মহাবিশ্বের বয়স কত? কত দ্রুতই–বা এটি প্রসারিত হচ্ছে? এসব প্রশ্ন অনেক পদার্থবিজ্ঞানীর কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, কসমোলজি বা মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে অধ্যয়নে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেন অনেকে।
এত দিন বিজ্ঞানীদের মধ্য মহাবিশ্বের বয়স নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সময়ও নির্ধারণ ছিল। তবে নতুন এক গবেষণা আগের ওই ধারণার ভিত্তিকে কাঁপিয়ে দিয়েছে।
আগের ধারণা ছিল, এ মহাবিশ্ব প্রায় ১৩ দশমিক ৬ থেকে ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বছরের পুরোনো। তবে নতুন এক গবেষণায় দাবি করা হচ্ছে, এ মহাবিশ্ব অতটা বয়স্ক নয়। আগের ধারণা থেকে এটা কমপক্ষে এক বিলিয়ন বছরের ছোট। এ ছাড়া আগের ধারণার থেকেও দ্রুতগতিতে প্রসারিত হচ্ছে এটি।
নতুন ওই গবেষণা করেছেন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানী অ্যাডাম রিয়েস। তিনি ২০১১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। বার্তা সংস্থা এএফপি বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল জার্নালের বরাত দিয়ে জানাচ্ছে, রিয়েস দুই বছর ধরে এ বিষয়ে গবেষণা করে ওই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
রিয়েস তাঁর গবেষণার নমুনা হিসেবে ৭০টি সাফিয়েড নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর তিনি সাফিয়েড নক্ষত্রগুলোর দূরত্ব ও কম্পনের হার গণনা করেন। তাঁর ওই হিসাব পরে একটি সুপার নোভার সঙ্গে তুলনা করেন। নাসার হাবল টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এই হিসাব করতে দুই বছর ধরে কাজ করেছেন রিয়েস। এরপর তিনি কম্পনের হার নির্ধারণ করেছেন ৭৪।
কম্পনের হার ৭৪–এর অর্থ দাঁড়ায়, এই মহাবিশ্বের বয়স ১২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ও ১৩ বিলিয়নের মাঝামাঝি। এ কারণে এটি আগের হিসাবকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তাঁর গবেষণার পরে বিজ্ঞানীদের মধ্যে নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাঁদের কাছে বিষয়টা এতটাই বিভ্রান্তিকর ঠেকছে যে এ সমস্যা সমাধানে পদার্থবিজ্ঞানের নতুন তত্ত্বের কথা ভাবছেন।
রিয়েস বলেছেন, বিষয়টা এখন এমন এক জায়গায় ঠেকেছে যে নতুন কোনো ধারণা ছাড়া এটা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।
নাসার জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী জন মাদার ওই গবেষণার ফলাফলের বিষয়ে বলেন, এ ঘটনা বিজ্ঞানীদের সামনে দুটো বিষয় তুলে ধরেছে। প্রথমটি, তাঁরা যে ভুলগুলো করছেন, তা এখনো ধরতে পারেননি। দ্বিতীয়টি, প্রকৃতি এমনই রহস্যময়, যেটি এখনো ভেদ করা সম্ভব হয়নি।
ঘটনা যা–ই হোক না কেন, বিজ্ঞানী রিয়েস অবশ্য হালকা রসিকতা করতে ছাড়েননি। তিনি বলেছেন, ‘আরে, এটি বেশ ভালো সংবাদ। সবাইকে তো দেখতে বেশ কম বয়সী লাগছে!’