টিকটক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চীনের বাইটড্যান্স তাদের প্রধান কার্যালয় বেইজিং থেকে সরিয়ে লন্ডনে আনবে। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের দ্য সান পত্রিকা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স দ্য সানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, শিগগিরই বাইটড্যান্সের প্রতিষ্ঠাতারা লন্ডনে কার্যালয় চালুর বিষয়ে তাদের ইচ্ছার কথা জানাবেন। তাদের এ ঘোষণায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও ক্ষেপে যেতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচনা করছেন তিনি।
টিকটকের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যে প্রধান কার্যালয় স্থাপন বিষয়ে অবশ্য কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের মাইক্রোসফট করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা জনপ্রিয় সংক্ষিপ্ত ভিডিও তৈরির অ্যাপ টিকটককে বাইটড্যান্সের কাছ থেকে কিনে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ চুক্তি সম্পন্ন করে ফেলতে চায় তারা।
ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো মার্কিন কোম্পানি যদি টিকটককে কিনে নিতে ব্যর্থ হয় তবে তিনি টিকটককে নিষিদ্ধ করবেন। তিনি টিকটকের ৩০ শতাংশ মালিকানা কেনার বদলে পুরোপুরি কিনে নেওয়ার কথা বলেছেন। এ বিষয়ে তিনি মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলার সঙ্গে আলোচনাও করেছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ট্রাম্প শুক্রবার সাংবাদিকদের টিকটক বন্ধে নির্বাহী আদেশ জারির কথা বলেছেন। এয়ারফোর্স ওয়ান বিমানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘টিকটক আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। আমরা এটা বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি।’ এর আগে মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আশঙ্কা করেন, এই অ্যাপ ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে চীন।
টিকটক কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই এমন আশঙ্কাকে ভিত্তিহীন বলে আসছে। তারা বলছে, এই অ্যাপ চীন সরকারের নিয়ন্ত্রিত নয় এবং তারা চীন সরকারের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করে না।
টিকটকের মূল কোম্পানি বাইটড্যান্সের প্রধান কার্যালয় বেইজিংয়ে এবং এটি চীনে জনপ্রিয় হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এর জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমালোচনাও বেড়েছে। টিকটকের সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির কয়েকজন সিনেটর এর বিরুদ্ধে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ভারত গত ৩০ জুন টিকটক, উইচ্যাটসহ চীনা ৫৯টি অ্যাপ ভারতে বন্ধ করে দেয়। নয়াদিল্লি এসব অ্যাপকে দেশের জন্য বিপজ্জনক অভিযোগ তুলে তা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও ১৫ জুন লাদাখে চীনের সঙ্গে সীমান্ত-সংঘর্ষে ভারতের ২০ সেনা নিহত হওয়ার পর দিল্লি ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
ভারতে টিকটক বন্ধের ঘটনার পর বেইজিংয়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানোর কথা জানায় বাইটড্যান্স। রয়টার্স জানিয়েছে, টিকটকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেভিন মেয়ার ভারত সরকারকে একটি চিঠি দেন। তাতে তিনি দাবি করেন, টিকটকের কাছে চীন সরকার কখনো কোনো তথ্য চায়নি বা তারাও কোনো তথ্য সরকারকে দেননি। তারা বৈশ্বিক ব্যবহারকারী টানতে ইতিমধ্যে চীনের শেকড় থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে।
গত বছরের অক্টোবরে ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউয়ের সিলিকন ভ্যালিতে অফিস খুলেছে টিকটক। ফেসবুকের কার্যালয়ের কাছাকাছি অফিস নিয়ে ফেসবুকের কর্মীদের ভাগিয়ে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে টিকটকের নির্মাতা বাইটড্যান্সের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে ফেসবুকের বেশ কয়েকজন কর্মী টিকটকে যোগও দিয়েছেন। ফেসবুকের চেয়েও বেশি বেতনের অফারে কর্মী নিয়োগ দিয়েছে টিকটক।