রাজনীতিবিদেরা ফেসবুকে যা খুশি তা বলতে পারবেন। এতে ফেসবুকের নিয়মনীতি লঙ্ঘন হবে না। অর্থাৎ রাজনীতিবিদদের নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে রাখছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি জানিয়েছে, ফেসবুকের যেসব সাধারণ নীতিমালা রয়েছে তা রাজনীতিবিদদের জন্য প্রযোজ্য নয়। তবে বিজ্ঞাপনের বিষয়টি আলাদা। এ ছাড়া বিশ্বে সহিংসতা ছড়ানোর কোনো পোস্ট হলে সেটি ব্যতিক্রম হবে। রাজনীতিবিদদের পোস্ট করা কনটেন্ট সম্পর্কে ফেসবুকের বক্তব্য হচ্ছে, তাঁদের বক্তব্যে ফেসবুক মাথা গলাতে চায় না। এতে তারা রাজনৈতিক বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে পারবে।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেসবুকের নীতিমালায় বিশেষ সুবিধা দেওয়ার এ পদ্ধতি অনেকটাই মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারের মতো কাজ করবে। ২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক এড়াতেই ফেসবুক এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ফেসবুকের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান নিক ক্লেগ সম্প্রতি আটলান্টিক ফেস্টিভ্যাল নামের এক আয়োজনে নতুন এ নীতিমালার কথা জানান। পরে এক ব্লগ পোস্টে তিনি লিখেছেন, যদি কোনো রাজনীতিবিদ ফেসবুকের নীতিমালা লঙ্ঘনকারী কোনো বক্তব্য দেন বা কোনো বিষয় শেয়ার করেন, তবে তা ফেসবুকে অনুমোদন পাবে। জনগণের আগ্রহের কথা বিবেচনা করেই বিষয়গুলো রাখা হবে। রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যকে খবরের উপযোগী কনটেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ব্যতিক্রম হবে অর্থ পরিশোধ করে দেওয়া বিজ্ঞাপন ও সহিংস কনটেন্ট।
ক্লেগ বলেন, আমরা বাক্স্বাধীনতা দেওয়ার ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন। রাজনৈতিক কনটেন্ট ফিল্টার ও সেন্সর করা হলে ফেসবুকের উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয় না।
গত বছরেই ফেসবুক রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছিল। এতে কোন রাজনীতিবিদ কী বলেছেন, তা যাচাই করার দায়িত্ব ফেসবুক নেয় না।
উল্লেখ্য, গতকাল ঢাকার একটি হোটেলে ফেসবুক কনটেন্ট বিভাগের পাবলিক পলিসি ম্যানেজার বরুন রেড্ডি বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ফেসবুকের কনটেন্ট পলিসি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ফেসবুক জঙ্গিবাদ, সহিংসতা, ভুয়া খবর, নিপীড়ন, মৌলবাদী কনটেন্ট নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বাংলা ভাষার কনটেন্ট পর্যালোচনার জন্যও ভারতীয় ও বাংলাভাষী বিশেষ টিম কাজ করে।
বরুন বলেন, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ—এ তিন মাসে ৩ কোটি ৩৬ লাখ গ্রাফিকস সহিংস কনটেন্ট সরানো হয়েছে। এর মধ্যে কিছু বাংলা কনটেন্ট আছে। এ ছাড়া অশ্লীল ছবি ও ভিডি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ঘৃণা সৃষ্টিকারী মন্তব্য, ভুয়া অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যাপক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ফেসবুকের পাবলিক পলিসি পরিচালক শিবনাথ ঠাকরাল বলেন, বাংলাদেশে পলিসিবিষয়ক একজন ব্যবস্থাপক নিয়োগ দেওয়া হবে শিগগিরই। তিনি নীতিমালা ও সরকারি বিভিন্ন যোগাযোগের বিষয়টি দেখবেন।
বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে গতকাল এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে। সেখানে টেলিকম নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে নীতিগত অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আইনি ও নীতিমালা প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।
ফেসবুকের এমারজিং মার্কেটের পলিসি কমিউনিকেশন ম্যানেজার অ্যামি সাওয়িতা লেফেব্রি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মূলত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কনটেন্ট পলিসি নিয়ে বিভিন্ন দেশে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশের পর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে পলিসি নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে নীতিমালা তুলে ধরা হলো। নিয়মিত কার্যক্রম হিসেবে এ ধরনের আয়োজন আরও ঘটবে।
বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা ও প্রাইভেসি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ফেসবুকের কর্মকর্তারা বলেন, তাঁরা আগে থেকেই বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাহায্য করছেন। এখন আরও বেশি সহায়তা করবেন।