যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের এক গবেষণায় দেখা যায়, নিজের ঘর সম্পর্কে মানুষের অনুভূতি যেমন, স্মার্টফোন সম্পর্কেও তেমন। সেটা গোটা বিশ্বেই।
স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের ঘরবাড়ি থাকে তাঁদের পকেটে। যন্ত্রের জন্য নিজের আপনজনদেরও এড়িয়ে যান। এসব অবশ্য জানা কথা। তবু নতুন এক গবেষণায় নতুন করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের নয়টি দেশের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের এক বছরের বেশি সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) একদল নৃতত্ত্ববিদ। গবেষণা শেষ তাঁরা জানান, স্মার্টফোন এখন আর নিছক যন্ত্র নেই। নিজের ঘর সম্পর্কে মানুষের অনুভূতি যেমন, স্মার্টফোনের সম্পর্কেও তেমন।
গবেষক দলটির নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক ড্যানিয়েল মিলার। তিনি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ‘স্মার্টফোন এখন আর নিছক ব্যবহারের একটি যন্ত্র নয়। আমরা এখন এর ভেতরেই থাকি। এটা আমাদের থাকার জায়গায় পরিণত হয়েছে। মানবসম্পর্কের জন্য এর খারাপ দিক হলো, আমাদের পাশে থাকা একজন মানুষ মুহূর্তে উধাও হয়ে যায়। সেটা খাওয়ার সময় হোক, মিটিংয়ে হোক কিংবা অন্যদের সঙ্গে কোনো কাজ করার সময়ে হোক, স্মার্টফোনের সঙ্গে যেন একটি মানুষ তাঁর ‘বাড়িতে চলে যায়’।
শারীরিকভাবে কাছে থাকলেও সামাজিক, পেশাগত কিংবা অনুভূতির দিক থেকে আমরা একা হয়ে গেছি।
এতে মানুষের সঙ্গে মুখোমুখি যোগাযোগে আমরা ‘নৈকট্যের মৃত্যু’র দিকে এগিয়ে যাচ্ছি বলে মন্তব্য করেছেন মিলার। তিনি বলেন, ‘শারীরিকভাবে কাছে থাকলেও সামাজিক, পেশাগত কিংবা অনুভূতির দিক থেকে আমরা একা হয়ে গেছি। এ ঝুঁকির সঙ্গেই আমরা বাস করতে শিখছি।’
এমন পরিবর্তনের যদি কোনো একক কারণ থাকে, তবে সেটি হোয়াটসঅ্যাপের মতো বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপগুলো বলে জানিয়েছেন ওই গবেষকেরা। এই অ্যাপগুলোকে ‘স্মার্টফোনের হৃদয়’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁরা লিখেছেন, বিশ্বের বেশির ভাগ অঞ্চলে অনেক ব্যবহারকারীর জন্য স্মার্টফোন মানে শুধু একটি অ্যাপের কাজ।
জেগে থাকা অবস্থায় যে পরিমাণ সময় আমরা স্মার্টফোনে ‘বাস’ করি, তাতে সম্ভবত এটাই প্রথম বস্তু, যা আমাদের ঘর কিংবা কর্মস্থলের সমকক্ষ হওয়ার চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জাপানে লাইন, চীনে উইচ্যাট এবং ব্রাজিলে হোয়াটসঅ্যাপের উল্লেখ করেন তাঁরা। বৃদ্ধ মা–বাবার যত্ন নেওয়ার জন্য অ্যাপগুলোতেই খোঁজ নেয় সন্তানেরা, অভিভাবকেরাও আনন্দের সঙ্গে সন্তানদের ছবি পাঠায়, আর অভিবাসী খোঁজ পায় তাঁর পরিবারের।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জেগে থাকা অবস্থায় যে পরিমাণ সময় আমরা স্মার্টফোনে “বাস” করি, তাতে সম্ভবত এটাই প্রথম বস্তু, যা আমাদের ঘর কিংবা কর্মস্থলের সমকক্ষ হওয়ার চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।’
গবেষণায় এমন মানুষদের স্মার্টফোনের ব্যবহার আমলে নেওয়া হয়েছে, যাঁরা নিজেদের ‘না তরুণ, না বয়স্ক’ মনে করেন।
স্মার্টফোন ব্যবহারের খারাপ দিকটি গবেষণায় উঠে এলেও ডিভাইসটি যোগাযোগের জন্য যে অপরিহার্য, তা উল্লেখ করতেও ভোলেননি ওই গবেষক দল।