হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেন ঝেংফেই দাবি করেছেন, হুয়াওয়ের যন্ত্রাংশে কোনো ধরনের ব্যাকডোর নেই, এমনকি সেখানে কেউ প্রবেশও করতে পারে না। হুয়াওয়ের নেটওয়ার্ক–ব্যবস্থা এতটাই সুরক্ষিত যে সেখান থেকে ডেটা নেওয়ার আশঙ্কা নেই। তিনি বলেছেন, যদি কোনো রাষ্ট্র চায়, তবে হুয়াওয়ে ‘নো ব্যাকডোর’ চুক্তি করতে প্রস্তুত।
গত সোমবার চীনের শেনঝেনে হুয়াওয়ের হেডকোয়ার্টারে অনুষ্ঠিত ‘কফি উইথ রেন’ শীর্ষক এক প্যানেল আলোচনায় সিইও রেন ঝেংফেই এসব কথা বলেন। হুয়াওয়ের সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা ধরে প্যানেল আলোচনা হয়। প্যানেল আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন এমআইটি মিডিয়া ল্যাবের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও অধ্যাপক নিকোলাস নিগ্রোপন্থে এবং লেখক ও ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট জর্জ গিলডার। আলোচনা সঞ্চালনা করেন চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের (সিজিটিএন) তিয়ান উই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরও চলতি বছর শেষে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের মুনাফা হবে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডালার। ২০২১ সালে মুনাফার পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
ওই আলোচনায় হুয়াওয়ে সিইও বলেন, তাঁর কোম্পানির অবস্থা এখন একটি খারাপ হয়ে যাওয়া উড়োজাহাজের মতো। তিনি বলেন, মার্কিন সরকার যে হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে এত কঠোর হবে, তা ধারণা করতে পারেননি তাঁরা। গত মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে তাঁদের মোবাইল ফোনের বিক্রি কমে গেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। তাঁর মনে হয়, আগামী দুই বছরে কোম্পানির সক্ষমতা কমাতে হবে। রাজস্ব আয় পূর্বাভাসের চেয়ে তিন হাজার কোটি ডলার কমতে পারে। সে জন্য চলতি ও আগামী বছর বিক্রয় রাজস্বের পরিমাণ দাঁড়াবে ১০ হাজার কোটি ডলারের মতো।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আইনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোম্পানি বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ব্যবহার করে—এমন কোনো কোম্পানি হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা করতে চাইলে তাকে লাইসেন্স নিতে হবে। গত ১৬ মে মার্কিন প্রশাসন হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করে।
রেন ঝেংফেই বলেন, ‘যখন কম শক্তিশালী ছিলাম, তখনো আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম, এখনো কাজ করছি এবং ভবিষ্যতেও তাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কিন্তু এমন কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করতে শঙ্কা বোধ করে। কিন্তু হুয়াওয়ে তেমন চিন্তা করে না। হুয়াওয়ে নিরাপত্তার বিষয়ে শক্তিশালী, আত্মবিশ্বাসী।’
এমআইটি মিডিয়া ল্যাবের সহপ্রতিষ্ঠাতা নিকোলাস নিগ্রোপন্থে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জনসমক্ষে জানিয়েছেন, যদি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করা যায়, তাহলে তিনি হুয়াওয়ের নিষেধাজ্ঞার বিষয় বিবেচনা করবেন। সুতরাং, এখানে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, এটা জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় নয়। এখানে অন্য কোনো বিষয় আছে।
প্যানেলের অপর আলোচক জর্জ গিলডার বলেন, হুয়াওয়ের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা দেশটির জন্য বড় ভুল। ইন্টারনেট–ব্যবস্থায় ব্যাপক বিপর্যয় শুরু হয়েছে। ইন্টারনেটের নিরাপত্তার বিষয়টি কোনো রাজনৈতিক সমস্যা না, এটা প্রযুক্তিগত সমস্যা। হুয়াওয়ে এ সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে।
রেন বলেন, ‘সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে, তাতে কোনো পক্ষই জিততে পারবে না। হুয়াওয়ের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেভাবে প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ করেছে, তা মোটেও কাম্য নয়। কারণ, হুয়াওয়ে চীন সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। এর ফলে দুই পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একে অপরের সহযোগিতার মাধ্যমেই এই বিশ্ব মানুষের সব চাহিদা পূরণ করতে পারে। আমাদের একে অপরের সহযোগিতার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
হুয়াওয়ের প্রধান নির্বাহী বলেন, হুয়াওয়ের প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোনোভাবেই হুয়াওয়েকে আটকানো যাবে না। বিশ্বের প্রত্যেক মানুষকে ডিজিটাল করা, একটা উন্নততর নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে আসার হুয়াওয়ের যে লক্ষ্য, তা পূরণ করা হবে।