ডিজিটাল মুদ্রা লিবরা আনার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ফেসবুক। তবে তাদের এ প্রচেষ্টা বিভিন্ন দেশের আইনপ্রণেতাদের জন্য উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তারা ফেসবুকের প্রচেষ্টা ঠেকাতে চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় ফেসবুকের পাশ থেকে একে একে সরে যাচ্ছে লিবরার সহযোগীরা। সম্প্রতি লিবরা অ্যাসোসিয়েশন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা এসেছে ভিসা,মাস্টারকার্ড, স্ট্রিপ, মেরকাডো, পোগো ও ইবের কাছ থেকে। এর আগে লিবরার সঙ্গে থাকবে না বলে ঘোষণা দেয় পেপ্যাল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপটোকারেন্সি লিবরা চালু করতে অর্থ লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান পেপ্যালের মতো সহযোগীকে যুক্ত করেছিল ফেসবুক। তবে লিবরা ঘিরে বিভিন্ন দেশ থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাচ্ছে ফেসবুক। এর অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আইনপ্রণেতারা। এ পরিস্থিতিতে ফেসবুকের উদ্যোগের সঙ্গে না থাকার ঘোষণা আসছে সহযোগীদের কাছ থেকে।
ফেসবুক তাদের ক্রিপটোকারেন্সিকে কতটা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারবে, সেই সন্দেহ ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে গণমাধ্যম। এ ছাড়া তথ্যফাঁস, প্রাইভেসি লঙ্ঘনের মতো নানা বিষয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে ফেসবুক।
এর আগে ফ্রান্সের অর্থনীতিবিষয়ক পত্রিকা ‘ইকোস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক ফেসবুকের সমালোচনা করে বলেন, ‘একটি প্রাইভেট গ্রুপ করে সেটা থেকে প্রতিযোগিতা করার জন্য নতুন মুদ্রা আনার পক্ষে নই। কোনো প্রাইভেট কোম্পানির এ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা অর্জন করার লোভ ত্যাগ করা উচিত। বরং মুদ্রার বিষয়টি রাষ্ট্রের ওপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ক্রিপটোকারেন্সির ভক্ত নন। ফেসবুককে যদি লিবরা নামের ক্রিপটোকারেন্সি চালু করতে হয়, তবে তাদের ব্যাংকিং চার্টারের প্রয়োজন পড়তে পারে।
বর্তমানে ফেসবুক তাদের ক্রিপটোকারেন্সির উন্নয়নে ২৭টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে একটি সংগঠন তৈরি করেছে।
শুক্রবার পেপ্যালের পক্ষ থেকে লিবরা অ্যাসোসিয়েশন ছাড়ার কথা বলা হয়। তারা নিজেদের মূল ব্যবসায় নজর দিতে চায়। তবে লিবরার চালু করতে তাদের সমর্থন থাকবে বলে জানায়।
ভিসার একজন মুখপাত্র বলেছেন, ভিসা লিবরা অ্যাসোসিয়েশনে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। তাঁরাও নিজেদের মতো কাজ চালিয়ে যেতে চান।
নিজেদের পাশ থেকে বড় বড় প্রতিষ্ঠান সরে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছে ফেসবুক। তাদের পুরো প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এটি চালু করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। লিবরা অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় ২০২০ সালের জুন মাসে নতুন ডিজিটাল মুদ্রা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে ফেসবুকের।
এর আগে ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নীতিনির্ধারকদের নজরদারি এড়াতে লিবরায় নিজেদের অন্তর্ভুক্তি পুনর্বিবেচনা করার কথা বলেছিল ভিসা এবং মাস্টারকার্ড।
লিবরা অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম বৈঠক আগামীকাল সোমবার জেনেভায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ইতিমধ্যে ইউরোপে লিবরার ব্যবহার বন্ধ করতে ফ্রান্স ও জার্মানি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে। লিবরা প্রকল্প নিয়ে ২৩ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের হাউস ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কমিটির সামনে এক শুনানিতে অংশ নিতে হবে জাকারবার্গকে। এরপরই জানা যাবে লিবরার ভবিষ্যৎ।
তবে কনসোর্টিয়াম সহযোগী, পেমেন্ট সেবাদাতা, ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি ও গ্রাহক কোম্পানিদের সঙ্গে নিয়ে নতুন মুদ্রা আনতে বেশ আঁটঘাট বেঁধে নেমেছে ফেসবুক। ফেসবুকের লিবরা সবাইকে একটি ইলেকট্রনিক ওয়ালেটের সুবিধা দেবে। ফেসবুক বলছে, আন্তর্জাতিক সব মুদ্রার মূল্যমানের সঙ্গে সংগতি রেখে এই মুদ্রার মূল্যমান ধরা হবে। প্রচলিত মুদ্রা দিয়ে লিবরা কেনা যাবে।
ফেসবুকের এক শ্বেতপত্রে বলা হয়, লিবরার সঙ্গে ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্যের যোগসূত্র থাকবে না বলে তাদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা হবে না। তবে ফেসবুকের পক্ষ থেকে লিবরা পেমেন্টের সঙ্গে ফেসবুকের বিভিন্ন পণ্য যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে ফেসবুকের। ফেসবুকের এসব পণ্য কয়েক শ কোটি ব্যবহারকারী নিয়মিত ব্যবহার করছেন। বিটকয়েনের মতো ক্রিপটোকারেন্সির সঙ্গে এর পার্থক্য হবে সহজলভ্য ও সহজে ব্যবহার করার সুবিধা।
ফেসবুক বলছে, ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় ব্যাংক ডিপোজিট, স্বল্পমেয়াদি সরকারি নিরাপত্তার মতো বিষয় যুক্ত থাকবে। এতে অন্যান্য ক্রিপটোকারেন্সির মতো মুদ্রাস্ফীতি হবে না।
লিবরার উন্নয়নকারী ফেসবুকের ক্যালিব্রা বিভাগের প্রধান ডেভিড মার্কাস বলেন, ভবিষ্যতে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় তাঁরা নানা আর্থিক সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এর মধ্যে ঋণদানের মতো বিষয়ও রয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তাঁর অ্যাকাউন্টে যে লিবরা জমা রাখবেন, তার বিপরীতে ফেসবুক তাঁকে কোনো সুদ দেবে না।