স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান তৈরিতে নীতিমালা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যাসোসিয়েশন। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ম্যানেজারস ও হাই নেট ওর্থ ইনডিভিজুয়্যাল (এইএনআই) ইনভেস্টরদের ট্যাক্স মওকুফ এবং প্রভিডেন্ট ফান্ড ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্রে ট্যাক্সছাড়ের দাবি জানিয়েছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিয়াব)।
ভিসিপিয়াব চেয়ারম্যান ও পেগাসাস টেক ভেঞ্চারের জেনারেল পার্টনার শামীম আহসান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। যেখানে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পলিসি সহায়তা পায় এবং বড় বড় মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের কোম্পানির উত্থানে সরাসরি সহায়তা করে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সরাসরি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং প্রায় ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও নতুন কোম্পানির একমাত্র অর্থনৈতিক উৎস হিসেবে কাজ করে। অতি প্রয়োজনীয় অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট রুলস, ২০১৫ এবং অন্যান্য রেগুলেটরি সহায়তা দেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ভূমিকা স্বীকার করি। এ ছাড়া ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং প্রাইভেট ইক্যুইটি খাতের প্রয়োজন মেটাতে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনবিআর) খুবই আন্তরিক। অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ম্যানেজারস ও হাই নেট ওর্থ ইনডিভিজুয়্যাল (এইএনআই) ইনভেস্টরদের ট্যাক্স মওকুফ এবং প্রভিডেন্ট ফান্ড ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্রে ট্যাক্সছাড়ের পলিসি সহায়তা পেলে এ খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসতে পারে।’
ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান জিয়া ইউ. আহমেদ বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন ও ডায়নামিক হয়ে উঠতে সহায়তা দেওয়ার জন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। মোবাইল খাতের বিদ্যমান ভ্যাট ও সম্পূরক কর ধারাবাহিকভাবে মওকুফ, ভ্যাট নিবন্ধনের পরিমাণ বৃদ্ধি, ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি বার্ষিক টার্নওভারের এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ টার্নওভার ট্যাক্স খুবই ভালো উদ্যোগ এবং এসব খাতের উন্নয়নে সহায়তা করবে। অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডে ব্যক্তিগত বিনিয়োগের জন্য উৎসাহী করতে এবং এআইএফএম ইন্ডাস্ট্রি খাতের প্রচার ও প্রসারে অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডে হাই নেট ওর্থ ইনডিভিজুয়্যাল(এইচএনআই) বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ট্যাক্স অব্যাহতি দেওয়া উচিত। এ ছাড়া প্রভিডেন্ট ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ট্যাক্স ছাড় দেওয়া উচিত।’
ভিসিপিয়াব মহাসচিব এবং বিডি ভেঞ্চার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত হোসেন বলেন, ‘ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও প্রাইভেট ইক্যুইটি খাতটি এখন বর্ধনশীল পর্যায়ে রয়েছে। আমরা সরকারের প্রতি দাবি জানাই, অলটারনেটিভ ফান্ড ম্যানেজারদের আয়কর আগামী ১০ বছরের জন্য পুরোপুরি অব্যাহতি কিংবা আয়করের হার কমানো হোক। একটি ভিসিপিই প্রতিষ্ঠানকে তাদের প্রধান ব্যবসায় থেকে আয় পেতে সাধারণত এই সময়ের প্রয়োজন হয়। এর আগে খুবই সামান্য পরিমাণে আয় হয়, যা দিয়ে কোম্পানিকে শুধু চলমান রাখা সম্ভব। এ ছোট্ট আয়ে ট্যাক্স থাকলে সেটি এই খাতের জন্য খুবই সর্বনাশ হবে। স্টার্টআপের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার জন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানিগুলো যথাযথ পলিসি–সহায়তা পেলে স্টার্টআপ খাতে হাজারো কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে। তাই সরকার থেকে আমাদের এ সকল পলিসি সহায়তা প্রয়োজন।’
মসলিন ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়ালি-উল মারুফ মতিন বলেন, ‘অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড মোবিলাইজেশন হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি প্রক্রিয়া, যা বিশ্ব অর্থনীতি বর্তমানে অনুশীলন করছে। কৃষি, শিল্প, সেবা খাতসহ সব বাস্তব খাতের নতুন মেধা এবং প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের মাধ্যম এটি। অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ছাড়া সরকার, বিশেষ করে বিএসইসি এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশন যেভাবে প্রচার চালাচ্ছে; আমাদের উচ্চ আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত হওয়া অধরাই থেকে যাবে। যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হচ্ছে। শুধু নিজের ব্যবসায়ের জন্য নয়, আমরা সব করপোরেট প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত বিত্তশালীদের দেশের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও ইক্যুইটি ফান্ডের গঠনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাই।’
২০১৫ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট বিধি পাস করে। এই বিধির আওতায় বাংলাদেশে বিভিন্ন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং প্রাইভেট ইক্যুইটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি অনেক বিদেশি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি বাংলাদেশে কাজ করা শুরু করে। স্থানীয় স্মার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরিতে কাজ করার জন্য ২০১৬ সালে এসব ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও প্রাইভেট ইক্যুইটি কোম্পানি মিলে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ গঠন করে।