যুদ্ধক্ষেত্রে রোবট আর ড্রোনের ব্যবহার বেড়েছে
যুদ্ধক্ষেত্রে রোবট আর ড্রোনের ব্যবহার বেড়েছে

রোবট ও ড্রোন বদলে দিচ্ছে যুদ্ধের ধরন

যুদ্ধক্ষেত্রে রোবট আর ড্রোন যেন নতুন যুগের ঘোড়া। নিঃশব্দে গোলাবারুদ ও পরিবহনে সাহায্য করে বদলে দিচ্ছে যুদ্ধের পরিস্থিতি। অসংখ্য রোবট আর ড্রোন ২০২৩ সালে ইউরোপের এক প্রান্তে কাজ করা শুরু করে। ২০২৩ সালের শীতে রুশ ও ইউক্রেনীয়—দুই বাহিনীই প্রথমবারের মতো আভিদিভকা শহরের চারপাশের রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্রে মানবহীন স্থলযান ইউজিভি ব্যবহার শুরু করে। চাকাযুক্ত ড্রোন সামনের সারির অবস্থানে থাকা মানব সৈনিকদের জন্য প্রয়োজনীয় রসদ ও গোলাবারুদ বহন করে। ইউক্রেনের আকাশ এরই মধ্যেই উড়ন্ত ড্রোন দিয়ে পরিপূর্ণ। সস্তা কিন্তু দ্রুত কাজ করতে পারে এসব যুদ্ধাস্ত্র সহজে পরিচালনা করতে পারে অপারেটররা। সহজে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা বা গুলি করতে ব্যবহৃত হচ্ছে। দুই পক্ষের উড়ন্ত রোবট একে অপরের ভূমিতে থাকা রোবটকে এখন আক্রমণ করছে। রোবট বনাম রোবটের যুদ্ধ—এবারই প্রথম দেখা যাচ্ছে। বিজ্ঞান কল্পকাহিনির মতো মনে হলেও বাস্তবে এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন ড্রোন ও রোবট সামরিক কাজে কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করছে। একই সঙ্গে নিজ দলের রোবটের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছে।

ইউরোপীয় সামরিক বাহিনী গত জানুয়ারি মাসে এলিস্টায়ার ক্রোনোস টিথারড নজরদারি ড্রোন পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করেছে। ড্রোন কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা টিমোথি পেনেট বলেন, ‘আমরা ইউরোপীয় বাহিনীর জন্য পরীক্ষা চালিয়েছি। সীমান্ত টহল ও প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহারের জন্য উপযোগী এই ড্রোন। বিচ্ছিন্ন কোনো এলাকায় সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমরা স্থল ও উড়ন্ত রোবট বিমানের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করি। যুদ্ধক্ষেত্রে কনভয় সুরক্ষা, টহল ও পুনরুদ্ধারের জন্য এসব ড্রোন নকশা করা হয়েছে। এলিস্টায়ার একটি ফরাসি প্রতিষ্ঠান, যেটি টিথারড ড্রোন তৈরি করে।

প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন যন্ত্র আক্ষরিক অর্থে একটি তারের মাধ্যমে ভূনিয়ন্ত্রণ স্টেশনের সঙ্গে আবদ্ধ থাকে। এই তার শক্তির উৎস ও সংকেত গ্রহণের কাজ করে। এসব টিথারড এরিয়াল সিস্টেম নির্ভর যানের চলাচলের স্বাধীনতা আছে। একই সঙ্গে দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য তথ্য আদান-প্রদানের জন্য কার্যকর। যদিও এলিস্টায়ার আগে টিথারযুক্ত ড্রোন বক্স তৈরি করে। এসব যানবাহনের সঙ্গে যুক্ত করা যায়। এই ড্রোন বক্স ৫০ মিটার উচ্চতায় প্রতি ঘণ্টায় ১২ মাইল গতিতে নিরাপদে চলতে পারে। এসব স্থল ড্রোন কনভয় যানবাহনকে উদ্ধার করার জন্য যথেষ্ট। পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক সরবরাহ পেলে এসব ড্রোন একবারে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত আকাশে উড়তে পারে।

