চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেন ঝেংফেই বলেছেন, ওয়াশিংটনের চাপ মোকাবিলা করতে তাঁরা প্রস্তুত। তাঁরা মার্কিন যন্ত্রাংশের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনবেন। ইতিমধ্যে তাঁরা এসব ব্যাপারে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে হুয়াওয়েকে নিষিদ্ধের ঘটনার পর গত শনিবার জাপানের গণমাধ্যমগুলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রেন ঝেংফেই (৭৪) এ কথা বলেছেন। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গত বুধবার ট্রাম্প প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করে। এতে সরকারি অনুমোদন ছাড়া মার্কিন সংস্থা থেকে হুয়াওয়ের জন্য প্রযুক্তিসেবা নেওয়ার পথ বন্ধ করা হয়। হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞায় যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রতিষ্ঠান চীনের এ বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করছে।
রেন বলেছেন, হুয়াওয়ে নিজস্ব যন্ত্রাংশ তৈরির কাজ অব্যাহত রাখবে এবং বাইরের সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেবে।
ফাইভজি প্রযুক্তিতে দ্রুত নিজেদের সেবা বাড়াচ্ছে হুয়াওয়ে, তবে এখনো অনেক যন্ত্রাংশের জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হয়।
নিক্কেই বিজনেস ডেইলির এক তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর ৬ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের যন্ত্রাংশ কেনে হুয়াওয়ে। এর মধ্যে ১ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের যন্ত্রাংশ কেনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
হুয়াওয়ের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপের কারণেই নিজের আড়াল থেকে বের হয়ে আসতে হচ্ছে রেন ঝেংফেইকে।
রেন এর আগে চীনা সেনাবাহিনীতে ছিলেন। হুয়াওয়ের ‘অস্বাভাবিক সংস্কৃতি’ অনেকে দেশে চীনা গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সম্পর্কের বিষয়ে সন্দেহ জাগায়।
এ ছাড়া হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ‘তীব্র প্রচার’ কার্যক্রম লক্ষণীয়। মিত্রদেশগুলোকে ফাইভজি নেটওয়ার্কে হুয়াওয়েকে না রাখতে চাপ দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সরকারি সংস্থাগুলোয় হুয়াওয়ের ডিভাইস কেনা নিষিদ্ধ।
রেন বলেছেন, ‘আইন ভঙ্গ করে এমন কোনো কিছু আমরা করিনি।’
যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে সীমিত প্রভাব পড়বে উল্লেখ করে রেন বলেছেন, ‘হুয়াওয়ের প্রবৃদ্ধি হয়তো কমবে, কিন্তু তা সামান্য।’
সেনাবাহিনীর সাবেক প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করার পর ১৯৮৭ সালে মাত্র পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার পকেটে নিয়ে হুয়াওয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রেন। হুয়াওয়ের দাবি, বিশ্বের ১৭০টি দেশে তাদের কার্যক্রম রয়েছে এবং কর্মীসংখ্যা ১ লাখ ৯০ হাজার। ২০১৮ সালে তাদের রাজস্ব ছিল ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
রেন বলেন, কোনো রকম চাপের কাছে তাঁরা মাথা নোয়াচ্ছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ বা তাদের নজরদারির সুযোগ দিতে ব্যবস্থাপনায় কোনো পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। এর আগে আরেক মার্কিন প্রতিষ্ঠান জেডটিই মার্কিন চাপে নতি স্বীকার করেছিল। তাদের পথে হুয়াওয়ে হাঁটবে না।
গত বছরে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তি বহাল রাখায় জেডটিইর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো জেডটিইকে যন্ত্রাংশ সরবরাহ বন্ধ করায় জেডটিই প্রায় পথে বসে গিয়েছিল। পরে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার জরিমানার বিনিময়ে ট্রাম্প ওই আদেশ তুলে নেন এবং জেডটিইতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নজরদারির সুযোগ তৈরি হয়।
আরও পড়ুন: