আমরা বিভিন্ন পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিংয়ের কথা প্রায়ই শুনে থাকি। কিন্তু পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং বা নিজের ব্র্যান্ডিংয়ের কথা আমরা অনেকেই ভাবি না। একবারও ভেবে দেখেছেন কি, বিভিন্ন পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের ভালো দিকগুলোর কথা যখন আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনি, তখনই কিন্তু আমরা পণ্যটি কিনি বা ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো সেবা গ্রহণ করে থাকি। সর্বোপরি ওই পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ভ্যালু আমাদের কাছে বাড়ে। এবার পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের কথা বাদ দিয়ে নিজের কথা ভাবুন তো। যদি আপনার ভালো দিকগুলো অন্যদের জানানো যায়, তাহলে অন্যদের কাছেও আপনার গ্রহণযোগ্যতা বা ব্র্যান্ডমূল্য অনেকটা বেড়ে যাবে। সবাই আপনার কাজ, আগ্রহ, সামর্থ্য ও যোগ্যতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচ্ছন্ন উপস্থিতি কেন জরুরি
লিংকড–ইন, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (সোশ্যাল মিডিয়া) পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের অনন্য মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন ধরুন লিংকড–ইন পেশাজীবীদের জন্য একটি চমৎকার জায়গা। এখানে একজন ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মপ্রতিষ্ঠানের নাম, কাজের বিবরণ, বিশেষ স্বীকৃতিসহ বিভিন্ন তথ্য দেওয়া থাকে। লিংকড–ইন থেকেই অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের যোগ্য কর্মী খুঁজে নেয়। তাই ভালোভাবে একটি লিংকড–ইন প্রোফাইল তৈরি করে অন্যদের সঙ্গে যুক্ত হলে ক্যারিয়ারে নতুন সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা থাকে। তা ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মী নিয়োগের আগে কর্মীর ফেসবুকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল ঘেঁটে তাঁর কার্যকলাপ, আচরণ ও চালচলন সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করে। আর এখন তো যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য আবেদন করলেও আবেদনকারীর সোশ্যাল মিডিয়া দেখা হয়।
নিজের ব্র্যান্ডিং করবেন যেভাবে তথ্যবহুল ও সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রোফাইল তৈরি
নিজেকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইলে অ্যাকাউন্টে নিজের সম্পর্কের পর্যাপ্ত নির্ভুল তথ্য থাকতে হবে। যেন আপনার প্রোফাইলে কেউ প্রবেশ করলে আপনার সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারেন। আর একাধিক প্ল্যাটফর্মে তৈরি করা প্রোফাইলগুলোতেও যেন সামঞ্জস্য থাকে। যেমন ফেসবুক, টুইটার, লিংকড–ইনসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সার্টিফিকেটের নামে ও একই নামে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা, প্রোফাইল ছবিটি একই রাখা, যেন সবাই সহজে চিনতে পারে, নিজের সম্পর্কে একই রকম তথ্য দেওয়া ইত্যাদি।
নিয়মিত পোস্ট করা
নিজেকে সবার সঙ্গে ভালোভাবে যুক্ত রাখতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত পোস্ট করা উচিত। আপনার দক্ষতা ও আগ্রহ আছে, এমন দুই-তিনটি বিষয়বস্তু নির্বাচন করে বৈচিত্র্যময় পোস্ট করুন। ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিদিন একটি পোস্ট দেওয়া আদর্শ। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, আলোচনা, করপোরেট অনুষ্ঠানে নিজের সক্রিয় উপস্থিতির বিষয় পোস্ট করা যায়। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শিক্ষামূলক কর্মশালা ও স্বীকৃতির বিষয় পোস্ট করতে পারেন। আর লিংক শেয়ারের সময় সচেতনতামূলক, শিক্ষামূলক ও স্বাস্থ্যসেবামূলক লিংক শেয়ার করা উচিত। এতে নিজের দায়িত্বশলীতা ও সচেতনতার প্রকাশ পায়।
গ্রুপে আলোচনা করা
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত হয়ে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের সুযোগ থাকে। একটি গ্রুপের সবার কিছু সাধারণ আগ্রহ বা মনোযোগের বিষয় থাকে। সেখানেও নিজেকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করা যায়।
সবার কাজে আসে, এমন পোস্ট দেওয়া
আপনাকে তখনই সবাই ফলো করবেন, যখন আপনার কথা বা পোস্ট অন্যদের উপকারে আসবে। তাই প্রয়োজনীয় কনটেন্ট পোস্ট করুন। সবার আগ্রহের বিষয় জানতে প্রশ্ন করতে পারেন। নিজের ভালো কাজগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করুন।
সোশ্যাল মিডিয়ার নানা খারাপ দিকের কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। কিন্তু এই সোশ্যাল মিডিয়াকে ভালোভাবে ব্যবহার করে আমরা এর সুফল গ্রহণ করতে পারি। জ্ঞানী-গুণী মানুষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে, নিজেদের পরিচিত মহলের গণ্ডি বাড়িয়ে, সেখানে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে আমরা আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে তুলতে পারি। শুধু খাওয়াদাওয়া, আড্ডা আর ঘোরাঘুরির পোস্ট না দিয়ে কাজের পোস্ট দেওয়া উচিত।
যা করা উচিত নয়
* নিজের প্রকৃত নাম ব্যবহার না করা
● নিজের সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া
● বিভ্রান্তি ও উসকানিমূলক, মিথ্যা ও অশ্লীল পোস্ট দেওয়া
● সারা দিন অসংখ্য সেলফি ও আজেবাজে পোস্ট দিয়ে বিরক্ত করা
● ব্যক্তিগত কথোপকথনের স্ক্রিনশট পোস্ট করা