ভাইরাসের নির্মাতা চেন ইং-হাউ (ডানে)। ১৯৯৯
চেরনোবিল ভাইরাসের নির্মাতা চেন ইং-হাউ (ডানে)। ১৯৯৯

সিআইএইচ ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ কম্পিউটার

২৬ এপ্রিল ১৯৯৯

সিআইএইচ ১.২ কম্পিউটার ভাইরাস বিশ্বজুড়ে কম্পিউটারে আক্রমণ চালায়। এতে পৃথিবীর কয়েক লাখ কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশেও ১০ হাজার কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

২৬ এপ্রিল ১৯৬০

‘স্ট্রেচ’ বা আইবিএম ৭০৩০ সুপারকম্পিউটারের ঘোষণা দেয় আইবিএম।

২৬ এপ্রিল ১৯৯৯
সিআইএইচ ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ কম্পিউটার
সিআইএইচ ১.২ কম্পিউটার ভাইরাস বিশ্বজুড়ে কম্পিউটারে আক্রমণ চালায়। এতে পৃথিবীর কয়েক লাখ কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশেও ১০ হাজার কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ভাইরাসটি ১৯৯৮ সালের ২৬ এপ্রিল ছড়ানো হয়েছিল। এটি সুপ্ত অবস্থায় থেকে ঠিক এক বছর পর ১৯৯৯ সালের ২৬ এপ্রিল শূন্য ঘণ্টায় মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ৯৫ ও উইন্ডোজ ৯৮ অপারেটিং সিস্টেমে চলা কম্পউটারে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিলে পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দুর্ঘটনার ১৩তম বার্ষিকীতে এই ভাইরাস কম্পিউটারে আক্রমণ করে। তাই একে চেরনোবিল ভাইরাস নামেও ডাকা হয়। এর একাধিক সংস্করণ ছিল, যেগুলো কোনো না কোনো মাসের ২৬ তারিখ সক্রিয় হতো। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল ২৬ এপ্রিল সক্রিয় হওয়া সিআইএইচ ১.২ সংস্করণটি।

নরটন অ্যান্টি ভাইরাসে সিআইএইচ শণাক্ত

সিআইএইচ ছিল ম্যাক্রো ঘরানার ভাইরারস। ই-মেইলে সংযুক্ত ডক ফাইলের মাধ্যমে এটি ছড়াত। এটি উইন্ডোজ ৯৫ ও উইন্ডোজ ৯৮ অপারেটিং সিস্টেমের চালক (*.exe) ফাইল নষ্ট করে দিত। ফলে কম্পিউটার চালু হতো না। পাশাপাশি হার্ডডিস্কের পার্টিশন তুলে দিত, এতে হার্ডডিস্কে থাকা সব তথ্য হারিয়ে যেত। কিছু ক্ষেত্রে এই ভাইরাস মাদারবোর্ডের বায়োস (BIOS) বা বেসিক ইনপুট–আউটপুট সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে। ফলে মাদারবোর্ডও অকেজো হয়ে যায়।

২০২০ সালে একটি অনুষ্ঠানে চেন ইং-হাউ

চেরনোবিল ভাইরাস তৈরি করেছিলেন সেই সময়ে ২৪ বছর বয়সী তাইওয়ানের তাতুং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র চেন ইং-হাউ। তাঁর নামেই এর নামকরণ হয় সিআইএইচ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা পৃথিবীতে ১০ লাখের বেশি কম্পিউটার এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। বাণিজ্যিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল আনুমানিক ৩ কোটি ৫৮ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি। সিআইএইচ ভাইরাসে আক্রান্ত বেশির ভাগ কম্পিউটারের তথ্য পুনরুদ্ধার, মাদারবোর্ড সচল করা গিয়েছিল কয়েক দিন পর। এ ভাইরাসের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, সফটওয়্যারের মাধ্যমে কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ বা হার্ডওয়্যারের ক্ষতিসাধন সম্ভব। সরাসরি কেউ কোনো অভিযোগ না করায় তাইওয়ানে চেন ইং-হাউয়ের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

চেরনোবিল ভাইরাস নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন। ২৭ এপ্রিল, ১৯৯৯

১৯৯৯ সালের ২৭ এপ্রিল প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘১০ হাজার কম্পিউটার অচল’ শিরোনামের সংবাদে জানা যায়, বাংলাদেশে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য চেরনোবিল ভাইরাসের কোনো আগাম সতর্কতা ছিল না। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি, বিসিএস কম্পিউটার সিটি এবং কম্পিউটার বিক্রেতা ও সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, সারা দেশে ১০ হাজারের মতো কম্পিউটার চেরনোবিল ভাইরাসের শিকার হয়েছিল। অনেক ব্যবহারকারী ২৬ এপ্রিল সকালে কম্পিউটার খুলতে গিয়ে দেখেছেন, সেটি চালু হচ্ছে না, মনিটরে কোনো কিছু দেখা যাচ্ছে না।
১৯৯৯ সালের ভয়ংকর ঘটনার পরবর্তী কয়েক বছর ২৬ এপ্রিল চেরনোবিল ভাইরাস অনেক কম্পিউটারে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তবে তত দিনে এর অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার প্রকাশিত হওয়ায় তেমন বড় কোনো ক্ষতির সংবাদ আর পাওয়া যায়নি।

স্ট্রেস ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী ও দ্রুতগতির কম্পিউটার

২৬ এপ্রিল ১৯৬০
‘স্ট্রেচ’ সুপারকম্পিউটারের ঘোষণা দিল আইবিএম
সুপারকম্পিউটার নিয়ে আশাজাগানিয়া একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কম্পিউটার নির্মাতা ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস (আইবিএম) করপোরেশন। বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠানটি ‘স্ট্রেচ’ বা আইবিএম ৭০৩০ সুপারকম্পিউটারের ঘোষণা দেয়। ১ কোটি ডলারের বেশি খরচের স্ট্রেচ ছিল সেই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ও শক্তিশালী কম্পিউটার। বিজ্ঞপ্তিতে আইবিএম উল্লেখ করে, তারা নিউ মেক্সিকোর লস অ্যালামসের আণবিক শক্তি কমিশনের জন্য স্ট্রেচের মতো কম্পিউটার তৈরি করছে। স্ট্রেচের মতো কম্পিউটার তৈরি ও সরবরাহের জন্য আইবিএম সরকারি সংস্থা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করছে। এসব কম্পিউটার দিনে ১০ হাজার কোটি গণনা সম্পন্ন করতে পারবে। আগের কম্পিউটার আইবিএম ৭০৪-এর চেয়ে নতুন যন্ত্র ৭৫ গুণ দ্রুতগতির।