আমেরিকার প্রভাবশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির (এনএসএ) গোপন নজরদারি কর্মসূচিকে অবৈধ বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। সাত বছর আগে এনএসএর সাবেক ঠিকাদার স্নোডেন গোয়েন্দা নজরদারি কর্মসূচির বেআইনি কার্যকলাপ ধরে ফেলেন ও কর্মকাণ্ডের প্রামাণ্য তথ্য ফাঁস করেন।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের একটি আপিল আদালত ওই কর্মসূচিকে অবৈধ বলেন। একই সঙ্গে মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা যাঁরা প্রকাশ্যে এটির পক্ষে ছিলেন, তাঁরা সত্য বলছিলেন না বলে উল্লেখ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আপিল আদালত জানিয়েছেন, গোপনে লাখো আমেরিকান টেলিফোন রেকর্ড সংগ্রহ করার ওই কর্মসূচি বিদেশি গোয়েন্দা নজরদারি আইন লঙ্ঘন করেছে এবং এটি অসাংবিধানিক হতে পারে।
ওই ঘটনার পর ২০১৩ সালে রাশিয়ায় পালিয়ে যান স্নোডেন। তাঁকে মস্কোতে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হয়েছে। মোটা বেতনের চাকরি, সুন্দরী মেয়েবন্ধু, আয়েশি জীবন ছেড়ে স্বদেশ থেকে পালাতে বাধ্য হন তিনি। সরকার তাঁর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে মামলা করেছে। রাজনীতিক ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা তাঁকে আখ্যায়িত করেছেন বিশ্বাসঘাতক, রাষ্ট্রদ্রোহী, এমনকি চোর বলে।
মার্কিন আপিল আদালতের রুলের পর টুইটারে বলেছেন, গোয়েন্দা সংস্থার অভ্যন্তরীণ নজরদারির প্রমাণসহ সর্বসাধারণের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্তের সত্যতা এ রুলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
স্নোডেন টুইটারে পোস্ট করা একটি বার্তায় বলেন, ‘আমি কখনো ভাবিনি যে আদালত এনএসএর কার্যক্রমকে বেআইনি হিসেবে তীব্র নিন্দা করবে এবং এ রুল আমাকে তাদের মুখ উন্মোচনের জন্য প্রশংসা করবে, তা দেখার জন্য বেঁচে থাকব।’
আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, আদালতের এ রুল আমাদের প্রাইভেসি অধিকারের জয়। এটি সহজবোধ্য যে এনএসএর ব্যাপক মার্কিন নাগরিকদের ফোনের তথ্য সংগ্রহ সংবিধান লঙ্ঘন।
প্রমাণ রয়েছে যে এনএসএ গোপনে মার্কিন টেলিফোন রেকর্ডের একটি বিশাল ডেটাবেইস তৈরি করছিল। কে, কীভাবে, কখন এবং কোথায় মোবাইল কল করছে, তা ডেটাবেইস করে রেখেছিল গোয়েন্দারা। ২০১৩ সালে গার্ডিয়ান পত্রিকা প্রথম ওই তথ্য ফাঁস করে।
স্নোডেনের তথ্য ফাঁসের আগে পর্যন্ত শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জনসম্মুখে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি অস্বীকার করে এসেছেন। তাঁরা দাবি করে এসেছেন, তাঁরা মার্কিন নাগরিকদের জেনেশুনে কোনো তথ্য সংগ্রহ করেন না। কিন্তু স্নোডেন ব্রিটেন ও আমেরিকার মূলধারার দুটি সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমেরিকার জনগণসহ বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত টেলিফোন আলাপ গোপনে রেকর্ড করছে এনএসএ। যাঁদের করের টাকায় রাষ্ট্র চলে, যাঁদের ভোটে সরকার নির্বাচিত হয়, তাঁদের চলাফেরা থেকে শুরু করে সব কাজের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করছে সরকার।
স্নোডেন একসময় সিআইএ ও এনএসএর সঙ্গে ঠিকাদার হিসেবে কাজ করার সময় নিজের কম্পিউটারে গোপনে কপি করে নেন এনএসএর বিপুল পরিমাণ তথ্য। ২০১৩ সালে তাঁর যোগাযোগ ঘটে আমেরিকান আইনজীবী ও সাংবাদিক গ্লেন গ্রিনওয়াল্ডের সঙ্গে, যিনি তখন ব্রিটেনের দৈনিক গার্ডিয়ানের জন্য লিখতেন।
স্নোডেন সে সময় কর্মরত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপে, আমেরিকান নিরাপত্তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাজ অ্যালান হ্যামিল্টনের কর্মী হিসেবে, যে প্রতিষ্ঠানটি ছিল এনএসএর ঠিকাদার। এনএসএর ‘টপ সিক্রেট’ শ্রেণির বিপুল পরিমাণ তথ্যের ভান্ডার দৈনিক গার্ডিয়ানের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন স্নোডেন। তাঁর দেওয়া প্রামাণ্য তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৩ সালের জুন মাসে গ্লেন গ্রিনওয়াল্ড গার্ডিয়ানে লিখতে শুরু করেন ধারাবাহিক প্রতিবেদন।
আমেরিকান শাসকদের মাথায় বাজ পড়ে, ক্রোধে ফেটে পড়ে হোয়াইট হাউস। এডওয়ার্ড স্নোডেন হন তাঁর স্বদেশের সরকারের কাছে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড আমেরিকান’। তাঁর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক হুলিয়া জারি করে আমেরিকার সরকার।