সব আবহাওয়ায় কার্যকর অল-ওয়েদার কোয়াডকপ্টার ড্রোন কাজ শুরু করতে মাত্র দুই মিনিট সময় নেয়। স্যাটেলাইট নেভিগেশন অ্যাক্সেস ছাড়াই এই ড্রোন পরিচালনা করা যায়। ৭০ মিটার দীর্ঘ তারযুক্ত এই ড্রোন প্রতি সেকেন্ডে ১০০ মেগাবিট গতিতে তথ্য স্থানান্তর করতে পারে। বেতার সংকেত ছাড়াই অন্ধকারে যুদ্ধ শুরু করতে পারে। বিরোধী পক্ষকে শনাক্ত করা ও যুদ্ধক্ষেত্রে সম্ভাব্য জট তৈরি করে পরিস্থিতি সংবেদনশীল করে তুলতে পারে। এই ড্রোনে অভিযানসংক্রান্ত ডেটা টি-প্ল্যানার ২ সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে উড়তে পারে।

আট চাকার মিশনমাস্টার এসপি জার্মান প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান রাইনমেটালের কানাডীয় শাখা তৈরি করেছে। এই যানকে হাইটেক খচ্চর হিসেবে ভাবা হচ্ছে। নিঃশব্দে পদাতিক বাহিনীর সঙ্গে চলতে পারে এই যান। ভারী অস্ত্র বহন করে সেন্সরের মাধ্যমে যুদ্ধের গতি বদলে দিতে পারে। লো-প্রোফাইল ও লো-নয়েজ প্রোপালশনের এই যান ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে পারে। ১ হাজার ৩০০ পাউন্ডের মতো মালামাল বহন করতে পারে। প্রতি ঘণ্টায় ২৫ মাইল সর্বোচ্চ গতিতে ছুটতে পারে। এই যান প্রতি ঘণ্টায় ৩ দশমিক ৭ মাইল গতিতে সাঁতারও কাটতে পারে।

পাথ নামের একটি স্বায়ত্তশাসিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর নেভিগেশন সিস্টেমের মাধ্যমে অন্য যানবাহনকে শনাক্ত করতে পারে। এই যান সিএইচ-৪৭ বা সিএইচ ৫৩ হেভি লিফট হেলিকপ্টারের মাধ্যমে পরিবহন করা যায়। এ ধরনের যান গোপনে নজরদারির কাজে ব্যবহার করা যায়। রাসায়নিক বা জৈবিক উপাদান শনাক্তকরণে কাজ করছে। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আহত সৈন্যদের বহন করতে ব্যবহৃত হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনী রিকনেসান্স নামের ড্রোন ব্যবহার করছে।

২০১৯ সালে রয়্যাল কানাডিয়ান আর্মি পরীক্ষার জন্য ড্রোন সংগ্রহ করে। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীও ২০১৯ সালে এমন ড্রোন সংগ্রহ করে। এ ধরনের ড্রোনের উন্নত সংস্করণে রিমোট-কন্ট্রোলচালিত ৭.৬২ মিলিমিটার মেশিনগান আছে। নজরদারির জন্য রাডার, ৩৬০-ডিগ্রি ক্যামেরা আর লেজার রেঞ্জফাইন্ডার যুক্ত থাকে। যুদ্ধক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও নানাভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ক্রোনোসের জেটসন এআই বিবর্তনশীল মডেলগুলোর একটি। মানুষ ও বিভিন্ন বস্তুকে স্বল্প দূরত্বে চিহ্নিত করে শ্রেণিবদ্ধ করতে পারে।  

সূত্র: পপুলার মেকানিকস