সৌরঝড়ের প্রভাবে বিচ্ছিন্ন হতে পারে বিশ্বের ইন্টারনেট সংযোগ। এমন একটা খবর কয়েক দিন ধরে দেখা যাচ্ছে। এরপর অনেকে মজা করে বলছেন, করোনায় মানবজাতি টিকে যাবে, পঙ্গপালের হানাও সহ্য করবে, এলিয়েন এলে তাদেরও রুখে দেবে। তবে ইন্টারনেট ছাড়া কি একটা দিনও চলতে পারবে? চলতে পারবে কি না, সেটা পরের প্রশ্ন। আগে আমরা দেখি, সৌরঝড়ের সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্পর্ক কী।
‘এসিএম সিগকম ২০২১’ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গত মাসে। ভার্চ্যুয়াল আয়োজন। সেখানে উপস্থাপিত এক গবেষণাপত্রের ভাষ্য ছিল, শক্তিশালী কোনো সৌরঝড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে পৃথিবীর ইন্টারনেট সংযোগ। সাবমেরিন কেব্ল নষ্ট হতে পারে, অকেজো হতে পারে যোগাযোগের স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহগুলো। এর আগে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দেখা যায়, আগামী দশকের মধ্যে মহাকাশে আবহাওয়ার চরম বিপর্যয় দেখা দিতে পারে, এমন আশঙ্কা ১ দশমিক ৬ থেকে ২ শতাংশ।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ভাষায়, সৌরঝড়ের নাম হলো ‘করোনাল মাস ইজেকশন’। এমন ঘটনায় সূর্য থেকে তীব্র চৌম্বকীয় কণার নিঃসরণ হয়। এই কণাগুলো ঘণ্টায় কয়েক মিলিয়ন কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারত। ১৩ ঘণ্টা থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে এসে পৌঁছায় পৃথিবীতে।
পৃথিবীর পরিমণ্ডল এই কণাগুলো থেকে আমাদের রক্ষা করে। তবে ক্ষতি করতে পারে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের। পাশাপাশি তীব্র বৈদ্যুতিক তরঙ্গ প্রবাহিত করে মানুষের তৈরি অবকাঠামোগুলোর ক্ষতি করতে পারে বলে জানানো হয়েছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে।
আমাদের জানামতে, প্রথম সৌরঝড় হয় ১৮৫৯ সালে। প্রায় ১৭ ঘণ্টায় সেটি পৃথিবীতে পৌঁছেছিল। টেলিগ্রাফ নেটওয়ার্কের ক্ষতি করেছিল সে সময়ে। বৈদ্যুতিক শক অনুভূত হয়েছিল বলেও জানিয়েছিলেন অনেক টেলিগ্রাফ অপারেটর। ১৯২১ সালের আরেক সৌরঝড় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের টেলিগ্রাফ সংযোগ এবং রেলপথের ক্ষতি করেছিল। ১৯৮৯ সালে তুলনামূলক কম শক্তির আরেক ঝড়ে কানাডার কেবেকের বিদ্যুতের গ্রিড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
২০১৩ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮৫৯ সালের মতো কোনো সৌরঝড় এখন যদি যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানে তবে দুই থেকে চার কোটি মানুষ এক থেকে দুই বছর বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকতে পারে। অর্থনৈতিকভাবে এই ক্ষতির পরিমাণ হবে ৬০ হাজার কোটি থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার।
গত তিন দশকে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হয়েছে দ্রুত। এ সময়ে সূর্য কম সক্রিয় ছিল। আমাদের বর্তমান অবকাঠামো শক্তিশালী কোনো সৌরঝড়ে টিকে থাকতে পারবে কি না, তা নিয়ে তেমন গবেষণাও হয়নি।
গবেষণাপত্রটির একজন লেখক যুক্তরাষ্ট্রের আরভাইনের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার কম্পিউটার বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক সংগীতা জ্যোতি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি বলেন, বেশি ও কম সক্রিয়তার চক্রের মধ্য দিয়ে যায় সূর্য। প্রতি ১১ বছরে এই চক্র আবর্তিত হয়। ১০০ বছরের আরেকটি চক্র আছে সূর্যের। ইন্টারনেট অবকাঠামোর উন্নয়নের সময়টাতে সূর্য কম সক্রিয় ছিল। তবে শিগগিরই ১০০ বছরের চক্রের চূড়ায় পৌঁছাবে। ফলে আমাদের জীবদ্দশায় শক্তিশালী একটি সৌরঝড় দেখার আশঙ্কাই বেশি।
সৌরঝড়ে এশিয়ার দেশগুলো তুলনামূলক নিরাপদ বলে মনে করেন সংগীতা জ্যোতি। তাঁর ভাষায়, নিম্ন অক্ষাংশের দেশগুলোর ঝুঁকি অনেক কম। তবে সেটা নিশ্চিত করে বলার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।