চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েকে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল, ইনটেল, কোয়ালকম, ব্রডকমের মতো প্রতিষ্ঠান সহায়তা করবে না। ট্রাম্প প্রশাসনের আদেশে সহায়তা বন্ধ করায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতার জন্য এটি বড় ধাক্কা। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ায় গুগলের অ্যাপ হুয়াওয়ের ফোনে চলবে না এবং গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ওএস ব্যবহার করতে পারবে না। তবে কয়েক বছর ধরেই হুয়াওয়ের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে কথা হচ্ছে। অ্যান্ড্রয়েডের বিকল্প হিসেবে ওই ওএস তৈরি করছে হুয়াওয়ে।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মধ্যেই নতুন ওএস উন্মুক্ত করবে হুয়াওয়ে।
হুয়াওয়ের কনজুমার গ্রুপের প্রধান নির্বাহী রিচার্ড ইউ বলেছেন, নতুন ওএস নিয়ে কাজ করছেন তাঁরা। পাবলিক উইচ্যাট গ্রুপে তিনি এ কথা বলেছেন।
এর আগে হুয়াওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেন ঝেংফেই বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব মোকাবিলায় তাঁরা প্রস্তুত। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ নেবেন তাঁরা।
হুয়াওয়ের নতুন অপারেটিং সিস্টেম বা ওএস স্মার্টফোন, ট্যাব, পিসি, টিভি, অটোমোবাইল, পরিধানযোগ্য প্রযুক্তিপণ্যসহ সব ধরনের ডিভাইসে চলবে।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যান্ড্রয়েড পুলিশ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, হুয়াওয়ের নতুন ওএস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ও ওয়েব অ্যাপ সমর্থন করবে। হুয়াওয়ের ওএসে অ্যান্ড্রয়েড ওএস ৬০ শতাংশ দ্রুতগতিতে কাজ করবে। অবশ্য এসব গুঞ্জন সত্যি কি না, তা বছরের শেষ নাগাদ বোঝা যাবে।
এটি অ্যান্ড্রয়েডের ওপেস সোর্স সংস্করণের ভিত্তিতে তৈরি কি না (ফর্ক ভার্সন), তা এখনো জানা যায়নি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, নতুন ওএস তৈরির বিষয়টি হুয়াওয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তাতে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, জিমেইল, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ সমর্থন করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাবে।
১৫ মে ট্রাম্প প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করে। এতে সরকারি অনুমোদন ছাড়া মার্কিন সংস্থা থেকে প্রযুক্তিসেবা নেওয়ার পথ বন্ধ করা হয় হুয়াওয়ের জন্য। অবশ্য গত সোমবার হুয়াওয়ের বিধিনিষেধ তিন মাসের জন্য শিথিল করে যুক্তরাষ্ট্র।
নিষেধাজ্ঞার পর হুয়াওয়ের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে কিছু সেবার আর কোনো আপডেট ভার্সন দেবে না বলে জানায় গুগল। হুয়াওয়ে তখন জানায়, নিজেদের অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে আগেই কাজ শুরু করেছিল। সেই অপারেটিং সিস্টেমের নাম ‘হংমেং’। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতেই এ কাজ করেছে হুয়াওয়ে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত হুয়াওয়ের ব্যবসার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। পশ্চিমে হুয়াওয়ের ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা গুগল প্লে স্টোর বাদে ফোন কিনতে আগ্রহী হন না।
আসলে চীনা বাণিজ্য নিয়ে দ্বন্দ্বে বরাবরই হুয়াওয়েকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে আসছেন ট্রাম্প। গত বছর থেকে হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে ফাইভজি সেবার কাজে হুয়াওয়েকে ‘নিষিদ্ধ’ও ঘোষণা করা হয়। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে টেলিকম নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা দেশগুলো। ফাইভজি নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের প্রযুক্তি ব্যবহার না করার ঘোষণা দেয় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডও। যুক্তরাজ্য প্রথমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও পরে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে। এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে হুয়াওয়ে।