মূল মঞ্চে দাঁড়িয়ে হিউম্যানয়েড রোবট নিনো। দুই হাত পাশে ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানায় সে। নিনো বলে, ‘তোমাদের বিজ্ঞানময় শুভেচ্ছা ও আন্তরিক ভালোবাসা। তোমাদের সরব উপস্থিতি জাতিকে স্বপ্ন দেখাবে, তোমাদের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবে আইনস্টাইন, নিউটন, স্টিফেন হকিংয়ের মতো বিজ্ঞানীরা। আমি বিজ্ঞান উৎসব ঘোষণা করছি।’
আজ শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের মাঠে শুরু হলো ‘বিজ্ঞান উৎসব’। দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশ এবং বিজ্ঞানভিত্তিক মাসিক পত্রিকা ‘বিজ্ঞানচিন্তা’ যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সার্বিক সহযোগিতায় প্রথম আলো বন্ধুসভা। এবার উৎসবের স্লোগান—‘বিজ্ঞানে বিকাশ’। উৎসবে শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে আইসক্রিম দিচ্ছে লাভেলো।
আজ ঢাকা আঞ্চলিক উৎসব। এখানে ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছে, শতাধিক বিজ্ঞান প্রকল্প প্রদর্শিত হচ্ছে। আজকের এই প্রকল্পগুলো থেকে ১৫টি প্রকল্প জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। সেকেন্ডারি ও জুনিয়র—দুই ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। নির্বাচিত ৩০ জন প্রতিযোগী পরবর্তী সময়ে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেবে।
সকাল ৯টার দিকে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে উৎসব শুরু হয়। এ সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তা
ত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন এবং বিজ্ঞান উৎসবের পতাকা উত্তোলন করেন বিকাশের চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেজর জেনারেল (অব.) শেখ মো. মনিরুল ইসলাম।
অতিথিদের বক্তব্যে আরশাদ মোমেন শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘এখন বিজ্ঞানের যুগ। হরেক রকমের প্রযুক্তি আসছে, নতুন নতুন জিনিস আসছে। এমন একটি জায়গায় যদি তুমি চাও, তাহলে জয়যাত্রার অংশ হতে পারবে। তোমাদের সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।’
শেখ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যে ছোঁয়া বা ব্যবহার চলছে, সেগুলোর সঙ্গে যুক্ত না থাকলে আমরা পিছিয়ে যাব। বিজ্ঞান প্রসারে শিক্ষার্থীদের এই সুযোগের সঙ্গে যুক্ত থেকে বিকাশ গর্বিত। এটা শিক্ষার্থীদের মানসিক ও চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটাবে বলে মনে করি।’
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ‘তোমাদের কি খুব গরম লাগছে? গরম কমাতে তোমরা পানি খাও। বিজ্ঞান আছে, চিন্তা কী?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিকস ও টেকনোলজি বিভাগের খণ্ডকালীন অধ্যাপক সিদ্দিক-ই-রব্বানী বলেন, ‘এখন বিজ্ঞানের যুগ, এটা ঠিক না। বিজ্ঞানের শুরু মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকে। বিজ্ঞানের দুটি ব্যবহার আছে—এক. অজানাকে জানা আর দুই. পৃথিবীর সম্পদ ব্যবহার করে জীবনকে আরও সহজ করা।’ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জিপিএ ৫ বা এ প্লাস এটিই জীবনের সফলতা নয়। অন্যের জন্য কী করছি, সেটা বের করাই জীবনের সফলতা।’
বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশনের সাবেক জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. রেজাউর রহমান বলেন, ‘তোমরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাববে। তোমরা চাইলেই বিজ্ঞানী হতে পারবে। প্রবীণদের পক্ষ থেকে তোমাদের শুভেচ্ছা।’
প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি সাইদুজ্জামান রওশন বলেন, ‘তোমরা কে কে বিজ্ঞানী হতে চাও, হাত তোলো।’ এরপর শিক্ষার্থীরা সবাই হাত তুললে তিনি বলেন, ‘দেশে এত বিজ্ঞানী হলে দেশে আর কোনো অন্ধকার থাকবে না।’
‘বিজ্ঞানচিন্তা’র সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, প্রায় ১০০টি প্রকল্প প্রদর্শিত হচ্ছে এই উৎসবে। এর প্রভাব সমাজে নিশ্চয় পড়বে। সেন্ট যোসেফ এবং বিকাশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।
উদ্বোধনী বক্তব্যের পর অতিথিরা বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। এখন চলছে কুইজ প্রতিযোগিতা। সারা দিন নানা আয়োজন চলবে। এর মধ্যে রয়েছে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব, রোবট নাচ, বিজ্ঞানের বইয়ের সঙ্গে পরিচিতিসহ আরও অনেক কিছু।