অনলাইন স্কুলের ধারণা পুরোনো। তাহলে ‘দূরবীন একাডেমি’ কীভাবে অনন্য? নতুন কী থাকছে এতে? এমন প্রশ্ন দিয়েই আলাপ শুরু দূরবীন একাডেমির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনানের সঙ্গে। তিনি বললেন, এটি স্মার্টফোননির্ভর স্কুল। অ্যাপের মাধ্যমে ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে দূরবীন একাডেমি থেকে পাঠ কিংবা অন্যান্য কার্যক্রমে অংশ নেওয়া যায়। তৃতীয় পক্ষের কোনো সফটওয়্যারের দরকার পড়ে না। তাই তারা এটিকে বলছে ক্লাউড স্কুল।
দূরবীন একাডেমির শুরু ২০১৫ সালে। উদ্যোক্তা তিনজন। মোহাম্মদ আদনানের সঙ্গে আছেন মোহাম্মদ তৌহিদুজ্জামান ও মোস্তাফিজুর রহমান। আদনান পড়াশোনা করেছেন রাজধানীর ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে। অন্য দুজন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার কৌশল বিভাগ থেকে স্নাতক করেছেন।
কেন এই উদ্যোগ?
আদনান ব্যবসায় প্রশাসনের ছাত্র হলেও অনলাইনে ফ্রিল্যান্সার (মুক্তপেশাজীবী) হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক কাজে হাতেখড়ি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আগে থেকেই। প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। গিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আর সেখান থেকেই আদনানের মাথায় আসে কীভাবে আরও সহজে পাঠ কিংবা প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। এদিকে পড়াশোনা শেষে চাকরিতে যোগ দেন আদনান। কিন্তু অনলাইনে শিক্ষাদানের বিষয়টি মাথায় গেঁথে গিয়েছিল। তাই বছর দুয়েক চাকরি করার পর তা ছেড়ে দেন। তৌহিদুজ্জামান ও মোস্তাফিজুরের সঙ্গে গড়ে তোলেন দূরবীন একাডেমি।
দূরবীন একাডেমির কার্যক্রম স্মার্টফোননির্ভর কেন, তা পরিষ্কারও করেছেন উদ্যোক্তারা। অনলাইন স্কুলটির শুরুতে তাঁরা দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দেন। এক. গ্রামের শিক্ষার্থীদের কাছে কীভাবে সহজে শিক্ষাকার্যক্রম পৌঁছে দেওয়া যায়। দুই. তা যেন অগোছালো না হয়। সেখান থেকে স্মার্টফোন অ্যাপের কথা তাঁদের মাথায় আসে। আদনান বলেন, ইউটিউব বা ফেসবুকে সবকিছু কেমন অগোছালো। তা ছাড়া গ্রামের কয়জনের কাছেই বা ল্যাপটপ-ডেস্কটপ কম্পিউটার আছে?
দূরবীন অ্যাকাডেমির অ্যাপে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য দেড় হাজারের বেশি ভিডিও টিউটোরিয়াল আছে। উদ্যোক্তাদের ভাষ্যমতে, এসব ভিডিও ধারাবাহিকভাবে বিন্যাস করে অ্যাপে দেওয়া আছে। যাতে শিক্ষার্থীরা সিলেবাস অনুযায়ী প্রতিটি অধ্যায় শেষে পরের অধ্যায় শুরু করতে পারে।
দূরবীন একাডেমির অ্যাপে কিছু বিশেষ সুবিধা আছে। সেগুলো এখানে তুলে ধরা হলো।
ই-লার্নিং: এই সুবিধার মাধ্যমে পাওয়া যাবে শ্রেণি, বিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক ভিডিও। এসব ভিডিও অ্যাপ থেকে নামানোর সুযোগও আছে।
এক্সাম: দূরবীন একাডেমির পক্ষ থেকে নিয়মিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। কেউ চাইলে নিজের দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল জানতে পারবে।
কনটেস্ট: কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে ভালো দখল আছে? সহপাঠীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেন। অর্থাৎ নির্দিষ্ট বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সহপাঠীকে আহ্বান জানানো যাবে। কেউ আগ্রহী হলে তাঁর সঙ্গে পরীক্ষায় লড়তে হবে।
ফোরাম: এতে যেকোনো বিষয়ে আলোচনা করা যাবে, প্রশ্ন থাকলে তাও জানা যাবে। কেউ যদি সে প্রশ্নের উত্তর জানে তো সে জানিয়ে দিতে পারবে উত্তর।
ভিশন: পেশা সম্পর্কে আলোচনা করা হয় এই বিভাগে।
নিউজ: নিউজ বিভাগে বিভিন্ন তথ্য, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সংবাদ জানা যায়।
সুবিধাগুলো পেতে অ্যাপটি নামিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। তাতে খরচ হবে ৯৯ টাকা। এখন পর্যন্ত গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপটি নামানো হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার বার।
পেয়েছে সাফল্যও: যাত্রা শুরুর পরপরই সাফল্য পায় দূরবীন একাডেমি। অ্যাপের বেটা সংস্করণ উন্মুক্ত করার পর শিক্ষা বিভাগে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগে সেরা অ্যাপের পুরস্কার পায় ২০১৫ সালে। এরপর টেলিনর আয়োজিত ‘ডিজিটাল উইনার’ নামের অ্যাপ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশে চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর নরওয়েতে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতার মূল পর্বে বেস্ট এশিয়ান অ্যাপ বিভাগে রানারআপ হয়। পরবর্তী সময়ে ব্র্যাক মন্থন পুরস্কারও পায় দূরবীন একাডেমি।
অ্যাপ নামানোর গুগল প্লে-স্টোরের ঠিকানা https://goo.gl/ja9Viv