এই সময়ে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকের প্রোফাইলে দেখা যায় ডিজিটাল ক্রিয়েটর, ভ্লগার—এমন শব্দ। ইউটিউবেও অনেকেই নিজের চ্যানেল খোলেন শখের বশে কিংবা অনলাইনে আয়ের জন্য। আর টিকটকে নিজের অ্যাকাউন্ট খুলে ভিডিও দেওয়া তো দ্রুতই বেড়ে যাচ্ছে। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম রিলস তৈরির সংখ্যাও বাড়ছে।
নিয়মিত ভিডিও তৈরি করে নিজের চ্যানেলে বা অ্যাকাউন্টে দিলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভিডিওগুলোর দর্শকসংখ্যা খুব কম হয়ে থাকে। আবার অনেকের ভিডিওতে ভিউ হয় লাখ লাখ। ভিডিওর মানের ওপর ভিউ নির্ভর করে। ভিডিও ধারণ ও বিষয়বস্তু আকর্ষণীয় না হলে শখের ভিডিও তেমন কেউ দেখে না। তাই অনেকেই নিজ ঘরেই ছোট পরিসরে গড়ে তুলেছেন স্টুডিও। ভিডিও ধারণের পাশাপাশি কম্পিউটারে সম্পাদনা করায় ভিডিওর মানও বেশ ভালো হয়ে থাকে।
বাড়িতে ভিডিও স্টুডিও তৈরির জন্য প্রথমেই আপনার কাজের ধরন সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। পরিকল্পনাটাও পরিষ্কার হতে হবে। আপনি যদি শুধু ভিডিও সম্পাদনার কাজ করতে চান, তবে ভালো মানের কম্পিউটার ও ভিডিও সম্পাদনার সফটওয়্যার থাকলে হবে। আর আপনি যদি বাড়ির একটি ঘরে ভিডিও ধারণ করতে চান, তবে ভালো মানের ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, লাইটিং সিস্টেমসহ বিশেষ ধরনের পর্দা লাগবে।
ভিডিও সম্পাদনার জন্য অবশ্যই শক্তিশালী কম্পিউটার ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইন্টেলের ১৩ প্রজন্মের র৵াপটর লেক কোরআই৯ ১৩৯০০ প্রসেসর ব্যবহার করলে ভালো। প্রসেসরটির দাম ৬৬ হাজার টাকা। এর সঙ্গে গিগাবাইটের জেড ৯৬০ েগমিং এক্স মডেলের মাদারবোর্ড ব্যবহার করা যায়। মাদারবোর্ডের দাম পড়বে ২৬০০০ টাকা। ভালো মানের ভিডিও দেখার জন্য প্রয়োজন হবে এমএসআই জিফোর্স আরটিএক্স ৪০৭০ টিআই ভেনটাস গ্রাফিকস কার্ড।
এর দাম ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা, ভিডিও নিখুঁতভাবে দেখা যাবে। বাজেট কম থাকলে ব্যবহার করতে পারেন এমএসআই জিফোর্স আরটিএক্স ৩০৬০ ভেন্টাস মডেলের গ্রাফিকস কার্ড। ৪৬ হাজার টাকায় পাওয়া যাবে। এরপর আপনার প্রয়োজন হবে র৵াম। স্বচ্ছন্দে কাজের জন্য কোরসেয়ার ভেনজিনস ১৬ গিগাবাইট ডিডিআরফাইভের দুটি র৵াম ব্যবহার করতে হবে। র৵াম দুটির দাম পড়বে প্রায় ২৮ হাজার টাকা। এর সঙ্গে আপনার প্রয়োজনমতো এসএসডি এবং হার্ডডিস্ক ড্রাইভ ব্যবহার করতে হবে।
ভিডিও দেখা ও সম্পাদনার জন্য ২১ থেকে ২৭ ইঞ্চি পর্দার মনিটর ব্যবহার করতে হবে। অনেকে ভিডিও সম্পাদনার জন্য জোড়া মনিটর ব্যবহার করেন। এমএসআই জিফোর্স আরটিএক্স ৪০৭০ টিআই ভেনটাস গ্রাফিকস কার্ড এবং এমএসআই জিফোর্স আরটিএক্স ৩০৬০ ভেন্টাস মডেলের গ্রাফিকস কার্ড ডুয়েল মনিটর সমর্থন করায় সহজে একসঙ্গে দুটি মনিটর ব্যবহার করা যাবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মডেলভেদে সাম্প্রতিক মডেলের মনিটরগুলোর দাম ১৭ হাজার থেকে ১ লাখ দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।
ভিডিও ধারণের জন্য অবশ্যই ভালো মানের ক্যামেরা ব্যবহার করতে হবে। শুধু তা–ই নয়, ভালো মানের লেন্সও ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ক্যানন ইওএস ৯০ডি এসএলআর ক্যামেরা ব্যবহার করতে পারেন। এর দাম ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে ক্যানন ইএফ +৫০ এমএম এফ ১.৪ ইউএসএম লেন্সের দাম পড়বে ৩৯ হাজার টাকা। বাজেট কম থাকলে ক্যানন ইওএস ৪০০ডি এসএলআর ক্যামেরা ৩০ হাজার ৫০০ টাকায় কিনে ব্যবহার করতে পারেন। এর সঙ্গে ক্যানন ইএফ ৫০ এমএম এফ ১.৮ এসটিএম লেন্স কিনতে পারবেন ১৩ হাজার ২০০ টাকায়।
বাজারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ট্রাইপড ও গিম্বল পাওয়া যায়। যেগুলোর দাম ৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে।
ভালো মানের শব্দ ধারণের জন্য বয়া বিওয়াইএম ১০০০ স্টুডিও মাইক্রোফোনটি জনপ্রিয়। নয়েজ ক্যানসেলিং সুবিধা থাকায় নিখুঁতভাবে শব্দ ধারণ করতে পারে মাইক্রোফোনটি। এর দাম ৮ হাজার ৮০০ টাকা। বাজেট কম থাকলে বয়া বিওয়াই এমএমআই কম্প্যাক্ট অন ক্যামেরা মাইক্রোফোনও ব্যবহার করতে পারেন। এর দাম ১ হাজার ৭৫০ টাকা।
আলোর জন্য স্টুডিওতে এক বা একাধিক লাইট ব্যবহার করতে হবে। এসব লাইট চার থেকে সাত হাজার টাকায় পাওয়া যাবে। রিং-লাইটও ব্যবহার করতে পারেন, যা দুই হাজার টাকায় হয়ে যাবে।
পটভূমিতে সবুজ পর্দা (ব্যাকড্রপ) ব্যবহার করা যায়। ভিডিও ধারণ করার পর সহজেই পেছনের দৃশ্য সম্পাদনা করে বদলে দেওয়া যায়। স্ট্যান্ডসহ গ্রিন ব্যাকড্রপের দাম দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।
ভিডিও স্ট্রিম করার জন্য ওবিএস স্টুডিও সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে হবে। সফটওয়্যারটি দিয়ে পর্দার দৃশ্য ধারণের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ করা যায়। ভিডিও সম্পাদনার জন্য ব্যবহার করতে পারেন অ্যাডোবি সুইটের প্রিমিয়ারসহ বিভিন্ন সফটওয়্যার।