হুয়াওয়ের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে কিছু সেবার আর কোনো আপডেট ভার্সন দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে গুগল। এই আঘাত সামলানোর জন্য চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে নিজেদের আগেই প্রস্তুত করে রেখেছিল। অন্তত কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে সেটি আঁচ করা যাচ্ছে। কারণ প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে আগেই কাজ শুরু করেছিল। সেই অপারেটিং সিস্টেমের নাম ‘হংমেং’। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতেই এ কাজ করেছে হুয়াওয়ে। আজ সোমবার হুয়াওয়ে সেন্ট্রাল ডটকমসহ কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে এ কথা বলা হয়েছে।
এখন থেকে হুয়াওয়ের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে কিছু সেবার আর কোনো আপডেট ভার্সন দেবে না বলে জানায় মার্কিন টেক জায়ান্ট গুগল। এটাকে হুয়াওয়ের ওপর নতুন আঘাত মনে করা হচ্ছে। এতে করে নতুন হুয়াওয়ে স্মার্টফোনে গুগলের ইউটিউব, গুগল ম্যাপসের মতো অ্যাপগুলো আর থাকবে না। এরপরই হুয়াওয়ের নিজেদের অপারেটিং সিস্টেমের নাম জানা গেল।
এর আগে গত মার্চে হুয়াওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিচার্ড ইউ বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম প্রস্তুত করেছি। তবে আমরা এটা ব্যবহার করতে চাই না।’ কিন্তু এরই মধ্যে হুয়াওয়ের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করেছে বলে শোনা যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র হুয়াওয়ে সেন্ট্রাল ও টেক জাজাইকে জানায়, হুয়াওয়ে নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম ‘হংমেং’ তৈরি করেছে। এর উন্নয়নকাজ শুরু হয়েছে সেই ২০১২ সালেই।
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, হুয়াওয়ে তাদের ফোনগুলোতে ‘হংমেং’ অপারেটিং সিস্টেম গোপনে ব্যবহার করে আসছে। তবে, সূত্রটি অপারেটিং সিস্টেমের নাম নিশ্চিত করতে পারেননি। সূত্রটি বলেছে, অপারেটিং সিস্টেমের নাম ‘হংমেং’ না হয়ে এটি একটি সাংকেতিক নামও (কোডনেম) হতে পারে।
এদিকে সোমবার হুয়াওয়ের গ্লোবাল অফিসের বরাত দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ অফিস প্রথম আলোকে জানিয়েছে, হুয়াওয়ে এবং অনার ব্র্যান্ডের যেসব স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও অন্যান্য পণ্য এখন বিশ্ববাজারে আছে বা ইতিমধ্যে বিক্রি হয়েছে, সেগুলোর নিয়মিত সিকিউরিটি আপডেট এবং বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করবে হুয়াওয়ে। বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে সব সময় একটি নিরাপদ ও টেকসই সফটওয়্যার ইকোসিস্টেম তৈরি অব্যাহত থাকবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিশ্বব্যাপী অ্যান্ড্রয়েডের উন্নতি এবং বিকাশ সাধনে হুয়াওয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ ছাড়া একটি ইকোসিস্টেমের উন্নয়নে আমরা তাদের ওপেন-সোর্স প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে অ্যান্ড্রয়েডের প্রধান বৈশ্বিক অংশীদার হিসেবে কাজ করেছি, যা সংশ্লিষ্ট খাত ও এর ব্যবহারকারী উভয়েরই উপকারে এসেছে।
এর আগে গুগলের বরাত দিয়ে বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হুয়াওয়ের অ্যান্ড্রয়েড অপারেট সিস্টেমে কিছু সেবার আর কোনো আপডেট ভার্সন দেবে না গুগল। এতে নতুন হুয়াওয়ে স্মার্টফোনে গুগলের ইউটিউব, গুগল ম্যাপসের মতো অ্যাপগুলো আর থাকবে না। সম্প্রতি হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্র এমন কোম্পানিতে তালিকাভুক্ত করেছে, যার সঙ্গে বাণিজ্য করতে হলে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে লাইসেন্স নিতে হবে। এরপরই গুগল এই সিদ্ধান্তের কথা জানাল।
এক বিবৃতিতে গুগল জানায়, তারা আদেশ মেনেই কাজ করছে এবং এর প্রভাব পর্যালোচনা করছে। গুগলের নতুন এই সিদ্ধান্তের কারণে হুয়াওয়ে গুগলের নিরাপত্তাবিষয়ক আপডেট ও প্রযুক্তিগত সহায়তা আর পাবে না। তবে ‘ওপেনসোর্স প্ল্যাটফর্ম’-এ থাকা সফটওয়্যারগুলোই শুধু সচল থাকবে হুয়াওয়ের স্মার্টফোনগুলোয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হুয়াওয়ের নতুন ডিভাইসে ইউটিউব, জি-মেইল, গুগল ম্যাপ, ক্রোম ব্রাউজারের মতো জনপ্রিয় গুগল অ্যাপসগুলো আর থাকবে না। কারণ, এসব সেবা ওপেনসোর্স লাইসেন্সের আওতায় পড়ে না। এগুলো পেতে গুগলের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তির প্রয়োজন হয়। তবে গুগল প্লে স্টোরের অ্যাকসেস থাকা বর্তমান হুয়াওয়ের ডিভাইস ব্যবহারকারীরা এখনো গুগলের অ্যাপ্লিকেশনের আপডেট ডাউনলোড করতে পারবেন।
তবে এ বিষয়ে হুয়াওয়ের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত হুয়াওয়ের ব্যবসার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। পশ্চিমে হুয়াওয়ের ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা গুগল প্লে স্টোর বাদে ফোন কিনতে আগ্রহী হন না।
গত বুধবার ট্রাম্প প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করে। এর ফলে সরকারি অনুমোদন ছাড়া মার্কিন সংস্থা থেকে প্রযুক্তিসেবা নেওয়ার পথ বন্ধ করা হয় হুয়াওয়ের জন্য।
আসলে চীনা বাণিজ্য নিয়ে দ্বন্দ্বে বরাবরই হুয়াওয়েকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে আসছেন ট্রাম্প। গত বছর থেকে হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে ফাইভ-জি সেবার কাজে হুয়াওয়েকে ‘নিষিদ্ধ’ও ঘোষণা করা হয়। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে টেলিকম নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা দেশগুলো। ফাইভজি নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের প্রযুক্তি ব্যবহার না করার ঘোষণা দেয় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডও। যুক্তরাজ্য প্রথমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও পরে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে। এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে হুয়াওয়ে।
আরও পড়ুন...