এখন সবখানে সবকিছুতেই যুক্ত হতে চাচ্ছে মার্কিন প্রযুক্ত প্রতিষ্ঠান আমাজন। তাঁদের বর্তমান পরিচয় দাঁড়িয়েছে সবকিছুতেই ‘অ্যালেক্সাযুক্ত’ কোম্পানি। অ্যালেক্সা হচ্ছে আমাজনের কৃত্রিম বুদ্ধিমান ভার্চ্যুয়াল সহকারী সফটওয়্যার। স্মার্ট হোম ও হার্ডওয়্যারের দুনিয়ায় আমাজনের দারুণ অগ্রযাত্রায় ব্যবহারকারীদের টেনে আনছে অ্যালেক্সা। এ সফটওয়্যার গ্রাহকের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক বাড়িয়ে দিচ্ছে তাদের। এতে ভবিষ্যতে আমাজন আরও বেশি সফল হবে।
গত বুধবার আমাজন তাদের বার্ষিক হার্ডওয়্যার ঘোষণার অনুষ্ঠানে কয়েকটি নতুন মডেলের ইকো ডিভাইস ও অ্যালেক্সার নতুন ফিচারের ঘোষণা দেয়। অনুষ্ঠানে আরেক মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের এয়ারপডসের প্রতিদ্বন্দ্বী ইকো বাডসের ঘোষণা এসেছে। এ ডিভাইসের মাধ্যমে অ্যালেক্সা স্মার্ট হোমের বাইরে বের হয়ে আসবে। এতে সিরি বা গুগল অ্যাসিসট্যান্টের চেয়েও আরও বেশি কার্যকর হবে আমাজনের এ ভার্চ্যুয়াল সহকারী।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, আমাজনের নতুন স্মার্ট গ্লাস ইকো ফ্রেমস আমাজনের জন্য পরিধানযোগ্য প্রযুক্তিপণ্যের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য দারুণ পণ্য হিসেবে যুক্ত হবে। পরিধানযোগ্য প্রযুক্তি পণ্যের দুনিয়ায় অ্যাপলের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাবে ইকো ফ্রেমস।
বর্তমানে গুগলের বিজ্ঞাপনের বাজার দখলের সুযোগ আমাজনের হাতে রয়েছে। কিন্তু অ্যাপলকে টেক্কা দিতে এবার তারা অ্যালেক্সাকে কাজে লাগাতে পারবে।
ইকো ফ্রেমসের মধ্যে অ্যালেক্সা ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট বিল্ট ইন আছে। অর্থাৎ, আপনি যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় আপনি এর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। স্ন্যাপের স্পেকট্যাকলের মতো ইকো ফ্রেমসে কোনো ক্যামেরা নেই বলে এতে ভিডিও বা ছবি তোলার সুযোগ নেই। একে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে আমাজন। এতে স্মার্টগ্লাসের ওজন কম থাকছে। আমাজন অ্যালেক্সার উত্তরগুলো ক্রাউডসোর্স করে। দৈনন্দিন ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে উত্তর নিয়ে উন্নত জবাব তৈরি করছে আমাজান। অবশ্য, এখন শুধু আমন্ত্রণ পাওয়া ব্যক্তিরা পরীক্ষামূলকভাবে ১৮০ মার্কিন ডলারে এটি হাতে পাচ্ছেন।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আমাজনের এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এগিয়ে যাওয়া উচিত। অ্যালেক্সা এ ক্ষেত্রে সারা দুনিয়ার সঙ্গে আমাজনের বন্ধন তৈরি করে দিতে পারে। অ্যালেক্সা কি করতে পারে ইতিমধ্যে তার সক্ষমতা দেখিয়েছে। একাধিক ভাষা সমর্থন সুবিধা এবং স্মার্ট নিরাপত্তা পণ্যে একে যুক্ত করার সুবিধা এসে গেছে। গুগল অ্যাসিসট্যান্টের সঙ্গে টক্কর দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারে অ্যালেক্সা।
ইকো বাডস ও ইকো ফ্রেমসের মতো পণ্যগুলো অ্যালেক্সার অনন্য বৈশিষ্ট্য সবার সামনে তুলে ধরেছে। চলার পথে সঙ্গী হিসেবে একে বেছে নেওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে। ইকো ফ্রেমস পরিহিত ব্যক্তি আমাজন ভয়েস অ্যাসিসট্যান্টকে কমান্ড করলে ওই চশমা তা শুনে উপযুক্ত জবাব হাজির করবে। এ জন্য ইকো ফ্রেমসের ফ্রেমে বিশেষ মাইক্রোফোন যুক্ত করা আছে। এমনভাবে এটি তৈরি করা হয়েছে যাতে বাইরের কেউ সে কথা শুনতে পাবে না।
মাইক্রোসফটের করটানা ও অ্যাপলের সিরির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গুগলের অ্যাসিসট্যান্ট ও অ্যালেক্সা ব্যবহারকারীদের কাছে টানছে। গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান যখন স্মার্টফোনের বাজারে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সেখানে আমাজন ফেসবুকের পোর্টালের মতো পণ্য তৈরির দিকে ছুটছে।
কনজুমার ইনটেলিজেন্স রিসার্চ পার্টনারসের তথ্য অনুযায়ী, স্মার্ট স্পিকারের ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থানে চলে গেছে আমাজন। বাজারের ৭০ শতাংশ তাদের দখলে। আমাজনকে ধরতে গুগল চেষ্টা করছে। চীনে বাইদু ও আলীবাবাও প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে স্মার্ট অ্যাসিস্ট্যান্টের ক্ষেত্রে আমাজনের এখন দারুণ সময় শুরু। তাদের সফটওয়্যার স্মার্ট হোম থেকে পরিধানযোগ্য প্রযুক্তিপণ্য ও মোবাইল খাতে চলে আসছে। প্রশ্ন উঠছে,৫জি ও আইওটির যুগে অ্যালেক্সাকে ঠেকাবে কে?