কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির পর লাখ লাখ অ্যাপ বন্ধ করেছে ফেসবুক। তাদের সফটওয়্যার ডেভেলপার ইকোসিস্টেম নিয়ে তদন্ত করার পর ৪০০ অ্যাপ নির্মাতার লাখ লাখ অ্যাপ্লিকেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এ দাবি করে।
ফেসবুকের এক ব্লগ পোস্টে বলা হয়, এখন পর্যন্ত কয়েক মিলিয়ন অ্যাপ নিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তের সময় নানা কারণে লাখ লাখ অ্যাপ্লিকেশন বাতিল করা হয়েছে।
২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজ্ঞাপন প্রচারে ফেসবুক থেকে অনৈতিকভাবে সংগ্রহ করা ৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার ব্যবহার করেছিল যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। ওই কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর ফেসবুক তদন্ত শুরু করে।
কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহযোগিতার জন্য বেশি পরিচিত। ট্রাম্পের বিজয়ে এর ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটি দাবি করছে, ফেসবুক থেকে সংগৃহীত কোনো তথ্য ট্রাম্পের প্রচারণার তারা ব্যবহার করেনি।
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনাটি সামনে নিয়ে আসেন যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সাবেক কর্মী ক্রিস্টোফার উইলি। তিনিই প্রথম জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবং যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদ) প্রশ্নে গণভোটে ভূমিকা ছিল তাঁর সাবেক কর্মস্থলের। এ ব্যাপারে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকাকে সহযোগিতা করেছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক আলেকসান্দ্র কোগান। তিনি বিশেষ অ্যাপ তৈরি করে ফেসবুকের প্ল্যাটফর্মে ছেড়েছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে দিয়েছিলেন কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে।
ক্রিস্টোফার উইলির ভাষ্যমতে, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ওই তথ্যগুলো প্রক্রিয়াজাত করে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচার শিবিরকে সরবরাহ করেছিল। শুধু তা-ই নয়, ওই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য রিপাবলিকান ভোটারও চিহ্নিত করা হয়।
প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, সম্ভবত পাঁচ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। তবে পরে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে, ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে ফেসবুকের বিরুদ্ধে নানা সমালোচনা হতে থাকে। তখনই জানা যায় ফেসবুক থেকে অবৈধভাবে নানা তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন। এ তথ্য ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই নানা কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ নিয়ে ফেসবুকের ওপর ব্যবহারকারীদের আস্থার সংকট তৈরির পাশাপাশি ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে সমালোচনা সইতে হচ্ছিল। তাই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের প্ল্যাটফর্মে যতগুলো অ্যাপ তথ্য সংগ্রহ করে, সেগুলো তদন্ত করার ঘোষণা দিয়েছিল।
ফেসবুক বলেছে, তারা যেসব অ্যাপের বিষয়ে তদন্ত করেছে অনেক অ্যাপ নির্মাতা তাদের অনুরোধে তথ্য সরবরাহ করেনি। তাই সেসব অ্যাপ বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া ফেসবুকের নীতিমালা না মেনে ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা তথ্য অনৈতিকভাবে শেয়ার করছে অনেক অ্যাপ।
ফেসবুক বেশ কিছু অ্যাপ নির্মাতার বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগে মামলাও করেছে। এসব অ্যাপ নির্মাতার বিরুদ্ধে ফেসবুক থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে ম্যালওয়্যার ছড়ানো ছাড়াও নানা রকম অভিযোগ রয়েছে। তথ্যসূত্র: সিএনবিসি।