কোয়ান্টাম কম্পিউটার
কোয়ান্টাম কম্পিউটার

বিশ্বের প্রথম ত্রুটি-সহনশীল কোয়ান্টাম কম্পিউটার আসছে

এ বছর চালু হচ্ছে বিশ্বের প্রথম ত্রুটি-সহনশীল কোয়ান্টাম কম্পিউটার বা ফল্ট-টলারেন্ট কোয়ান্টাম কম্পিউটার। কিউএরা–এর তৈরি কোয়ান্টাম কম্পিউটারটিতে ২৫৬টি ফিজিক্যাল কিউবিট ও ১০টি লজিক্যাল কিউবিট রয়েছে। এ বছরের শেষ নাগাদ উন্মুক্ত করা হবে কম্পিউটারটি।

গাণিতিক ভাষায় বুলিয়ান বীজগণিত মূলত লজিকের সত্য ও মিথ্যা দুই স্তরের ওপর ভিত্তি করে কাজ করে। কম্পিউটারে যখন বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়, তখন বুলিয়ান বীজগণিতের সত্য ও মিথ্যাকে ১ ও শূন্য দ্বারা পরিবর্তন করা হয়। কম্পিউটারের সব গাণিতিক সমস্যা বুলিয়ান বীজগণিতের মাধ্যমে সহজেই সমাধান করা যায়। বুলিয়ান বীজগণিতে শুধু যোগ ও গুণের সাহায্যে সব কাজ করা হয়। এটি বিশেষ ধরনের ইলেকট্রনিক বর্তনী যার মাধ্যমে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। ডিজিটাল ইলেকট্রনিক সার্কিটকে লজিক গেট বলা হয়। লজিক গেটে এক বা একাধিক ইনপুট ও একটি আউটপুট থাকে। লজিক গেট ডিজিটাল পদ্ধতিতে মৌলিক ব্লক হিসেবে কাজ করে, যা বাইনারি শূন্য ও ১ দ্বারা পরিচালনা করা হয়। তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে বলে একে গেট বলে। অন্যদিকে ফল্ট-টলারেন্ট কোয়ান্টাম কম্পিউটিং (এফটিকিউসি) এমন একটি কৌশল যা ত্রুটিপূর্ণ গেট ও স্টোরেজ ত্রুটিসহ কোয়ান্টাম পদ্ধতি গণনা করা যায়। এফটিকিউসির মাধ্যমে কোয়ান্টাম কম্পিউটার খুব কম লজিক্যাল ত্রুটির মধ্যে গণনা করতে পারে।

লজিক্যাল কিউবিটসসহ বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক ত্রুটি-সহনশীল কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বেশ আশাবাদী। লজিক্যাল কিউবিটস ভৌত কোয়ান্টাম বিট বা কিউবিট। কিউবিট কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলমেন্টের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। ফলে একই তথ্য বিভিন্ন জায়গায় সংরক্ষণ করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার ত্রুটির পরিমাণ কমায়। এমন ধরনের কম্পিউটিং কৌশল নিয়ে নেচার জার্নালে গত ডিসেম্বরে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ কিউএরা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের গবেষকেরা একটি কার্যকরী কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরিতে কাজ করছেন। ৪৮টি লজিক্যাল কিউবিট রয়েছে সেই কোয়ান্টাম কম্পিউটারে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী হ্যারি ঝু বলেন, কোয়ান্টাম কম্পিউটারটির মাধ্যমে সফটওয়্যার প্রোগ্রামাররা ভবিষ্যতের কোয়ান্টাম কম্পিউটারের জন্য কোড পরীক্ষা করতে পারবেন। প্রচলিত কম্পিউটারে ০ বা ১ মান আকারে বিট হিসেবে তথ্য সঞ্চয় করে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারে কিউবিট ব্যবহার করা হয়। কিউবিট ০ আর একের একটি সুপারপজিশন। কম্পিউটারের তুলনায় অনেক দ্রুত গণনা সম্পাদন করতে পারে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। কিন্তু কিউবিট বেশ ত্রুটিপ্রবণ। এক হাজারের মধ্যে একটি কিউবিটে ত্রুটি দেখা যায়। এখন পর্যন্ত নির্মিত বৃহত্তম কোয়ান্টাম কম্পিউটারে প্রায় এক হাজার কিউবিট রয়েছে।

লজিক্যাল কিউবিট বেশ কয়েকটি ভৌত কিউবিট ধরে গণনার কাজ  করে। এক বা একাধিক ভৌত কিউবিট ব্যর্থ হলে ত্রুটির হার ব্যাপকভাবে কমে যায়। যৌক্তিক কিউবিট তৈরি করতে গবেষকেরা নিয়মিত কিউবিটে ত্রুটি-সংশোধনকারী কম্পিউটারের কোড ব্যবহার করেছেন। এরপর সংযোগের জন্য কিউবিটগুলোর মধ্যে লজিক্যাল গেট বা সার্কিট স্থাপন করা হয়। পরে কোয়ান্টাম কম্পিউটারে কোনো ত্রুটি রয়েছে কি না, তা অনুসন্ধান করা হয়। এভাবে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ত্রুটি সংশোধন করে পরবর্তী ধাপ তৈরি করা হচ্ছে। ২০২৩ সালে গুগল কোয়ান্টাম এআই ল্যাব তিনটি লজিক্যাল কিউবিট ব্যবহার করে ২.৯ শতাংশ ত্রুটির হার প্রদর্শন করে। ৪৮ লজিক্যাল কিউবিটসহ কিউএরার ত্রুটির হার ০.৫ শতাংশ।

আইবিএম নিজেদের তৈরি প্রথম বাণিজ্যিক ত্রুটি-সহনশীল কোয়ান্টাম কম্পিউটার ২০২৯ সালের দিকে বাজারে আনবে। কিউএরা আগামী বছরে বেশ কয়েকটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার চালু করার পরিকল্পনা করেছে। তার মধ্যে একটি ৩০ লজিক্যাল কিউবিট। আর ২০২৫ সালে আসবে ৩ হাজার ফিজিক্যাল কিউবিটের কোয়ান্টাম কম্পিউটার। অন্য একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার ২০২৬ সালে বাজারে আসবে, যেখানে থাকবে ১০ হাজারের বেশি ফিজিক্যাল কিউবিট ও ১০০ লজিক্যাল কিউবিট। এই কোয়ান্টাম কম্পিউটারটি বর্তমানের সুপারকম্পিউটারের ক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যাবে।
সূত্র: স্পেস ডট কম